মডেল: অর্ণব ও লাবণ্য
মডেল: অর্ণব ও লাবণ্য

চাইলে হতে পারে শখ পূরণ

ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! বরং বড় ভাবতে পারলেই মাঝারিতে পৌঁছানো যায়। কেউ হয়তো মাসে লাখ টাকা আয় করছেন। আর এ আয় তিনি করেই যাচ্ছেন। কিন্তু দিন শেষে তাঁর অর্জন ওই টাকাই। বছর শেষে তিনি যখন পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন, দেখছেন ব্যাংকে শুধু লাখ লাখ টাকা জমেছে। আর কোনো সুন্দর স্মৃতি জমা নেই। মনের ব্যাংকটা পুরোই গড়ের মাঠ। নেই পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভিজ্ঞতা।

জীবনটা সুন্দরভাবে যাপন করার জন্য, প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে মাঝেমধ্যে এসবের দরকার হয়। এতে প্রতিদিনের রুটিনমাফিক জীবনে একটা আনন্দের রেখা দেখা যায়। যে সুখস্মৃতি পরবর্তী সময়ে মানুষকে তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার রসদ জোগায়। অনেক সময় টাকা খরচের ভয়ে এক বেলা বাইরে খাওয়ার কথা ভেবেও পিছিয়ে আসি আমরা। কিন্তু এই বাইরে খাওয়া বা ঘোরাফেরা এটা তো একধরনের রিফ্রেশমেন্ট। কেউ তো আর রোজ গিয়ে রেস্তোরাঁয় খাবে না। তাই বাসার চুলা একদিন নাহয় বন্ধ থাকল। স্ত্রী, সন্তান বা কাছের মানুষকে নিয়ে সাধ্যমতো কোনো খাবার খেলেন বাইরে। এতে স্বাদবদলের পাশাপাশি অন্যদের নিয়ে একধরনের হাওয়াবদলও ঘটবে। মহামারির এই সময়েও নতুন স্বাভাবিকে বাইরে একটু হাওয়াবদলের দরকার আছে।

বাউণ্ডুলে কয়েকটা দিন

সত্যজিৎ রায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি সিনেমার কথা মনে আছে? ঠিকানাহীন বেড়াতে বেরিয়ে কত ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিল চার বন্ধু, একবার ভাবুন! তবে বেড়ানো নিয়ে একটি জনপ্রিয় উক্তি আছে, ‘ভ্রমণের আগে আপনার সব জামাকাপড় আর টাকাপয়সা এক জায়গায় করুন। তারপর সেখান থেকে অর্ধেক কাপড় আর দ্বিগুণ টাকা নিয়ে যাত্রা করুন।’

এটুকু পড়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঘোরাঘুরি করতে যে খুব বেশি টাকাপয়সার দরকার পড়ে, তা–ও না। জরুরি একটা সাহসী মন। বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হাসান বলেন, ‘ঘোরাঘুরি আসলে দুভাবেই করা যায়। তবে এখন বেশি জনপ্রিয় বাজেট ট্রিপ। কম টাকায় একটা সুন্দর ভ্রমণ করতে পারার মধ্যে আনন্দ আছে। একটু হিসাব করে ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা করলে সহজে কম টাকায় ঘুরে আসা সম্ভব। সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে কেউ যদি অ্যাটাচড বাথরুম আর স্পেশাল বারান্দা খোঁজেন, সেটা হবে বোকামি। লাক্সারি ট্রিপে সব সময় খরচ বেশি হবে। তবে জানার জন্য, দেখার জন্য, আনন্দের জন্য ঘুরতে গেলে সেখানে খরচ কম হয়।’

শখ পূরণে টাকা কোনো বাধা নয়, পদক্ষেপ নিয়ে এই সময়ে শর্ষেখেতে বেড়াতে গেলেও মন ভালো থাকবে। মডেল: অর্ণব ও লাবণ্য,

কৌশলী হতে পারেন সহজেই

অনেকে মনে করেন, কক্সবাজার যাওয়া মানে তো বিশাল টাকার গচ্চা। তাই যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অথচ ফেসবুকের কল্যাণে রোজ দেখছেন লোকে লোকারণ্য এই সমুদ্রশহর। আপনি একটা সঠিক পরিকল্পনা করে বেড়াতে গেলে ঠকবেন না। শুক্র-শনিবার বা অন্য কোনো সরকারি ছুটির দিনে বেড়াতে না গিয়ে সাধারণ একটি তারিখ নির্বাচন করুন। টিকিটের চাহিদা বাড়লে দামও বেড়ে যায়, আবার টিকিট হয়ে পড়ে অপ্রতুল। অন্য সময়ে চাহিদা কম থাকলে টিকিট পাবেন সুলভে। এরপর যেখানে যাবেন, সেখানে থাকার জায়গাও আগে থেকে ঠিক করে নিতে পারেন। আবার গিয়ে যাচাই–বাছাই করে বাজেটমতো একটা হোটেলে উঠে পড়লে খরচ কম হবে।

আরেকটা ভালো উপায় হচ্ছে, অফ সিজনে বা অফ ট্রিপে বেড়াতে যাওয়া। এখন সবাই কক্সবাজারে বেশি যাচ্ছে, আপনি বরং উত্তরবঙ্গ বা সিলেটে যেতে পারেন। বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। ‘অফ সিজনে’ টিকিট কেটে রাখলে, হোটেল বুক করলে বেড়ানোর খরচ কমে যাবে অর্ধেকে।

আর ঘুরতে যাওয়া মানেই সব সময় কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি যেতে হবে এমন নয়। এই শীতের দিনে শহর থেকে দুই পা মাড়ালেই দেখবেন হলুদ শর্ষে ফুলে মাঠ ছেয়ে গেছে। এক বেলা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসুন না সেই হলুদবনি মাঠ থেকে। সময়টা মন্দ কাটবে না।

শখের আবার দাম কী

নিজের একটা ছোট্ট বাসা। কিন্তু আপনার ইচ্ছা করে সেটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখার। এরপরই চুপসে যান আসবাবের পেছনে খরচের হিসাব ভেবে। কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তি শেষে মৌসুমি ফুলে ভরা বারান্দায় যখন কুশনে ঠেস দিয়ে এক পেয়ালা চা নিয়ে বসবেন, সেই সময়টাকে চিন্তা করুন। নিজের ঘরে গাছপালাঘেরা একটা বারান্দা সাজাতে কিন্তু খুব বেশি টাকা দরকার হবে না। দামি আসবাবের চেয়ে পরিকল্পনামতো কম টাকার আসবাব দিয়ে নান্দনিক করে তোলা যায় নিজের ঘর। আপনার হয়তো শখ একটা পিয়ানো বাজানোর। টাকার কথা চিন্তা করে সেটা বাদ দিলে আপনার একটা আক্ষেপ কিন্তু থেকেই যাবে। বিশাল শোরুম থেকে পিয়ানোটা না কিনে আপনি সেটা বিকল্প খুঁজুন। কেউ হয়তো এই যন্ত্র নিজের সংগ্রহ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। পুরোনো কিনলেও আপনার কিন্তু শখটা পূরণ হলো। নিজের সেই পিয়ানোতে যখন আপনি ছোট্ট একটা সুর তুলবেন, সেই সুখটুকু বিশাল পর্বতের ওপরে দুই হাত তুলে চিৎকার দেওয়ার চেয়ে কম কিছু না।

আমার নিজের একটা সাদা জুতা রাখার বাক্সের খুব শখ ছিল। দোকানে ঘুরে ঠিক মনমতো পেলাম না। যেটা আবার পেলাম, দাম চাইল অনেক টাকা। অগত্যা ২০০ টাকার রং আর ২০ টাকার একটা ব্রাশ কিনে নিজের চকলেটরঙা জুতার বাক্স সাদা করে নিলাম। এখন তো মনেই হয় না এটা আগে চকলেট রং ছিল।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন ফারহানা মোহসিন। তাঁর পোশাক দেখে বিভিন্ন সময় সহকর্মীরা জিজ্ঞাসা করেন এটা কোন ব্র্যান্ডের পোশাক? ফারহানা বলেন, ‘এমন প্রশ্ন শুনলেই আমি আগে তাঁর ভুল শুধরে দিই। স্টাইলিশ বা সুন্দর পোশাক মানেই ব্র্যান্ডের না। আমি গাউছিয়া মার্কেট বা মিরপুরের ফুটপাতে ভ্যানের ওপর থেকেও পোশাক কিনি। তারপর দরকারমতো সেটা কাটছাঁট করি। হকার্স মার্কেট বা জাহাঙ্গীরনগরের হাট থেকে কম দামে সুন্দর শাড়ি কিনে আনি। সেগুলোই পরে যাই বিভিন্ন জায়গায়।’ স্টাইল করার জন্য সব সময় দামি ব্র্যান্ড দরকার পড়ে না। নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে সহজেই কম টাকায় স্টাইল করা যায়।

জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ ধারণা থাকে অনেকের। টাকা উপার্জন যেই সুখের জন্য, সেই সুখ কি সব সময় টাকা থাকলেই মেলে! সুখের জন্য খুব বেশি টাকার দারকার হয় না। ছোট ছোট শখ পূরণ করতে, নিজেকে খুশি রাখতে টাকার চেয়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই জরুরি। অনেক সময় বহু টাকা ব্যয় করে, বহু পথ ঘুরেও যে সুখ মেলে না, সেটা পাওয়া যায় ঘরের কাছে। প্রয়োজন শুধু চোখ মেলে দেখার, ঘর হতে দুই পা সামনে ফেলার।