ঘুমানোর কিংবা উদ্বেগ বা টেনশন কমানোর ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলে স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকেরা। সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে একটানা ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের বেশি এমন ওষুধ না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ফরাসি ও কানাডীয় গবেষকদের যৌথ গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল-এ প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলা হয়েছে লম্বা সময় ধরে ঘুম কিংবা টেনশন কমানোর ওষুধে অভ্যস্ত হলে ‘ডেমনেশিয়া’ ও ‘আলঝাইমারের’ ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফরাসি-কানাডীয় গবেষকেরা মন্তব্য করেছেন, এমন ওষুধের সঙ্গে এমন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় নিশ্চিত বলেই দীর্ঘদিন ধরে তা না খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হওয়া দরকার।
কানাডার কুইবেকে বসবাসকারী প্রায় নয় হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অধিবাসীর ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছে। প্রথমে ৬৬ বছরের বেশি বয়সী ২ হাজার আলঝাইমারের রোগীর মেডিকেল ইতিহাস পর্যালোচনা করেন তাঁরা। এরপর আলঝাইমার নেই একই বয়সী এমন সাত হাজার মানুষের মেডিকেল ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়। দুই দলের অংশগ্রহণকারী মানুষের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য-উপাত্তের বিশদ তুলনা করে গবেষক দলটি।
এতে দেখা গেছে, তিন মাস কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ‘বেনজোডায়াজেপাইন’ জাতীয় ওষুধের ব্যবহারে ডেমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৫১ শতাংশ বেড়ে যায়।
ফ্রান্সের বোর্দিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং গবেষণা প্রতিবেদনটির অন্যতম রচয়িতা সোফি বিলিওতি দ্য গেগে বলেছেন, ‘বিনা কারণে দীর্ঘদিন এমন ওষুধের ব্যবহারকে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উদ্বেগ হিসেবে বিবেচনা করা দরকার।’ গবেষক দলটির পরামর্শ হলো, কোনো কারণে দুই-তিন মাসের বেশি সময় ধরে এমন ওষুধ খেতে হলে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শপত্র অনুযায়ীই করা উচিত।
এই গবেষণার বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক ও গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, ‘বেনজোডায়াজেপাইন’ জাতীয় ওষুধের সঙ্গে ‘আলঝাইমার’-এর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে, তা জানা গেলেও বিষয়টি কীভাবে কাজ করে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে, তাঁরা এটাও স্বীকার করেছেন যে, সাধারণভাবেই এসব ওষুধের একটানা দীর্ঘদিন ব্যবহার নিরুত্সাহিত করা হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। এই গবেষণা অবশ্যই মানুষকে আরও সতর্ক হতে উত্সাহিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।