সারা দিনের পরিশ্রম, ধকল ও ধুলাবালিতে লাবণ্য হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় ত্বক। দিনের শেষে নামমাত্রই ত্বকের যত্ন নেওয়া হয় বা নেওয়াই হয় না বললেই চলে! তবে ঘুমের আগে ত্বকের পরিচর্যার ব্যাপারে আলসেমি করা ঠিক নয়। ত্বককে সতেজ, সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।
ঘুমানোর আগে কীভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন তা জানালেন রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন এবং হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি।
আফরোজা পারভিন বললেন, ঘুমের আগে অবশ্যই ত্বক খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মেকআপ থাকলে প্রথমে ক্রিম, তেল, ময়েশ্চারাইজার বা মেকআপ রিমুভার দিয়ে তা তুলে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে চোখের নিচের কাজল বা মাসকারার হালকা আভা থেকে যায়। এতে করে চোখের চারপাশ কালো হতে থাকে। তাই মেকআপ তোলার সময় কটন বল বা টিস্যুতে তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে ও উল্টা দিকে মালিশ করে চোখের অংশটুকু মুছে নিতে হবে। এতে করে পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের চারপাশে বলিরেখা পড়ার আশঙ্কাও কমে যায়। এরপর ফেসওয়াশ লাগিয়ে বেশি করে পানির ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
মুখ ধোয়ার পর যে পানিটুকু থেকে যায় তা পুরোপুরি না মুছে ত্বক কিছুটা ভেজা থাকা অবস্থায় ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। শুষ্ক ত্বকে তৈলাক্ত, মিশ্র ত্বকে যেকোনো ধরনের এবং তৈলাক্ত ত্বকে ক্রিমজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আবার অনেকেই আছেন নাইট ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। নাইট ক্রিম কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে তা ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যাচ্ছে কি না। রাতের বেলা ঠোঁট আলতোভাবে পরিষ্কার করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমাতে হবে, এতে ঠোঁট শুকাবে না। এ ছাড়া হাত-পা পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমালে লম্বা সময় ধরে হাত-পায়ের ত্বক ভালো থাকবে।
ধরনভেদে ত্বককে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। আর সেই ধরন বুঝেই ঘুমের আগে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। জানালেন আফরিন মৌসুমি।
শুষ্ক ত্বক
একটি ডিমের কুসুম ভালোভাবে ফেটিয়ে মুখে লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর বেসন দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে।
সাধারণ ত্বক
একটি পাকা কলা চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে তা দুই থেকে তিন মিনিট হালকাভাবে মুখে ঘষতে হবে। এরপর মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার বা জেল ধরনের কিছু লাগিয়ে ঘুমালে ভালো।
মিশ্র ত্বক
এই ধরনের ত্বক বেশ সংবেদনশীল এবং খুব যত্নও নিতে হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো বটেই, সব সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের ত্বকের জন্য বেশ উপযোগী একটি টোনার রয়েছে, যা করে রেখে দেওয়া যায়। এক কাপ পুদিনার পাতা দুই কাপ পানিতে ভালো করে জ্বাল দিয়ে বরফ তৈরি করে রাখতে হবে। এবার এক চামচ মটর ডালের বেসনে একটি বরফের টুকরা মিশিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট পর খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর জেল বা পানিজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ঘুমাতে হবে।
তৈলাক্ত ত্বক
গ্রিন টি গুঁড়া করে রেখে দিলে এ ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে ফেসওয়াশ বা প্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এই গ্রিন টি গুঁড়ার সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট মালিশ করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই পানিজাতীয় হতে হবে।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় এক টেবিল চামচ লেবুর রস, আধা চা-চামচ গ্লিসারিন ও আধা চা-চামচ পেট্রোলিয়াম জেলি একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ উঠে যাওয়াসহ ঠোঁটে গোলাপি আভাও আসবে।
এ ছাড়া ঘুমানোর আগে হাত-পা অবশ্যই পরিষ্কার করে লোশন লাগিয়ে এবং শুষ্ক ত্বক হলে লোশনের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এতে করে হাত-পা অনেক নরম থাকবে।
মনে রাখা ভালো
* শুধু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়েই ঘুমানো যাবে না।
* মেকআপ তুলে পরিষ্কার করার পর কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দেখতে হবে যে মুখ ধোয়ার পরও মেকআপ রয়ে গেছে কি না।
* ঘুমানোর আগে অবশ্যই চুল আঁচড়াতে হবে। এতে করে রক্ত সঞ্চালন হবে এবং মাথার তালুর ত্বক ভালো থাকবে।
* অবশ্যই খুব ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে এবং কেনার আগে খেয়াল করতে হবে যেন ময়েশ্চারাইজারে ওয়াটার সলিউশন বেশি থাকে। ময়েশ্চারাইজার যত হালকা হবে, তত ভালো।
* ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে এক থেকে দুই ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক বেশ ভালো থাকবে।
* যেকোনো ধরনের ফল খাওয়ার পর মুখে একটু মেখে ধুয়ে নিলে ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় থাকে এবং এটি ত্বকের জন্যও
খুব ভালো।