‘আতঙ্কিত হবেন না, সচেতন হোন’, ‘কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে বই পড়ুন’,
উপদেশগুলো দেওয়া যত সহজ, পালন করা ততই কঠিন। বৈশ্বিক মহামারি একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এই অস্বাভাবিক সময়ে আতঙ্কগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। এ সময় কোনো কিছুতে সহজে মন বসে না।
বিজ্ঞান বলে, এ সময়ে মানসিক চাপ কমাতে না পারলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমবে আর চিন্তাভাবনা এলোমেলো হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যসতর্কতাও ঠিকমতো মানা যায় না। এ জন্য ঘরবন্দী অবস্থায় মন ভালো রাখতেই হবে। থাকতে হবে মানসিক চাপমুক্ত। যাঁরা চাকরি বা ব্যবসা করেন কিংবা পড়ালেখা করেন, তাঁরা এ সময় বাইরে যেতে পারছেন না। ঘরের ভেতর মনটা তো ছটফট করবেই। এই অস্থিরতা আর ছটফটানি কমাতে যা যা করা উচিত, তা হলো:
● দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: সবার আগে আপনার মনোভাব আর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলুন। এটি একটি যুদ্ধাবস্থা। এই যুদ্ধে জিততে হলে আপনাকে ঘরে থাকতেই হবে। তাই নিজেকে ঘরবন্দী ভাববেন না। কিছুই করছেন না, এটা ভাববেন না।
● রুটিন পাল্টাবেন না: ঘরে আছেন, অফিস বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ—এই চিন্তায় দৈনন্দিন রুটিন আমূল বদলে ফেলবেন না। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যতটুকু সময় অফিসে কাটাতেন বা পড়ালেখা করতেন, এ সময়টুকুতে বাড়িতে বসে অফিসের কাজ বা পড়ালেখা করার চেষ্টা করবেন।
● ঘুমের নিয়ম: রাতে বেশি জাগবেন না। বেশি বেলা পর্যন্ত ঘুমাবেন না। দিনের বেলা বিছানায় বা সোফায় শুয়ে থাকবেন না।
● ‘করোনা’, ‘করোনা’ নয়: সারা দিন যদি কেবল করোনা নিয়েই পড়ে থাকেন, টিভি আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেবল করোনার সংবাদ দেখতে থাকেন, তবে সত্যিকারের ভাইরাসের আক্রমণের আগেই আপনি একধরনের তথ্য-ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। জীবন করোনাময় হয়ে যাবে। তাই অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
● সামাজিক যোগাযোগ: সামাজিক দূরত্ব রাখতে বলা হয়েছে এই করোনাকালে। বিকল্প উপায়ে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখবেন। প্রতিদিন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোন, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করুন। তাঁদের কুশলাদি জানুন।
● পরিবার গুরুত্বপূর্ণ: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিরাপদভাবে গুণগত সময় কাটান। ঘরোয়া খেলাগুলো খেলুন। বিশেষ করে শিশুদের চাওয়া-পাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী হোন। সবাই মিলে একটি সিনেমা দেখে, সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। বই পড়ায় হয়তো মন বসবে না। তাই সবাই মিলে কয়েকটি বই নির্দিষ্ট করে সবাইকে সেগুলো পড়ে একটি ছোট আলোচনার ব্যবস্থা করুন। লুডু, ক্যারমের মতো ঘরোয়া খেলা খেলতে পারেন।
● ঘরোয়া কাজে অংশ নিন: ঘরের কাজে পরিবারের ছোট–বড়, নারী-পুরুষ—সবাই অংশ নিন। এতে একজনের ওপর কাজের চাপ কমে যাবে আর প্রত্যেকের মানসিক চাপ কম থাকবে।
● নিজেকে সময় দিন: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। জানালার ধারে বা বারান্দায় অল্প সময়ের জন্য বসুন। প্রয়োজনে ডায়েরি লিখতে পারেন।
● ইতিবাচকভাবে কাজে লাগান: লেখালেখির অভ্যাস থাকলে লিখুন। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট আছে (গুগল গ্যারেজ, বিদেশি ভাষা শেখা), যেখানে অনেক কিছু শেখা যায়, সেগুলো শেখার চেষ্টা করুন।
● কী খাবেন: এ সময় শারীরিক কাজগুলো কম হয়। আর চাপের কারণে বাড়তে পারে ওজন। সব মিলিয়ে পুষ্টিকর অথচ ওজন বাড়ে না, এমন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করবেন। চিনি, চর্বি, কোমল পানীয় বর্জন করবেন। শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে খাবেন।
● স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: কোভিড-১৯–এর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে বিচলিত না হয়ে টেলিফোনে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আতঙ্কিত হয়ে আগেই হাসপাতালে ছুটবেন না। মনে রাখবেন, আপনার ছোটাছুটি রোগটির বিস্তার বাড়াতে পারে। তাই সবার আগে টেলিফোনে পরামর্শ নিন।
আহমেদ হেলাল
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা