গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
ছবি: আনোয়ার হোসেন

এ বছর প্রথমবারের মতো ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতির এ পরীক্ষায় একটি আবেদনে গুচ্ছের আওতাভুক্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৭ অক্টোবর পরীক্ষা শুরু হবে। বেশ কয়েক বছর ধরেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কথা চলছিল। অবশেষে যখন সত্যিই এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হলো, পরীক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে কী ভাবছেন?

‘গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একসঙ্গে হওয়ায় আসন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। আগে একজন শিক্ষার্থী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় সুযোগ পেয়ে যখন পছন্দের একটি বেছে নিতেন, তখন একই সঙ্গে অন্য জায়গায় কয়েকটা আসন ফাঁকা থেকে যেত। কিছু ক্ষেত্রে পছন্দের বিষয় পেতে দেরি হতো। এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। ফলে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়তেন। এখনকার পদ্ধতিতে আশা করি এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’ বলছিলেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পেরোনো ফাতেমা জাহান। ফার্মাসিস্ট হওয়ার স্বপ্ন তাঁর।

আরেক পরীক্ষার্থী অভিষেক কায়সার অবশ্য খানিকটা অভিযোগের সুরেই বললেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে আমি আশাবাদী। আমাদের ভোগান্তি কমানোর জন্য এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। তবে কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও যত্নবান হতে পারতেন। আমাদের আবেদন নির্দেশিকাতে বলা হয়েছিল, পছন্দক্রম অনুসারে কমপক্ষে পাঁচটি কেন্দ্র নির্বাচন করতে, যেখানে আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। তবে আমার কয়েকজন বন্ধুর ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, তারা সঠিকভাবে কেন্দ্রের তালিকা জমা দেওয়ার পরও পছন্দের কেন্দ্র পায়নি। ফলে করোনাকাল বিবেচনা করে অনেকেই দূরের কোনো জেলায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না।’ মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থীর কথার সূত্র ধরে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো, তাঁরাও অভিষেকের সঙ্গে একমত।

‘ভর্তি পরীক্ষার সময় আমাদের কেতাবি প্রস্তুতির পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হয় নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও,’ ফোনের ওপাশ থেকে বলছিলেন নাজিয়া নুসরাত। তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন রংপুরের পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। তাঁর মতে, ‘আগে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য একেক এলাকায় ছুটতে হতো। স্বাভাবিকভাবেই ভ্রমণক্লান্তি বা অসুস্থতার জন্য প্রস্তুতি থাকার পরও অনেকের পরীক্ষা আশানুরূপ হতো না। তাই গুচ্ছ পদ্ধতি সবার জন্যই স্বস্তির বিষয়। সময় ও অর্থসাশ্রয়ের সঙ্গে পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারলে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।’

কথা হচ্ছিল চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী ইনজামাম উল হকের সঙ্গে। সরকারি সিটি কলেজের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভির ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী। গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘আমরা সবাই চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মতো দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে। এগুলোতে সুযোগ না হলে আমাদের ঘুরতে হয় সারা দেশ। গুচ্ছ পদ্ধতি আশপাশের কোনো কেন্দ্রে বসে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি প্রথম পছন্দের কেন্দ্রই পেয়ে গেছি।’ ইনজামামের কথায় আনন্দমেশানো স্বস্তি। যোগ করলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, মাঝারি মানের শিক্ষার্থীদের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতি আশীর্বাদের মতো। কারণ, গুচ্ছে ঢাবি, চবির মতো দেশসেরা চার বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় মেধাবীরা তুলনামূলক কম আগ্রহী। তাই প্রতিযোগিতাও কম।’

হলি ক্রস কলেজের কাজী ফাইজা হোসাইনও এমনটাই ভাবেন। তাঁর বক্তব্য, ‘পদ্ধতিটি নতুন হওয়ায় এখনো অনেকেই ঠিকমতো তথ্য জানে না। আর গুচ্ছভুক্ত প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী দোটানায় পড়েছেন। বিশেষত ঢাকার শিক্ষার্থীরা। করোনা পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরাও সন্তানদের দূরে পাঠাতে চান না।’

কয়েকজন শিক্ষার্থী মনে করেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক। আবেদন ফি হঠাৎ দ্বিগুণ করা হলেও ২০টি প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় খুব বেশি নয় বলে মনে করেন এই ছাত্রছাত্রীরা। নতুন এই ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী দাবি করে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আশা ব্যক্ত করলেন, পুরোনো সমস্যাগুলো এই পদ্ধতিতে দূর হবে।