শাহজাদপুরের প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারের শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের দক্ষিণ পাশে এক সবুজ-শ্যামল পরিবেশে পৌনে পাঁচ একর জায়গার ওপর কবির এই কাছারি বাড়ি অবস্থিত। কাছারি বাড়ি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান ও পর্যটনকেন্দ্র।
১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় এই ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ভবনটির একতলা ও দোতলার ছাদ সংস্কার করে ভবনটিতে রবীন্দ্রজীবনভিত্তিক চিত্র, কবির ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, আসবাব ও সরঞ্জামাদি নিয়ে একটি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘরে রূপ দেওয়া হয়েছে।
১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত আট বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে সাময়িকভাবে শাহজাদপুরে আসতেন, বসবাস করতেন। একনাগাড়ে তিনি দুই মাস এখানে অবস্থান করেছেন। স্থায়ীভাবে তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসবাস করতেন। সম্ভবত এ কারণেই শিলাইদহ, ফুলবাড়ী ও শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এখানে তিনি রচনা করেছেন অনেক উঁচুমানের সাহিত্য। এর মধ্যে রয়েছে সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কল্পনা; ছোট গল্পের মধ্যে পোস্টমাস্টার, ব্যবধান, রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা, ছুটি, অতিথি; ছিন্ন পত্রাবলির মধ্যে ৩৮টি পত্র; নাটকের মধ্যে বিসর্জন, প্রবন্ধের মধ্যে পঞ্চভূত প্রভৃতি।
কবি শিলাইদহ থেকে বজরায় বড়াল নদের রাউতারায় এসে সেখান থেকে পালকিতে চড়ে কাছারি বাড়িতে আসতেন। তিনি এই এলাকায় দুধ ও মাছের উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য গোচারণ ভূমি, জলমহালগুলো বিনা পয়সায় এলাকার নিকারি সম্প্রদায় ও দরিদ্রদের মধ্যে প্রদান করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে কবির বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি ভাগাভাগি করে দিলে চাচা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের, বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ এবং কবি নিজে পতিসরের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি।
লেখক: সভাপতি, িসরাজগঞ্জ বন্ধুসভা
সহযোগিতায় িসরাজগঞ্জ প্রতিনিধি এনামুল হক