খরগোশের মতো ছুটছি সবাই টিকটকে

অল্প দিনের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে টিকটক। অনেকে বলছেন, সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যমই প্রযুক্তি দুনিয়ার ‘নেক্সট বিগ থিং’। আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে টিকটককে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে টিকটকে রুচিশীল কনটেন্টের অভাব, এটি তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে—এমন অপবাদও শোনা যায়। তরুণদের মধ্যেও রয়েছে টিকটক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম টিকটক সম্পর্কে তাদের ভাবনা।

জারিন তাসনিম, শিক্ষার্থী, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া
ছবি: সংগৃহীত

টিকটকের বিভিন্ন ভিডিওর দৈর্ঘ্য গড়ে ১৫-২০ সেকেন্ড। এই অল্প সময়ে ব্যবহারকারীরা যে অনুভূতি পান, তাকে বলা যায় ‘গোল্ড রাশ’বা ‘ডোপামিন রাশ’। প্রথম কয়েক সেকেন্ডের ভেতর যদি ভিডিওটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারী পরের ভিডিওতে চলে যান। অর্থাৎ একটি ভিডিও দেখব কি দেখব না—সিদ্ধান্ত নিতে ব্যয় হয় ৪-৫ সেকেন্ডে। এ কারণে দীর্ঘক্ষণ কোনো বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের মনোজগৎ ও শিক্ষাজীবন।

টিকটক আসক্তির অন্যতম কারণ হলো—এখানে অন্য এক জীবনের স্বাদ পাওয়া যায়। একে আমি বলি জীবনের বাইরের জীবন। অর্থাৎ বাস্তবে আপনি যা নন, কিংবা আপনার যা কিছু নেই, টিকটকে সেটাই তুলে ধরা যায়। ১৫-২০ সেকেন্ডের জন্য আপনি কল্পনার জীবনের কোনো চরিত্রে সাজতে পারছেন। যেমন সিনেমার সংলাপের সঙ্গে হাত-পা-চোখ নাচিয়ে, অভিনয় করে নিজেকে নায়ক-নায়িকার জায়গায় ভাবা এখানে সম্ভব। গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে আপনি নিজেকে গায়ক ভাবতে পারেন।

অল্প সময়ে সাফল্য পাওয়ার মই হলো ‘ভাইরাল’ হওয়া। ভাইরাল হওয়ার জন্য সৃজনশীলতার বদলে মানুষ বেছে নিচ্ছে অযৌক্তিক, অনৈতিক, এমনকি বিপজ্জনক অনেক উপায়। এখানে যেহেতু মাননিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় বা বাধ্যবাধকতা নেই, তাই এ ভিডিওগুলোরও একটা নেতিবাচক প্রভাব থেকে যায়। টিকটকের যে একেবারেই কোনো উপযোগিতা নেই, সেটা বলব না। এখান থেকে অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তবে, সেটা যদি ২০০ জনে ২ জন হন, বাকি ১৯৮ জন তাঁদের মূল্যবান সময়, শক্তি, শ্রম সবকিছুই নষ্ট করছেন।