ক্ষিতীন্দ্রের সাঁতারনামা

>সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ৬৫ বছর বয়সে বিরামহীন ১৪৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটে ৬ আগস্ট নতুন রেকর্ড গড়েছেন। সাঁতারে এমন কৃতিত্ব ক্ষিতীন্দ্রের জীবনে এটিই প্রথম নয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে টানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার কেটে গড়েন জাতীয় রেকর্ড। তখন বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে পেয়েছিলেন উপহার। ১৯৭৬ সালে ১০৮ ঘণ্টা সাঁতরে সেই রেকর্ড আবার নিজেই ভেঙেছেন। তাঁর সম্মানে জগন্নাথ হলে রয়েছে স্মারক ফলক। এই সাঁতারুর গল্প নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
১৪৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটে ৬ আগস্ট মদনে পৌঁছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ছবি: সংগৃহীত
১৪৬ কিলোমিটার সাঁতার কেটে ৬ আগস্ট মদনে পৌঁছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। ছবি: সংগৃহীত
ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

নৌকায় গান বাজছে। কখনো বা গান থেমে বাদ্য। সেই তাল-সুর ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের কাছে বিরামহীন সাঁতরে চলার টনিক। নদীপারের গ্রাম পেরিয়ে, গঞ্জ পেরিয়ে ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য যখন নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগড়া নদীতে পৌঁছালেন, ততক্ষণে তিনি সাঁতরেছেন ১৪৬ কিলোমিটার। ৬৫ বছর বয়সী সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য তাঁর রেকর্ড নিজেই ভেঙে গড়লেন নতুন ইতিহাস।

ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের সাম্প্রতিক এই কৃতিত্বের কথা এখন অনেকেরই জানা। আরও কথা জানতে ৯ আগস্ট হাজির হয়েছিলাম তাঁর সামনে। তিনি সেদিন মদনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ৪ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত টানা সাঁতারের ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য বললেন, ‘শ্বাসকষ্টজনিত রোগ সারলেও ডান পায়ের গোড়ালিতে সামান্য ব্যথা ও ফোলা আছে।’

ভেজা তোয়ালে পেঁচিয়ে বিছানায় বসে আছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। হাসপাতালে শুভাকাঙ্ক্ষী ও দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকেই আসছেন তাঁকে একনজর দেখার জন্য। কেউবা তাঁর সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে। হাসিমুখেই সবার আবদার রাখছেন। এসবের ফাঁকেই আমাদের শোনান সাঁতারু হয়ে ওঠার গল্প।

১৯৭৬ সালে জগন্নাথ হলে সাঁতারে নামছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। এরপর গড়লেন ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতারের রেকর্ড। ছবি: সাঁতারুর ব্যক্তিগত অ্যালবাম

অনুপ্রেরণা অরুণ কুমার নন্দী
১৯৭০ সালের কথা। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য তখন সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্র। পদার্থবিদ্যায় সবে স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন। লজিং থাকেন সিলেট শহরের এক বাসায়। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য বলেন, ‘আমার পাশের ঘরেই বাড়ির লোকজন গল্প করছিলেন। সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী আসছেন। সাঁতরাবেন। একটানা একজন মানুষ কীভাবে সাঁতরাতে পারেন, সেটা নিয়ে তাঁদের কথায় কিছুটা বিস্ময় ছিল।’ সেই বিস্ময় ভর করেছিল ক্ষিতীন্দ্রের মনেও। সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দীর নাম তিনি আগেও শুনেছেন। এবার তাহলে দেখতে যেতে হয়। তথ্য নিয়ে জানলেন, শহরের ধুপাদীঘি পুকুরে তাঁর সাঁতার প্রদর্শনী হবে। সময়মতো হাজির হলেন পুকুরপারে। দেখলেন অরুণ কুমার নন্দীর সাঁতার প্রদর্শনী। সেবার বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখিয়েছিলেন অরুণ কুমার নন্দী; যা ছুঁয়ে যায় ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের তরুণ হৃদয়।

জগন্নাথ হলে সংবর্ধনার আয়োজন

নেমে পড়লেন সাঁতারে
অরুণ কুমার নন্দীর সেই সাঁতার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের মনে। নদীপারের ছেলে। অন্য অনেকের মতোই সাঁতারে তালিম নিয়েছেন ছোটবেলায়। টানা সাঁতরানোর ব্যাপারটা আগ্রহী করে তোলে। ক্ষিতীন্দ্র আমাদের নিয়ে যান সেই শুরুর দিনগুলোতে, ‘সিলেটে ওই বাসার পাশেই ছিল সেই হ্রদ। আমি প্রায় দিনই পানিতে নেমে পড়তাম। একসময় দেখি টানা ৪-৫ ঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারছি।’ অবলীলায় টানা দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটার সাহস তাঁকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। একদিন এমসি কলেজের পুকুরে নেমে পড়লেন। লক্ষ্য ১০ ঘণ্টা সাঁতরানো। বন্ধুরা বাহবা দিল। বেলায় বেলায় এসে খাইয়ে দিল। সে যাত্রায় লক্ষ্য পূরণ হলো ক্ষিতীন্দ্রের।
সিলেট থেকে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি মদনে ফিরলেন। মনে মনে পরিকল্পনা করছিলেন সাঁতার প্রদর্শনীর। বেশি দিন সময় নিলেন না, ওই বছরই মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়নকেন্দ্রের পুকুরে আয়োজন করা হলো সাঁতার প্রদর্শনীর। টানা ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে এলাকায় আলোচিত হলেন ক্ষিতীন্দ্র।
সেই শুরু। ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা সাঁতার প্রদর্শনী ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে পরিচিতি এনে দিল।

জগন্নাথ হলে বন্ধুদের সঙ্গে

জগন্নাথ হলের ক্ষিতীন্দ্র
এমসি কলেজে স্নাতক করে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের আবাসিক ঠিকানা হয় জগন্নাথ হলে। হলের সামনেই পুকুর। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের কাছে তখন পুকুরটা হয়ে উঠল সুইমিং পুল! দিনমান সাঁতরাতেন সেখানে। ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য বলছিলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল এখানে প্রদর্শনী আয়োজনের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করি। কিন্তু তারা আবেদন নাকচ করে দেয়।’
খুব কষ্ট পেয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্র। তাঁর আগ্রহের কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুতে। ডাকসু ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আয়োজন করে সাঁতার প্রদর্শনীর। রীতিমতো উৎসব বসেছিল প্রদর্শনী ঘিরে। প্রদর্শনীতে ক্ষিতীন্দ্র সাঁতরালেন টানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট। অরুণ কুমার নন্দীর ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিটের রেকর্ড ভেঙে গড়লেন বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শনীর জাতীয় রেকর্ড।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাঁতারে রেকর্ড করেছে ক্যাম্পাস তো নীরব থাকতে পারে না! বন্ধ ঘোষণা করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস। ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বেরোল বিজয় মিছিল।
এমন দিন আরও একবার এসেছিল। সেটাও জগন্নাথ হলের পুকুরেই। ১৯৭৬ সালের সেই সাঁতার প্রদর্শনীতেও গড়লেন নতুন রেকর্ড। টানা ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নিজের রেকর্ডকেই তিনি টপকালেন সেবার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সম্মান জানাতে নির্মাণ করল স্মারক ফলক। জগন্নাথ হলের পুকুরের পাড়ে এখনো রয়েছে সেই স্মারক ফলক। ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের অর্জন চির অম্লান সে ফলকে।

বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া রুপার নৌকা হাতে ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য

বঙ্গবন্ধুর রুপার নৌকা
১৯৭৪ সালে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের রেকর্ড গড়ার খবর বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিলেন ডাকসুর নেতারা। এরই ফাঁকে চলে যায় কয়েক মাস। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন ক্ষিতীন্দ্রকে। সেই স্মৃতি এখনো অম্লান। বললেন, ‘আমার সঙ্গে সেদিন গিয়েছিলেন ছাত্রনেতারাও। আমি ত্রাণ তহবিলে বন্যার্ত মানুষের সাহায্যের জন্য ১০০১ টাকার চেক দিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর হাতে।’ বঙ্গবন্ধুও তাঁকে সম্মাননা দিয়েছিলেন তাঁর কয়েক দিন পরই। রুপার একটি নৌকা উপহার দেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যকে। একই বছর ডাকসু তাঁকে বিশেষ সম্মানসূচক স্বর্ণপদক দেয়।

সাঁতার কাটতে ভারতে
ভারতেও দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিয়েছেন ক্ষিতীন্দ্র। ১৯৮০ সালে ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগীরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন সাঁতরে।

ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যের সম্মানে জগন্নাথ হলের রেকর্ড স্মারক ফলক

সাঁতারুর অন্য জীবন
১৯৮০ সাল। তত দিনে দুই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দুই বছরের একটি ফেলোশিপ পেয়ে গেলেন। আনুষ্ঠানিক চাকরিজীবন শুরু ১৯৮২ সালে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিমান নিয়ন্ত্রক হিসেবে। চাকরি শুরু হলে ভাটা পড়ে সাঁতারে। জীবনের নানা ঘাট পেরিয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্রের দুই সন্তান। ছেলে দেবব্রত বৈশ্য ও মেয়ে দেবযানী বৈশ্য। দেবব্রত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যে পড়ছেন। স্ত্রী অনুপমা বৈশ্য আর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজের বাড়িতে থাকেন। কথায় কথায় ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলছিলেন, ‘আমার সাঁতারজীবন নিয়ে পরিবার-পরিজনের খুব একটা আগ্রহ নেই। তাঁরা চান না জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি সাঁতার কাটি।’ তবে সাঁতারে পরিবারের মানা তিনি খুব যে একটা মানেন না, তা বোঝা গেল স্ত্রী অনুপমা বৈশ্যের কথায়, ‘তিনি বিনয়ী, আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। যা বিশ্বাস করেন, তা-ই করেন।’

৮ আগস্ট ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্যকে সংবর্ধনা দেয় নেত্রকোনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা

বয়স কোনো বাধা নয়
এখনো সুযোগ পেলে পুকুর বা নদীতে গোসল করতে নামেন। তখন যতটুকু পারেন সাঁতার কাটেন। নিয়মিত যোগব্যায়াম চর্চা করেন ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য। আরও কি সাঁতার কাটতে চান? উত্তরে তিনি একটু কৌশলী হলেন। বললেন, ‘চেষ্টায় সবকিছু হয়। বয়স কোনো বাধা নয়। তবে সাঁতার কাটতে পানিতে নামব কি না, তা এখনই বলতে পারছি না।’ অসমাপ্ত উত্তর নিয়েই আমরা কথা শেষ করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিকস বিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কার
এমন অনেক কাপ পেয়েছেন ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য

ক্যাম্পাসে উৎসব হয়েছিল
অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক
ক্ষিতীন্দ্রের প্রথম দিককার সাঁতারের দিনগুলো এখনো মনে আছে। আমি তখন জগন্নাথ হলে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। পুরো আয়োজনটা আমরাই করেছিলাম। সেটা ১৯৭৪ সালের ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম সাঁতার। প্রায় তিন-চার দিন ধরে সাঁতরাল। ওই কয়েক দিন জগন্নাথ হলে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় করেছিল। শুধু জগন্নাথ হলের কথাই বলছি কেন, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। সারা শহরের মানুষ ছুটে এসেছিল ক্যাম্পাসে। হলে অনেকটা সরস্বতী পূজার মতো আমেজ।
অনেকে তো সন্দেহ করল ভদ্রলোক বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন নাকি। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন অনেকে। একটি নৌকা নিয়ে খাবার দিয়ে আসতাম। চিকিৎসক গিয়ে পরীক্ষা করে আসতেন। ও সম্ভবত টার্গেট করেছিল ১০০ ঘণ্টা সাঁতরানোর। কিন্তু তিন-চার দিন পর চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলেন উঠে আসতে। অল্পের জন্য তখন ১০০ ঘণ্টা হয়নি।

ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য আমাদের অহংকার
রুহিদাস দেবনাথ
সাবেক অধ্যাপক, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
আমরা তখন স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষে পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেই থাকতাম। ১৯৭৬ সালের কোনো একসময় ক্ষিতীন্দ্র বৈশ্য জগন্নাথ হলের পুকুরে নামেন সাঁতরাবেন বলে। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রের সঙ্গে উৎসুক জনতাও ভিড় করেছিল। পুকুরের চারদিক এবং পাশে থাকা হলের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের চোখে বিস্ময় সৃষ্টি করেন। সে বিস্ময় জাগানিয়া শক্তি এখনো ধরে রেখেছেন ক্ষিতীন্দ্র। এই বয়সে এসে আবারও তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। একজন দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ বলেই তা পেরেছেন। তিনি শুধু নেত্রকোনার গর্ব নন, সারা দেশের অহংকার।