সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল ইসলাম। সবে প্রথম বর্ষে পা রেখেছেন। পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যাবেন নাকি সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবেন-এমন দ্বিধায় পড়েছেন। সেই দ্বিধা কাটানোর জন্য তিনি এসেছিলেন তারুণ্যের জয়োৎসবের ঢাকার পর্বের অনুষ্ঠানে। রাসেল জানান, “চাকরি করব না বিদেশ যাব? কি করব তার কোথাও পথনির্দেশনা পাই না। ” তারুণ্যের জয়োৎসবে দ্বিধা কাটানোর জন্য এসেছেন বলে জানান তিনি। রাসেলের মতো ছয় শতাধিক তরুণ হাজির হয়েছিলেন তারুণ্যের জয়োৎসবের ঢাকা পর্বে।
ঢাকার টিসিবি মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা পর্বের তারুণ্যের জয়োৎসব। ‘পথ ঘোরাও নিজের পথে’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে ক্রাউন সিমেন্ট এবং প্রথম আলো যৌথভাবে সারা দেশে আয়োজন করছে ‘তারুণ্যের জয়োৎসব’। ঢাকা পর্বে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, সফলদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সুযোগ, লিডারশিপ, ফটোগ্রাফিসহ নানা বিষয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে উপস্থিত ছিলেন ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের উপদেষ্টা এ মজিদ চৌধুরী, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা আফরিন হুদা, বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট কাজী এম আহমেদ, আলোকচিত্রী প্রীত রেজা, গ্রিন সেভার্সের প্রেসিডেন্ট আহসান রনি, ইএমকে সেন্টারের আউটরিচ কো অর্ডিনেটর রুহুল আমিন, লেখক রাজীব হাসান, সিলিকন ভ্যালি উদ্যোক্তা তারিক আদনান, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নিত্যানন্দ দাস ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান।
ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের উপদেষ্টা এ মজিদ চৌধুরী তরুণদের ভালো মানুষ হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘সময় খুবই কম জীবনে। পরিকল্পনা করে নিজের মতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। অনেক কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।’ তিনি সততাকে গুরুত্ব দিয়ে জীবন গড়তে তরুণদের কাছে আহ্বান জানান। আফরিন হুদা সিভি লেখার ওপর একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন। তিনি জানান, ‘আপনি কে তা যে সিভির প্রতিটি বাক্য ও শব্দে প্রকাশ পায়। নিজেকে যতটা সম্ভব সৃজনশীলভাবে সিভিতে গুছিয়ে প্রকাশ করতে হবে। কোনভাবেই অন্যের সিভি নকল কিংবা এদিক-সেদিক করে ব্যবহার করা যাবে না।’ কাজী এম আহমেদ নেতৃত্ব ও দলগত কাজের ওপর তরুণদের কর্মশালা পরিচালনা করেন। তিনি জানান, ‘নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস থাকতে হবে। নিজের আগ্রহকে খুঁজে বের করে তার পেছনে ছুটতে হবে। যত বেশি সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে যুক্ত করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তারেক মনোয়ার হতে চান ফটোগ্রাফার কিন্তু এখন মা-বাবা বলেন সরকারি কর্মকর্তা হতে। তারেক নিজের পথ খুঁজতে আগ্রহ নিয়ে শুনছিলেন বিকল্প পেশা ভাবনা বিষয়ে সেমিনার। বক্তাদের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত তারেক এখন উদ্যোক্তা হতে চান। তারেক জানান, ‘নিজের পছন্দ কোন দিকে তা জানতে জয়োৎসবে হাজির হই।’ । তারুণ্যের জয়োৎসবে বিকল্প পেশা ভাবনা নিয়ে কথা বলেন আলোকচিত্রী প্রীত রেজা ও গ্রিন সেভার্সের প্রেসিডেন্ট আহসান রনি। প্রীত রেজা নিজেকে ছাড়ানোর গল্প শোনান তরুণদের। তরুণদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লোকে কে কি বলল তা ভেবে নিজেকে পিছিয়ে রাখলে চলবে না। নিজেকে সামনে এগোনোর স্বপ্ন দেখতে হবে।’ আহসান রনি নিজেকে গাছের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে তরুণদের নতুন পেশা খুঁজে বের করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সবাই যেদিকে ছুটতে সেদিকে ছুটলেই জীবনে সাফল্য আসে না। কখনও কখনও নিজের বুদ্ধি খাঁটিয়ে নতুন পেশা তৈরি করার ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে।’ এ ছাড়া জয়োৎসবে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্পর্কে জানান এডওয়ার্ড এম কেনেডি (ইএমকে) সেন্টারের আউটরিচ কো অর্ডিনেটর রুহুল আমিন।
লেখক রাজীব হাসান আগ্রহের সঙ্গে কাজকে ভালোবাসতে পরামর্শ দেন। তিনি জানান, ‘আপনি যদি আগ্রহ খুঁজে না পান তাহলে কাজ করতে থাকুন। একদিন কাজটিই আপনার ভালোবাসা আর আগ্রহের হয়ে ওঠবে।’ ৩৬ তমবিসিএসেপুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নিত্যানন্দ দাস নিজের ভুল-ত্রুটি-ঝুঁকি জেনে সামনে এগোনোর পরামর্শ দেন। তিনি জানান, ‘দুর্বলতাগুলো জেনে পরিকল্পনা করতে হবে। দুর্বলতা কাটিয়ে চেষ্টা করে যেতে হবে।’ জয়োৎসবের ঢাকা পর্বের আয়োজনের সহযোগিতায়ছিল এডওয়ার্ড এম কেনেডি (ইএমকে) সেন্টার।
উল্লেখ্য, ‘ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসব’ আয়োজনের মাধ্যমে তরুণদের সম্ভবনা ও দক্ষতা বিকাশের বিভিন্ন সুযোগের কথা জানানো হচ্ছে। সারা দেশে বিভিন্ন শহরে/ক্যাম্পাসে/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হচ্ছে ‘তারুণ্যের জয়োৎসব’।