রোজকার জীবনের বিরাট একটা অংশ আমাদের কর্মস্থলে কাটে। অনেক সময় সহকর্মীরাই হয়ে ওঠেন আমাদের বাড়ির মানুষের চেয়ে আপনজন। তবে সহকর্মীদের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তার রীতিনীতির ধারাটা সর্বত্র মোটামুটি একই রকম, যার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে সৌজন্যবোধ। সুন্দর কর্মপরিবেশ যেমন কাজের মান বাড়ায়, তেমনি একজন কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এটি জরুরি। সুস্থ পরিবেশে কাজ করলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার মতো সমস্যার মাত্রাও কমে যায়।
কর্মস্থলে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। একটি দলে একজনের কাজে অন্যজন সহায়তা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। একটি দলের প্রত্যেকেই ব্যক্তি হিসেবে আলাদা। তাই বলে কারও অনুপস্থিতিতে তাঁর খামতি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। সামনাসামনি আলাপচারিতার সময়ও ভাষা ব্যবহারে সচেতন থাকা উচিত বলেই জানালেন মানবসম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘করপোরেট কোচ’–এর মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার।
পারস্পরিক সম্পর্কে থাকুক সৌজন্যবোধ
কে কেমন পোশাক পরেন, কার ওজন বেশি কিংবা কে অবিবাহিত আর কে নিঃসন্তান—যেকোনো স্থানেই এসব আলোচনা অশোভন, কর্মস্থলে তো আরও বেশি। কর্মস্থলে ব্যক্তিগত যেকোনো আলাপচারিতাই এড়িয়ে চলা ভালো। আলাপের ক্ষেত্রে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়। আপনার সহকর্মী বিব্রত হতে পারেন, কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কোনো প্রশ্নও করা উচিত নয়। কর্মস্থলে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘কর্ম’ অর্থাৎ কর্মস্থলের কাজ, যা করার জন্য আপনি সেখানে রয়েছেন। অন্যের বিষয়ে নাক গলানোটা কাজের অংশ নয়। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পন্ন করা এবং সহকর্মীকে সহযোগিতা করাই আপনার কাজ। প্রত্যেকেই এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে কর্মপরিবেশ থাকে সুস্থ ও সুন্দর।
কর্মস্থলে বন্ধুত্ব বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক
দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে কারও সঙ্গে থাকলে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যেও খানিকটা অন্তরঙ্গতা চলে আসে। কেউ কেউ বন্ধুও হয়ে ওঠেন। কাজের শেষে একসঙ্গে খেতে যাওয়া, এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি কিংবা পিকনিক—নানান উপলক্ষে উভয় পক্ষ থেকেই সম্পর্কটি খানিকটা ‘ব্যক্তিগত’ হয়ে উঠলেও ক্ষতি নেই, যদি না তা কর্মস্থলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক যদি গড়েও ওঠে, সে ক্ষেত্রে যাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব, তাঁকে বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কিংবা অন্যদের বঞ্চিত করার মনোভাব যাতে প্রতীয়মান না হয় কারও আচরণে, শুধু এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কর্মস্থলের সবাই মিলেই তো একটি দল। সেখানে আবার সমভাবাপন্ন মানুষদের নিয়ে কোনো ‘উপদল’ সৃষ্টি হলে দলাদলির মতো বিষয় সামনে এসে যেতে পারে, যা কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্মক্ষেত্রে সবার প্রতি আচরণের মূল ভিত্তি হবে সমতা।
ভালো থাকুক সহকর্মী
১. আপনার সহকর্মীর মনটা হয়তো কোনো দিন একটু বিষণ্ন হয়ে রয়েছে। বিষণ্নতার কারণ জানার জন্য জোরাজুরি করবেন না। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক আলাপচারিতাই শ্রেয়।
২. নারী সহকর্মীর প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ করবেন না। নারী বলেই তিনি সন্তান বা সংসারের জন্য বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেবেন, এমন ধারণা পোষণ করবেন না। প্রত্যেকের প্রতি মানবিক হোন।
৩. কোনো পরিস্থিতিতেই কারও সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না, যাতে তিনি অনিরাপদ বোধ করেন। যৌন হয়রানির নানান রূপ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। পারস্পরিক আচরণের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোও মাথায় রাখা আবশ্যক, যা একজনের কাছে নিছক মজা কিংবা ‘সামান্য’ ব্যাপার, অপর কারও জন্য তা হতে পারে বিভীষিকা।
৪. কাউকে কোনো ধরনের হয়রানির মধ্যে না ফেলাটাই একজন ভালো সহকর্মীর বৈশিষ্ট্য।
৫. নতুন কেউ যোগ দিলে তাঁকে নিজেদের দলেরই একজন হিসেবে গ্রহণ করে সব ধরনের সহযোগিতা করুন।
৬. মেধাস্বত্ব বিষয়েও থাকুন সচেতন। সহকর্মীর ভাবনা থেকে পাওয়া কোনো কাজের কৃতিত্ব নিজের দখলে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।