শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। পরিবারে শিশুদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মা-বাবা। ফলে শিশুর জন্মের পরই মা–বাবার আচরণ অনুকরণ করতে শুরু করে। মা–বাবার ভালো আচরণের পাশাপাশি নেতিবাচক দিকগুলোও শিশুরা খুব দ্রুত রপ্ত করে। এ কারণে সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মা–বাবাকে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। আদর্শ মা–বাবা হতে যা করবেন—
প্রশ্ন করতে দিন
শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার মনোজগতে নানান প্রশ্ন উঁকি দেয়। সে প্রশ্ন করতে শেখে। এ ক্ষেত্রে বিরক্ত না হয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দিন। এতে সন্তানের জানার আগ্রহ বাড়বে, যা একটি শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। অনেক পরিবারে শিশু প্রশ্ন করলে তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। বারবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে শিশুটি প্রশ্ন করতে ভয় পায়। তার জানার আগ্রহও কমে যায়।
কর্তৃত্ব এড়িয়ে চলুন
বেশির ভাগ মা-বাবা সন্তানের ওপর কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা করেন। এটি একেবারেই উচিত নয়। বেশি কর্তৃত্ব দেখালে আপনার সন্তান নিজেকে ছোট মনে করতে শুরু করবে, আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। পরবর্তী জীবনে নিজেও অন্যের ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করবে, যা ভালো অভ্যাস নয়। তাই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। ভুল করলে তাকে বুঝিয়ে বলুন।
তুলনা করবেন না
অন্যের সঙ্গে নিজের সন্তানকে কখনোই তুলনা করবেন না। সবকিছুতে প্রতিযোগিতা আনবেন না। সব বিষয়ে সেরা হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কোনো বিষয়ে সেরা না-ই হতে পারে। তাই বলে তার কোনো ব্যর্থতাকে বিদ্রূপ করবেন না। সফলতার পাশাপাশি জীবনে ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা যেন শিশুর থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন। তুলনা না করে উত্সাহ দিন। সন্তানের ছোটখাটো সাফল্যকেও উদ্যাপন করুন।
ভালোবাসা ও বিশ্বাস রাখুন
সন্তানের ওপর আপনার শতভাগ ভালোবাসা ও বিশ্বাস আছে, এটা তাকে বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিন। সন্তানের কথাগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। যখন সে বুঝবে, তার ওপর আপনি বিশ্বাস রাখছেন, তখন সে কোনো ভুল কাজ করবে না।
পারিবারিক কলহ এড়িয়ে চলুন
পারিবারিক কলহ শিশুর মনে সহিংসতার বীজ বপন করে। আর কলহ শিশুকে অন্যের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়তে বাধা দেয়। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে কীভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়, সেটা শেখান। কখনোই সন্তানের সামনে অন্যের সমালোচনা করবেন না। মা–বাবার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার, তার ওপর সন্তানের আচরণ অনেকটা নির্ভর করে। তাই স্বামী–স্ত্রী নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করুন।
আত্মবিশ্বাসী ও পরিশ্রমী হতে শেখান
পারিবারিক নানা বিষয়ে সন্তানের মতামত নিন। সন্তানকে একটু একটু করে পারিবারিক কাজের দায়িত্ব দিন। এতে করে সে দায়িত্ব নিতে শিখবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পরিশ্রমী হবে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খাবার খান। সন্তানকে নিজের হাতে খেতে উত্সাহিত করুন।
ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করুন
পারিবারিক কাজকর্মে পরস্পরকে সহযোগিতা করুন। এতে শিশুরাও নিজ থেকে যোগ দেবে। নিয়মিত বই কিনুন, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বই পড়ুন। তার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উত্সাহিত করুন। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো মনোভাব যেন শিশুর মধ্যে গড়ে ওঠে, সেদিকে নজর রাখুন।
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না
শিশুরা হচ্ছে কাদামাটির মতো। কাদামাটিকে যেমন ইচ্ছা আকার দেওয়া যায়। কিন্তু শুকিয়ে গেলে পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়ে। ছোটবেলায় শেখা সব অভ্যাস পরিণত বয়সে স্থায়ী হয়ে যায়। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে তাকে নৈতিকতার শিক্ষা দিন। সন্তানের সামনে কোনো অপরাধ করা বা পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিজেরা মিথ্যা বলবেন না। আইন ভাঙবেন না। শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিন।
বিনয়ী হতে শেখান
নিজেরা কারও সঙ্গে রূঢ় হবেন না। শিশুদের সামনে কোমল কণ্ঠে কথা বলুন। ভদ্রতা ও মার্জিত ভাব বজায় রাখুন। শিশুর সামনে ল্যাপটপ বা ফোনে বেশি সময় কাটাবেন না। পোশাক–পরিচ্ছদ, সাজগোজ ও খাবারের ব্যাপারে সচেতন হোন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোয় সন্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। সন্তানের সঙ্গে আর্দশ সময় কাটান। তার সঙ্গে খেলাধুলা করুন, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয়, সেটা শিশুরা আপনাদের দেখে শিখে নেবে।
সূত্র: ফেমিনা ও টাইসম অব ইন্ডিয়া