ফ্যাশন, স্টাইল, রং—এসবের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও সম্পর্ক আছে। যেমন অসুখের প্রকারভেদ অনুযায়ী মানসিক রোগীদের পোশাকে ভিন্নতা দেখা যায়। সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের পোশাক-পরিচ্ছদ নোংরা, অগোছালো থাকে। আবার বাইপোলার রোগীদের পোশাক-পরিচ্ছদ হয় বেশ রঙিন, গয়না পরতে পছন্দ করেন তাঁরা। শুচিবাই মানুষেরা পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা তাঁদের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী খয়েরি রং বেশি আর সবুজ রং কম পছন্দ করেন। এঁদের চিকিৎসা চলাকালে কালো রং থেকে দূরে থাকতে উৎসাহী করা হয়।
এসব নানা বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন মানসিক রোগের জন্য আলাদা রং নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের জন্য রুপালি, বাইপোলার রোগীদের জন্য সাদা-কালো স্ট্রাইপ, শিশু-কিশোরদের হতাশা, মুড ডিজঅর্ডারের জন্য লেবুরঙা সবুজ, শুচিবায়ু এবং অন্যান্য উদ্বেগজনিত রোগীদের জন্য টিল রং (সবুজের একপ্রকার শেড)। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় এ ধরনের প্রায় ৬৫টি রঙের রিবন পরার প্রথা চালু আছে।
১৮০০ সাল থেকে সবুজ রং দিয়ে মানসিক রোগীদের আলাদা করা হতো। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় আন্তর্জাতিকভাবেই বিভিন্ন শেডের সবুজ রঙের রিবন স্বীকৃত। প্রশ্ন করতে পারেন, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় সবুজ কেন নির্ধারণ করা হলো?
মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য সুরক্ষা দেয় সবুজ পরিবেশ। মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে সবুজ। গবেষণায় দেখা যায়, সবুজ প্রকৃতি মনে ইতিবাচকতা তৈরি করে। নেতিবাচক অনুভূতি দূর করে। হৃদ্রোগ ও ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও কমে।
শিশুদের সবুজের মধ্যে বড় করা গেলে তাদের মনোযোগ, একাগ্রতা বাড়ে। মন উৎফুল্ল থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয়। গবেষণা বলে, যে শিশুরা কম সবুজে বেড়ে উঠেছে, তাঁদের উদ্বেগজনিত রোগ, শুচিবাই, হতাশা, মুড ডিজঅর্ডার, নেশাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ২৮ শতাংশ বেশি।
তাই রঙের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো রাখতে চান, প্রতিদিন তাহলে ১৫ মিনিট সবুজে ঘেরা পরিবেশে হাঁটার অভ্যাস করুন। তিন দিনের ছুটি পেলেই গ্রামে, জঙ্গলে বা রিসোর্টে ঘুরে আসুন। ১০ থেকে ৩০ মিনিট সবুজের মধ্যে ধ্যানমগ্ন থাকুন।
পৃথিবীতে মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে নিজস্বতা জরুরি। নিজের পরিবার, পরিবেশকে আপন রঙে সাজান। স্টাইলিশ, ফ্যাশনসচেতন, সুস্থ মানসিকতা নিয়ে জীবনকে উপভোগ করুন।
লেখক: কনসালট্যান্ট, ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা