বিলি পোর্টারের মতে, গোলাপিতে সেজেছিল এবারের গ্র্যামি। মার্কিন এই সংগীতশিল্পী কথাটা ভুল বলেননি। এপ্রিলের শুরুতে লাস ভেগাসের এমজিএম গ্র্যান্ড গার্ডেন অ্যারেনায় বসেছিল বিশ্বসংগীতের সর্বোচ্চ আসর। ৬৪তম ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’। এ বছর গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের রেড কার্পেটজুড়ে ছিল গোলাপির জয়জয়কার।
প্রশ্নটা সেখানেই। অ্যাওয়ার্ড শো মানেই রংবেরঙের বাহারি ফ্যাশন শো। নিজেদের ড্রেসআপের ব্যাপারে বরাবরই খুঁতখুঁতে তারকারা। তাঁদের একেকটি পোশাক ফ্যাশনের নতুন ট্রেন্ড তৈরি করতে যথেষ্ট। সেখানে গ্র্যামির ৬৪তম আসরে যখন কমবেশি সব সংগীত তারকাই একই রঙে রাঙা, তখন তো সবার চোখ সেদিকে দিতে বাধ্য। গোলাপিকে বলা হয় সুস্বাস্থ্য ও আনন্দের রং। দুই বছর ধরে পৃথিবীর মানুষের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে একের পর এক প্রাণঘাতী আঘাত। প্রথমে মহামারি, এরপর যুদ্ধ—বিশ্বজুড়েই চলছে অস্থিতিশীল অবস্থা।
পৃথিবীর এই অবস্থা থেকে অ্যাওয়ার্ড শোগুলো যেন একটুখানি শান্তির পরশ। ছোট স্ক্রিনে বিশ্বখ্যাত তারকাদের একসঙ্গে দেখা, হাসি-মজায় মেতে ওঠা অনেককেই দিয়েছে স্বাভাবিকতার স্বস্তির সুবাতাস। মুখে ফিরিয়ে দিয়েছে হাসি। কিন্তু সেখানেও অপ্রীতিকর ঘটনার শেষ নেই। গ্র্যামির এক সপ্তাহ আগে হয়ে যাওয়া অস্কারে স্টেজে উঠে চড় মারার মতো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়েছেন উইল স্মিথ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ প্রায় সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সে ব্যাপারে ছিল সরব। যার ছোঁয়া পড়েছে তারকাদের মধ্যেও। সব মিলিয়ে আশপাশের সব ঘটনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য গ্র্যামির মঞ্চ ছিল উপযুক্ত একটা জায়গা। এ ছাড়া পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গোলাপিকে ধরা হয় নারীর রং। আর নীলকে বলা হয় পুরুষালি রং। সেই ধারণাকে গুঁড়িয়ে নারী–পুরুষনির্বিশেষে পরেছেন গোলাপি পোশাক।
কিন্তু আশপাশের সব ঘটনার সঙ্গে গোলাপির সম্পর্কটা কোথায়? বহু মনোবিজ্ঞানীর মতে, উজ্জ্বল রং মানুষের মনে ডোপামিন তৈরি করে। আর ডোপামিন মানুষের মন ভালো করতে সাহায্য করে। আর উজ্জ্বল রঙের তালিকায় সবার আগে থাকবে গোলাপির নাম। হট পিংক উজ্জ্বলতম রং। এই রং কেবল মনকে শান্তই করে না, মানুষের মনে আনন্দেরও জোগান দেয়। বিজ্ঞানীদের মতে, রঙের ভেতর ‘বেকার-মিলার পিংক’ বা ‘হট পিংক’ মানুষের মনকে শান্ত করতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে।
কাকতালীয় হোক আর উদ্দেশ্যমূলক, তারকাদের এভাবে একসঙ্গে এক রঙে রাঙাতে দেখা যায় না বললেই চলে। নীরব প্রতিযোগিতা চলে সবার মধ্যে ব্যতিক্রম ফ্যাশনে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন। সেখানে গ্র্যামির মতো মঞ্চে অনেককে এক রঙে দেখতে পাওয়া বিশেষ ব্যাপারই বটে!