হুট করে রেগে যান অনেকেই। কোনো ঘটনার পুরোটা না শুনেই কড়াইয়ের তেল যেন ছ্যাঁৎ করে ওঠে। ওতে বেগুন দিলে তেলে–বেগুনে তো জ্বলবেই। অল্পে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন আপনি নিজে। সেটা আমরা জানি না বা বুঝতে পারি না। যেকোনো পরিস্থিতিতে যিনি যত শান্ত থাকবেন, তিনি তত সহজে সামলাতে পারবেন। নিজের ওপরও কোনো বাড়তি চাপ পড়বে না। কচুপাতার ওপর বৃষ্টির পানি যেভাবে চলে যায়, বিরক্তি বা চাপও সেভাবেই চলে যাবে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রতিক্রিয়া দেখানো আমাদের আচরণের একটি বহিঃপ্রকাশ। ব্যক্তিত্ব, পারিবারিক শিক্ষার প্রকাশ পাওয়া যায় এতে। আর শান্ত–স্থির হয়ে কোনো কাজ করলে, সিদ্ধান্ত নিলে সহসা ভুলও হয় না। এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর কাজী রুমানা হকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি আরও তথ্য। তিনি মনে করেন, সফলতার অন্যতম মূলমন্ত্র স্থিরতা, পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা। জীবনে আচমকা অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে, আপনি কতটা শান্ত থাকতে পারেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।
সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখানো
এমন হতেই পারে, কোনো একটি ঘটনায় আপনি খুবই বিরক্ত, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পুরো বিষয়টা আগে বোঝার চেষ্টা করুন। ধৈর্য ধরে যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য ও ঘটনার কারণ জেনে নিন। ঘটনার প্রেক্ষিত ও পেছনের কারণ নিয়ে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করুন। যদি মনে করেন এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, তাহলে অবশ্যই দেখাবেন। সেটার জন্য যথেষ্ট যুক্তি আপনার নিজের কাছে থাকতে হবে। আপনার কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যেন আরেকজন কষ্ট না পায়।
ইতিবাচক থাকুন
যেকোনো ঘটনার সময়ই আমরা চাপ অনুভব করি। চাপের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ি, বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। এমন পরিস্থিতিতে যতই আমরা ঘটনা নিয়ে ভাবব, কারণ অনুসন্ধানে মনকে ব্যস্ত রাখব, ততই আমাদের শান্ত থাকার সম্ভবনা কমে যাবে। পরিস্থিতি নিয়ে ‘এটা হলে কেমন হতো’, ‘ওটা না হলে কেমন হতো’—এমন দ্বিধায় জড়াবেন না। সব সময়ই নেতিবাচক আশঙ্কার কথা মন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
‘যদি’ এড়িয়ে চলুন
‘ইশ্, যদি ব্যাপারটা এমন হতো’—এমন আক্ষেপে আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। যেকোনো ঘটনা বা পরিস্থিতিতে যদি–সংক্রান্ত সব প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন। যা হয়নি, যা হবে না—তা নিয়ে ভেবে ভেবে মনকে বিক্ষিপ্ত করে নিজেকে অশান্ত করবেন না। এমন প্রশ্নে আসলে নিজের ভয় আর সংশয় প্রকাশ পায়।
শরীরের যত্ন নিন
যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এক দিনের অভ্যাসে তৈরি হবে না। শরীরের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। টুকটাক ও হালকা ব্যায়াম করুন প্রতিদিন। পরিমাণমতো ঘুমাতে হবে। যোগব্যায়াম করে মনে প্রশান্তি আনুন।
ক্যাফেইনকে না বলুন
উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে পারতপক্ষে চা-কফির মাত্রা কমিয়ে দিন। চা-কফির ক্যাফেইন আমাদের উদ্দীপ্ত করে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের প্রবাহ বাড়িয়ে উত্তেজিত করে দেয়। উত্তেজনাকর যেকোনো মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে পারেন।
বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন
পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রের কোনো বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশের আগে বন্ধু বা বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি হয়তো যেভাবে ভাবছেন, আপনার বন্ধুর ভাবনা অন্য রকম হতে পারে। অন্যের ভাবনা জানলে আপনার প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিলে পরিস্থিতির কারণগুলো আপনি বেশ পরিষ্কার জানতে পারবেন।
রাগ-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা
রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। রাগ সহজাত একটি আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করতে কৌশলী হতে হবে। অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে অন্যদের মতামত জানতে হবে। অন্যের কথাকে সম্মান জানিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে।