প্রতি মৌসুমেই শিশুদের সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এর অন্যতম কারণ হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় শিশুদের পরস্পরের সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে সাবধান না থাকা। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবার সচেতনতার ঘাটতির কারণে শিশুরা এসব বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যায়। ফলে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ।
সাধারণত বিদ্যালয়ে, শ্রেণিকক্ষে খেলতে গিয়ে শিশু থেকে শিশুতে সংক্রমণ ছড়ায়। এরপর তাদের থেকে সেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে। এ কারণে শিশুদের হাঁচি-কাশি দেওয়ার আদবকেতা শেখানো জরুরি।
কাশির গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এই গতিতে বেরিয়ে আসা জীবাণু, ড্রপলেট ১৮ ফুট দূর পর্যন্ত ছড়াতে পারে। সেই জীবাণু বাতাসে রয়ে যায় প্রায় ১০ মিনিট। ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স, যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস থেকে শুরু করে সার্স করোনাভাইরাস, মার্স করোনাভাইরাস, ‘২০১৯-এনসিওভি’সহ অনেক রোগই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। কাজেই ছোটবেলা থেকে বাড়িতে ও বিদ্যালয়ে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুললে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ পরিবেশে বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
কাশি দেওয়ার নিয়ম
শিশুরা প্রায়ই সর্দি-কাশিতে ভোগে। তাদের বলে দিতে হবে, কাশি এলে যেন তারা নিচের দিকে বা মাটির দিকে মুখ করে কাশি দেয়। সম্ভব হলে বসে পড়তে হবে। সামনে কেউ থাকলে পেছন ফিরে কাশি দিতে হবে। রুমাল বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে কাশি দিতে হবে। ব্যবহারের পর টিস্যু পেপারটি অবশ্যই ময়লা ফেলার জায়গায় বা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। রুমালের চেয়ে টিস্যু পেপার ভালো; কারণ, ব্যবহারের পর রুমাল পকেটে রাখা হয়। এভাবে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাতের কাছে টিস্যু না থাকলে কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। কোনোভাবে যদি হাতের তালু দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়া হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ধোয়ার আগে কিছুতেই হাত দিয়ে নিজের বা অপরের নাক-মুখ স্পর্শ করা যাবে না, বই-খাতা, দরজার হাতল, টেবিল, ফোন ইত্যাদি ধরা যাবে না। আপনার সন্তানের স্কুলব্যাগে এবং স্কুল ইউনিফর্মের পকেটে টিস্যু পেপার রাখুন। সব সময় হাতের কাছে সাবান-পানি পাওয়া যায় না। তাই সন্তানের ব্যাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে পারেন। ছোটবেলা থেকে এসব আদবকেতা মেনে চললে শিশুদের মধ্যে বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব। আর শিশুকে এই আদবকেতা শেখানো মা-বাবা ও শিক্ষকের কর্তব্য।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ