ছোটবেলায় এ কথাটা প্রায় সবাই শুনে থাকেন, কান ভালো রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু কান পরিষ্কার বলতে আসলে কী বোঝায়? কানের ভেতর থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে নিয়মিত কটনবাড দিয়ে কান খোঁচানো? একদমই না; বরং এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস খুব কমই আছে। কানের সুস্থতায় তাই এমন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন কথায় কান না দেওয়াই ভালো।
কান পরিষ্কার রাখার জন্য অত উদ্যোগ আয়োজনের দরকার নেই। কানের ভেতরের অংশ প্রাকৃতিক নিয়মেই পরিষ্কার হয়ে যায়। সাবান, পানি ও তেল কোনো কিছুই প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। এ জন্য আসলে বাড়তি কিছুই করতে হয় না। অবশ্য কানের বাইরের অংশ সাবান–পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায় নিয়মিত। আর ‘কানের টপ’ পরে থাকলে দুল যদি ত্বকের সঙ্গে সেঁটে থাকে, তাহলে এক বা দুই সপ্তাহ পরপর সেটি খুলে রেখে সাবান-পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কানের যত্নের এমন আরও নানান তথ্য জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এ এফ মহিউদ্দিন খান।
ভুল অভ্যাস বর্জনীয়
কানের ভেতর কটনবাড, কাঠি, ক্লিপ, কলম—কোনোটাই প্রবেশ করানো উচিত নয়, খোঁচানোর তো প্রশ্নই ওঠে না; কটনবাডেও নয়, নিজের আঙুলেও নয়।
পানিকে কানের শত্রু মনে করেন অনেকেই। গোসল করতে গিয়ে কানের ভেতর পানি ঢুকতেই পারে। কানে হয়তো খানিকক্ষণের জন্য ‘তব্দা’ ধরে গেল, অমনি শুরু হয়ে গেল লাফ–ঝাঁপ। নাক আটকে, কান ঝাঁকিয়ে তোলপাড়—এগুলোর সবই ভুল। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই পানি ঢুকলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যদি না আগে থেকে কান পাকা বা এ জাতীয় কোনো সমস্যা থাকে। যাঁদের কানে এ ধরনের কোনো রোগ থাকে, তাঁদের তেলে ভিজানো তুলা চিপে নিয়ে কানে গুঁজে গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দুলবৃত্তান্ত
কানে দুল পরার জন্য ছিদ্র করা হয়ে থাকলে এবং এরপর দীর্ঘদিন দুল না পরলে, কানের ছিদ্র ছোট হয়ে আসে, এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে দেখা যায়। পরে কানে দুল পরতে গেলে অসুবিধায় পড়তে হয়। তাই দুল না পরলে ওই ছিদ্রে নিরাপদ কোনো কিছু দিয়ে রাখা ভালো। হতে পারে সেটা নিমের কাঠি।
কারও কোনো নির্দিষ্ট উপকরণে তৈরি গয়নায় অ্যালার্জি থাকলে এবং সেই উপকরণের গয়না (কানের দুল) ব্যবহার করলে চুলকানি হতে পারে, কানের ত্বক থেকে পানি পড়তে পারে। যাঁদের এমন সমস্যা হয়, তাঁদের সেই উপকরণ এড়িয়ে চলাই ভালো। সাধারণত সোনার গয়নায় অ্যালার্জির প্রবণতা কম। তাতেও অ্যালার্জি হলে রুপার গয়না পরা যেতে পারে। সব ধরনের গয়নায় অ্যালার্জি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।