তারুণ্যের জয়োৎসব

কর্মযোগে তারুণ্যের জয়

>
এই আয়োজনে দিনভর তরুণদের সময় কেটেছে আনন্দ–উচ্ছ্বাসে। ছবি: আবদুস সালাম
এই আয়োজনে দিনভর তরুণদের সময় কেটেছে আনন্দ–উচ্ছ্বাসে। ছবি: আবদুস সালাম
সারা দেশে ৩২টি আঞ্চলিক আয়োজন শেষে ২৪ এপ্রিল ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো ক্রাউন সিমেন্ট–প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসবের জাতীয় পর্ব। সারা দেশ থেকে এসেছিলেন তরুণেরা। দিন শেষে ফিরেছেন বুকভরা অনুপ্রেরণা আর নতুন কিছু করার সাহস নিয়ে।

২৪ এপ্রিল আমি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দেখেছি, আকাঙ্ক্ষা দেখেছি, আবার না পাওয়ার বেদনাও দেখেছি। পাঁচ হাজারের বেশি তরুণ সেদিন এসেছেন ‘ক্রাউন সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসব’-এর জাতীয় পর্বে। তাঁদের ৩০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে—ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বরিশাল, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। কেউ কেউ সারা রাত সফর করে সকালে সরাসরি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছেন, আবার রাতের গাড়িতে বাড়ি ফিরে গেছেন!

কেন? জানতে চেয়েছিলাম। গলা মিলিয়ে বলেছেন, তাঁরা জানতে চান চাকরি পাওয়ার জন্য কী কী করতে হবে, কোথায় গেলে চাকরি পাবেন, কেমন করে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলবেন কিংবা নিজেইবা কেমন করে অন্যকে চাকরি দেবেন; ব্যবসার বুদ্ধি-পুঁজি কোথায় পাবেন, সেটাও জানতে চান। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁদের তো মামা-চাচা নেই, কেমন করে তাঁরা চাকরি পাবেন?

এমন সব প্রশ্ন আমরা বছরজুড়ে আমাদের ৩২টা আয়োজনেই কমবেশি শুনেছি। তাই আমরা জাতীয় পর্বটি সাজিয়েছিলাম এমনভাবে, যেন সব প্রশ্নেরই মোটামুটি একটা উত্তর পাওয়া যায়, কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায় কিংবা কোথায় গিয়ে খোঁজ নিতে হবে, সেটা সম্পর্ক ধারণা পাওয়া যায়।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের ৫টি হলরুমে তাই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল নানা আয়োজন। দিনভর কনভেনশন হলে ছিল তারুণ্যমেলা। সেখানে তরুণদের নিয়ে কাজ করে এমন ২০টি প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্যোগ, সহযোগিতার কথা জানিয়েছে।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে অংশগ্রহণকারীদের লম্বা সারি। ছবি: আবু আব্দুল্লা

শুরুতে ‘একুশ শতকের স্বপ্নযাত্রা’ অধিবেশনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক ও ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, পরিণত বয়সে তাঁদের তারুণ্যের উদ্দামতার কথা। জাহাঙ্গীর আলম শুনিয়েছেন দেশের সব সফলদের তরুণ বেলাতে শুরু করার কথা। রুবানা হক গেল বছর তাঁর পিএইচডি শেষ করার কথা বলেছেন। আর মতিউর রহমান বলেছেন ৫৫ বছর বয়সে প্রথম আলো শুরু করার কথা। কিন্তু তাঁরা সবাই বলেছেন, তারুণ্যেই তাঁদের এই উদ্দামতা তৈরি হয়েছে, যেমনটি হয়েছে পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মো. ইলিয়াসের। বারবার ‘সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থ হয়ে’ তবেই না পাঠাও আজকের পাঠাও হয়েছে। সবাই জোর দিয়েছেন যান্ত্রিকতাকে পরিহার করে মানবিক হয়ে ওঠার প্রবণতাকে। বিকেলে ক্রাউন সিমেন্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর কবীর বললেন, সারাক্ষণ মাথা নিচু করে মুঠোফোনে বুঁদ হয়ে থাকলে তারুণ্য হেরে যাবে। বরং তাঁদের উচিত হবে মাথা উঁচু করে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়া।

আর সেই লড়াইয়ে জিততে হলে হার্ডস্কিল যেমন লাগবে, সে রকম লাগবে সফট স্কিল। বিশেষ করে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার মানসিকতা ও দক্ষতা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দক্ষতাতে তাই সামনের কাতারে চলে এসেছে ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং (তুরীয় চিন্তা) আর প্রবলেম সলভিং (সমস্যা সমাধান)। সেগুলোতে দক্ষ হতে হলে তাই বাড়াতে হবে পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, নেটওয়ার্কিং এবং নিজে যা জানি, তা অন্যকে জানানো ও অন্যের কাছ থেকেও শেখার মনোভাব। এ ছাড়া খুঁজে নিতে হবে এক বা একাধিক ভালো মেন্টর বা পথপ্রদর্শক।

বিসিএসের পেছনে দৌড়ানোতে যেমন সমস্যা নেই, তেমনি নিজেকে বহুজাতিক কোম্পানিতে দেখতে চাওয়ার মধ্যেও কোনো সমস্যা নেই। বরং যেকোনো বিষয়ে পড়ে এগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করা যায়। দরকার হলে কখনো কখনো নিজের জন্য বাড়তি কোনো ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা করে নিতে পারলে ভালো।

সামনের দিনে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রায় সর্বক্ষেত্রে দরকার হবে। এটি দুই কারণেই দরকার হবে—ইন্টারনেটে এখনো বেশির ভাগ বিষয় ইংরেজিতে লেখা এবং যেহেতু ইংরেজি এখন আর কেবল ভাষা নয়, দিন বদলের হাতিয়ার। তারুণ্যের জয়োৎসবের জাতীয় পর্বে ‘হতে হবে বৈশ্বিক গ্রামের বাসিন্দা’ শীর্ষক আলোচনায় এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন।

উদ্যোক্তা যাঁরা হতে চেয়েছেন, তাঁরা জেনেছেন কেমন করে শুরু করতে হয় এবং জেনেছেন মুক্ত দুনিয়ায় ‘সংরক্ষণবাদে’ বিশ্বাস করে লাভ হবে না। কারণ, যেসব দেশে আমাদের তৈরি পোশাক যায়, তারা যদি কেবল নিজের দেশে তৈরি পোশাক পড়ত, তাহলে কী আমাদের পোশাকশিল্প আজ এত বড় হতো? কাজেই পণ্য বা সেবাও হতে হবে বিশ্বমানের।

চাকরি হোক বা উদ্যোক্তা জীবন হোক, পথ খুঁজে নিতে হবে আপনাকে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা জোগাড় করতে করতে লেগে থাকতে হবে নিজের পথে।

তাহলেই শেষ পর্যন্ত পথ ঘোরানো যাবে নিজের পথে।

 লেখক: প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক