সফল কর্মজীবন ও চমৎকার একটি ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনা অনেক মানুষেরই জীবনের লক্ষ্য। তবে পুরুষের চেয়ে একজন নারীর ক্ষেত্রে এই ভারসাম্য রক্ষা করা যেন বেশি কঠিন। এমনকি নারী-পুরুষের সমতা সবচেয়ে বেশি—এমন দেশগুলোতেও দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে সফল একজন নারী ব্যক্তিজীবনে সঙ্গী হারিয়ে ফেলেন।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সুইডেনে গবেষণা চালিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনীতি বা ব্যবসায়ে শীর্ষস্থানীয় পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর নারীর বিবাহবিচ্ছেদের হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।
শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের সমতায় সুইডেনের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। সে দেশে ৩০ বছর আগে থেকেই পুরুষের তুলনায় উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের হার বেশি। এ ছাড়া শ্রমবাজারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও প্রায় সমানে সমান। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় সুইডেনে নারী প্রধান নির্বাহী, করপোরেট বোর্ডের সদস্য ও শীর্ষ পর্যায়ের সংসদ সদস্যদের অনুপাত সবচেয়ে বেশি। পারিবারিকভাবেও বেশ অগ্রগতি আছে। সফল ক্যারিয়ারসম্পন্ন নারীদের মধ্যে বিয়ে করার ও সন্তান ধারণের হার বাড়ছে।
তবে নারীর কর্মজীবনের উন্নতির সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের এগিয়ে যাওয়ার রেখাটা একে অপরকে ছেদ করে। দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সফলতা আসতে আসতে ব্যক্তিজীবনে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে বিচ্ছেদ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সুইডেনে মেয়র নির্বাচনে নারীর সাফল্য ও ওই নারীদের ব্যক্তিজীবনের একটি চিত্র পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা গেছে, নির্বাচনী জয়ী হননি এমন নারীদের তুলনায় নির্বাচনে জয়ী নারীদের বিচ্ছেদের হার অনেক বেশি। এসব নারী নির্বাচনের চার বছর আগে থেকে বিবাহিত ছিলেন। অথচ পুরুষের ক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থীর বৈবাহিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে। কোম্পানির সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়া নারীর ব্যক্তিজীবন স্থিতিশীল থাকছে না। পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাচ্ছে।
নারীরা কি বিচ্ছেদ সহজে মেনে নেন? ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গবেষণায় এই প্রশ্নের উত্তর সুইডেনের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’। তবে কেন এটা, তা বলা বেশ কঠিন। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব নারী শীর্ষ চাকরি পাওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান, তাঁরা অন্য নারীদের তুলনায় নতুন করে সম্পর্কেও কম জড়ান।
শুধু ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গবেষণায় নয়, সুইডিশ আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিগত জীবনের বিনিময়ে নারীর কর্মজীবনে সাফল্য আসে। সুইডিশ গবেষক ওলে ফোলকে এবং জোহানা রিকন দেখেছেন যে নারীরা যখন তাদের কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পেয়ে শীর্ষ পর্যায়ে যান, তখন তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার এক রকম নয়। দেখা যায়, পদোন্নতি পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কের বিপর্যয় হয় নারীদের। ওলে ফোলকে এবং জোহানা রিকন গত ৩০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।
এই দ্বন্দ্বের কারণ কী? গবেষকেরা প্রথমেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বাদ দিচ্ছেন। কারণ স্ত্রী পদোন্নতি পাওয়ার আগে থেকেই আর্থিকভাবে স্বাধীন ছিলেন। পদোন্নতির আগে বিবাহবিচ্ছেদ করলে তাঁদের অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। আসলে বিষয়টি নির্ভর করছে জীবন শুরুর আগে কী প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁদের মাঝে। যে দম্পতি একসঙ্গে পথ চলার শুরুতে পুরুষ সঙ্গীর কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে নারীর পদোন্নতি ওই সম্পর্কে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। ফলে বিচ্ছেদ হয়। এ ছাড়া ‘জেন্ডার ট্র্যাডিশন’ বলেও একটা বিষয় চলে আসে। ওই নারীর মা-বাবা কোনটিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাঁর সংসারে তা অনেক প্রভাব ফেলে।