ব্যায়ামের একটি ভালো মাধ্যম যে বাইসাইকেল, সেটা অনেকেই জানেন। শরীর ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত সাইকেল চালানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। শরীরের বাড়তি ওজন ঝরাতেও সাহায্য করে সাইকেল। এখন এই করোনাকালে গণপরিবহন ব্যবহারে অনেকের মনে শঙ্কা কাজ করছে। মহামারির এই সময়ে গণপরিবহন যতটা কম ব্যবহার করা যায়, ঝুঁকিও ততটা কম।
বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রে এখন বাস, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলোতেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। আবার এসব বাহনে চলাচলে বেড়েছে খরচ। আর সেদিক থেকে সহজ সমাধান হতে পারে সাইকেল। তাই অনেকেই এখন সাইকেল ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত যাতায়াতের জন্য।
করোনাকালের নতুন স্বাভাবিক (নিউ নরমাল) জীবনযাপনে সাইকেলযোগে যাতায়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের জন্যই ভালো হতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহ্ বলেন, রাস্তাঘাটে এই সময়ে সাইকেল বেশ কার্যকর বাহন। এ ছাড়া নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগেরও সমাধান করা সম্ভব।
সাইকেল উপকারী
সুস্থ থাকতে সপ্তাহে অন্তত আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সাইকেল চালানোর পরামর্শ দেন ডা. মো. সাইফুল্লাহ্। কেননা, এটি আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ব্যায়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে ফুসফুসেরও ব্যায়াম হয়। করোনার এই সময়ে ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে এ ধরনের ব্যায়াম জরুরি। কেননা, করোনায় আক্রান্ত হলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মো. সাইফুল্লাহ্ বলেন, সাইকেল চালানো এমন একটি ব্যায়াম, যা শরীরের প্রতিটি সন্ধিস্থলের নড়াচড়া নিশ্চিত করে, এগুলোকে সচল রাখে। ফলে হাড়ের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া শরীরের মেদ-চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে সাইকেল চালানোর জুড়ি নেই। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতে কাটানোর ফলে অনেকেরই ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত ওজনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাইক্লিং শুরু করতে পারেন। নিয়মিত সাইক্লিং খুব সহজেই আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করবে। এদিকে, সাইকেল চালালে শরীরের রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় এবং রক্তনালিও পরিষ্কার হয়। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে আসে দুই চাকার এই বাহনে।
আর্থিক দিক থেকেও দারুণ সাশ্রয়ী সাইকেল। স্বল্প আয়ের মানুষও সাইকেল কিনতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা মেরামতেও তেমন বড় অঙ্কের খরচ নেই। তাই সাইকেল ব্যবহার করলে একপ্রকার বিনা খরচেই যাতায়াত করা যায়। মোটরসাইকেলের মতো তেল খরচ কিংবা লাইসেন্সের কোনো ঝামেলাও নেই এই বাহনে। একই সঙ্গে রাস্তায় যানজট থেকেও মুক্তি দেয়। তাই সময় বাঁচানোর হিসাব কষলে সাইকেল চালানোর লাভের অঙ্ক আরও বেড়ে যাবে।
শুধু মানুষ নয়, পরিবেশেরও বন্ধু সাইকেল। দুই পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে হাওয়ায় ফোলানো চাকায় ভর করে চালাতে হয় সাইকেল। ফলে সাইকেল থেকে কোনো ধরনের ধোঁয়া কিংবা কার্বন নির্গত হয় না, পরিবেশও থাকে সুরক্ষিত। তাই ‘নতুন স্বাভাবিক’ সময়ে সাইকেলে চলাচলের অভ্যাস হতে পারে পরিবেশদূষণ রোধের শপথ।
সাইকেলের বাজার
গণপরিবহন এড়িয়ে যাতায়াতের জন্য অনেকে এখন সাইকেলকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে বাজারে সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর বংশালের মাস্টার সাইকেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আসিফ আহমেদ বলেন, আগে মূলত শিক্ষার্থীরাই সাইকেল কিনতে আসত। কিন্তু এখন বিভিন্ন বয়সের মানুষ সাইকেল নিচ্ছেন। অনেকেই অফিসে যাওয়া-আসার জন্য এখন সাইকেল কিনছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত কয়েক মাসে দামি সাইকেলের বিক্রি কমলেও মাঝারি ও কম দামের সাইকেল বিক্রি হচ্ছে খুব।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গিয়ারসহ এবং গিয়ার ছাড়া সাইকেল মিলবে রাজধানীর সাইকেলের দোকানগুলোতে। ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে মিলবে গিয়ার ছাড়া সাইকেল। অন্যদিকে গিয়ার নিয়ন্ত্রণের সুবিধাসহ সাইকেলগুলো নিতে চাইলে খরচ পড়বে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া ছোটদের জন্য রয়েছে বয়সভেদে বিভিন্ন সাইজের সাইকেল। ছোটদের সাইকেলগুলো পেয়ে যাবেন ৪ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
সাইকেলের অনুষঙ্গ
এদিকে সাইকেল চালনার জরুরি অনুষঙ্গ হেলমেটের দাম পড়বে ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। হাতের গ্লাভস মিলবে ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। অন্যদিকে ২০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাবেন সাইকেলের চাকায় হাওয়া ভরার পাম্পার। সাইকেল সাজাতে কিংবা রাতে চলাচলের জন্য সাইকেলে আলাদা বাতিও লাগাতে পারেন। ইউএসবি ও ব্যাটারিচালিত লাইটগুলো বাজারে এখন বেশ জনপ্রিয়। সুবিধা ও আকারভেদে এসব বাতির দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
বংশালসহ বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় সাইকেলের দোকানগুলোতে মিলবে সাইকেল ও সাইকেলের যাবতীয় সরঞ্জাম। তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম অথবা নিবন্ধিত আমদানিকারকদের কাছ থেকে সাইকেল কিনলে ব্র্যান্ডভেদে মিলবে দুই থেকে পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি সুবিধা। এ ছাড়া বাড়িতে বসেই সাইকেল কেনার সুবিধা দিচ্ছে বিভিন্ন সাইকেলের শোরুম। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হোম ডেলিভারি সুবিধা দিচ্ছে তারা।
খেয়াল রাখুন
• অতি দ্রুতগতিতে সাইকেল চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া দ্রুতগতিতে সাইকেল চালালে শ্বাসকষ্ট কিংবা হৃদ্রোগীদের শারীরিক অবনতি ঘটতে পারে। স্বাভাবিক কিংবা মধ্যম গতি সবার জন্যই নিরাপদ।
• দীর্ঘ বিরতির পর যাঁরা নতুন করে সাইকেল চালানো শুরু করতে চান, তাঁরা রাস্তায় নামার আগে খোলা কোনো মাঠে অনুশীলন করে নিন। এতে করে জড়তা কেটে যাবে।
• যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি বা হৃদ্রোগের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা স্বাভাবিক সাইকেলের পরিবর্তে বাড়িতে নন-মুভিং সাইকেল চালাতে পারেন।
• সাইকেল ধীরগতির ছোট বাহন হলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো থেকেই যায়। তাই চালানোর সময় হেলমেট, গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করা আবশ্যক।