করোনাকালে সহজ প্রোটিন

দেহের শক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার। ওই খাবার যেমন মাংসপেশিকে উন্নত করে, তেমনি দেহে পুষ্টির অভাব দূর করে। তবে বিশ্বজুড়ে ধনী-গরিব সবার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সব সময় চিন্তা করতে হবে, প্রোটিনযুক্ত এমন ধরনের খাবারের কথা, যা সবার জন্য গ্রহণীয়, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। এ সময় অনেকেই আর্থিক সংকটে রয়েছেন। সে জন্য অর্থের কথা চিন্তা করেও খাবার ঠিক করা উচিত।

অনেকগুলো অ্যামিনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে প্রোটিন গঠিত হয়। এতে আছে সাড়ে ১৬ শতাংশ নাইট্রোজেন। প্রতিদিনের খাবারের চাহিদার ২০-৩০ শতাংশ প্রোটিন থেকে আসা উচিত। সব বয়সেই প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রয়োজন।

অপর্যাপ্ত প্রোটিন দেহকে দুর্বল করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবারের বিপাকে প্রোটিন অংশগ্রহণ করে থাকে। দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি করতেও প্রোটিনের প্রয়োজন, যা করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া দেহের জারক রস, হরমোন প্লাজমা প্রোটিন, হিমোগ্লোবিন, ভিটামিন ও এনজাইমের ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে প্রোটিন দেহকে সুস্থ রাখে।

সহজলভ্য কিছু প্রোটিনযুক্ত খাবার

ডিম

ডিম

ডিম সালফারযুক্ত উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিন অর্থাৎ এতে পর্যাপ্ত অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। এ ছাড়া আছে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি। ডিম রোগপ্রতিরোধে ভালো। ডিমকে আরও প্রোটিনযুক্ত করতে চাইলে ডিমে দুধ মিশিয়ে ওমলেট, পুডিং তৈরি করা যায়। এ ছাড়া ডালের সঙ্গে ডিম রান্না করলেও এর প্রোটিন বেড়ে যাবে। প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।

বাদাম

বাদাম

বাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বাদামের তুলনায় চিনাবাদাম সহজলভ্য ও দামে সস্তা। এতে আছে থায়ামিন, নায়ামিন, প্যানটোথেকি অ্যাসিড, রাইবোফ্লাভিন ও ম্যাগনেশিয়াম। বাদাম চর্বিযুক্ত খাবার। এটি মুখের ঘা দূর করে। ম্যাগনেশিয়ামের জন্য স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ভালো কাজ করে এবং অবসাদ কমায়। যা এই সময়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। শিশুখাদ্য তৈরিতে বাদামের গুঁড়া ব্যবহার করলে অপুষ্টি দূর হবে। বাদাম সব বয়সে এবং যেকোনো সময় খাওয়া যায়। বাদামকে হৃদ্‌বান্ধব খাবারও বলা হয়। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও বেশি থাকে।

মাছ

মাছ

ছোট–বড় সব মাছই প্রোটিন ও মেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ। এতে আছে অসম্পৃক্ত চর্বি। মাছে আছে সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস—যেগুলো রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগে মাছ বেশ উপকারী। মাছের তেলে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি, যা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে। জিওল মাছ যেমন শিং, মাগুর, শোল, টাকি ইত্যাদি মাছ খাবারে রুচি বাড়ায়। ফলে করোনা রোগীদের জন্য ভালো। অ্যাজমা রোগীদের জন্যও মাছ উপকারী। কম তাপে মাছ রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

ডাল

ডাল

সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডাল অন্যতম। দুই–তিন ধরনের ডাল মিশিয়ে খেলে মাংসের অভাব অনেকখানি পূরণ হয়। মসুর ডালে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে। ডাল রান্না ছাড়াও ডালের হালুয়া, ডালের বড়া, অথবা বেসন দিয়েও বিভিন্ন ধরনের নাশতা বানিয়ে খেলে প্রোটিন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ছোলা, মটরও কম উপকারী নয়। ছোলা কাঁচা, সিদ্ধ, ভাজা খাওয়া যায়। শুকনা ছোলা ভাজা অর্থাৎ বুট ভাঙা, ডাল ভাজা, চটপটি এগুলোও প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস। মটর ও মসুর ডালে ম্যাপোনিন নামক উপাদানের জন্য এটা রক্তের কোলেস্টেরলকে বাড়তে দেয় না। শুধু মাত্র ডাল–ভাত, ডাল, রুটি খেয়েও মানুষ ভালো থাকতে পারে।

খিচুড়ি

খিচুড়ি

চাল-ডাল-তেল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি খুবই ক্যালরিবহুল, প্রোটিনসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার। এটা সব বয়সে খাওয়া যায়। খিচুড়ি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কারণ, চাল ও ডালের মিলিত অ্যামিনো অ্যাসিডই একে সমৃদ্ধ করে তোলে। খিচুড়িতে কিছু সবজি যোগ করলে আরও ভালো হয়। এই সময়ে দু–এক দিন পরপর খিচুড়ি খেলে খাবারে বৈচিত্র্য আসবে, রুচিও ফিরবে।

দুধ

দুধ

দুধ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন এক কাপ দুধ অথবা দুধের তৈরি খাবার খেতে পারলে ভালো হয়। বাচ্চাদের দেওয়া যাবে দুধ-সুজি, পায়েস, দুধ–সেমাই, দুধ-মুড়ি, দুধ-খই, দুধ-ভাত, দুধ-চিড়া ইত্যাদি। দুধে আছে ক্যাজিন ও ল্যাকেটান অ্যালবুমিন। দুটোই প্রোটিন। দুধের পরিবর্তে দইও খাওয়া যায়। দই সহজপাচ্য। এর ব্যাকটেরিয়া শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শোষণ করতে সাহায্য করে। যদি দুধ খেতে না পারেন, তাহলে সয়াবিন, ডালজাতীয় খাবার, শিমের বিচি, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সজনেপাতা, শর্ষেশাক খেতে পারেন।

বরবটি, ঢ্যাঁড়স, সজনেপাতা, তেঁতুলপাতা: সবজি হিসেবে বরবটি ও ঢ্যাঁড়স খেলে সহজে প্রোটিন পাওয়া যাবে। এই সময় ঢ্যাঁড়স পাওয়া যাচ্ছে। এ বিচিতেও আছে পর্যাপ্ত প্রোটিন। এ ছাড়া সজনে শাক রান্না ও ভর্তা করে খেলেও প্রোটিন পাওয়া যাবে। আবার তেঁতুলপাতায় আছে বেশ কয়েকটি অ্যামাইনো অ্যাসিড। এ জন্য তেঁতুলপাতার ভর্তাও কম উপকারী নয়।

সুতরাং করোনার সময় প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবার খেতে হবে বলে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব প্রোটিন খেলে এবং সারা দিনের খাবারটি সুষম হলেই চলবে। অনেক বেশি শর্করাযুক্ত খাবার এ সময় প্রয়োজন নেই। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লেখক: পুষ্টিবি