রোয়ান অ্যাটকিনসনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যে রোয়ান অ্যাটকিনসনকে নিয়ে কথা বলছি, তাঁকে অবশ্যই নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে। পর্দায় তাঁর পরিচয় কমেডিয়ান হিসেবেই। মিস্টার বিন, ব্ল্যাকএডার কিংবা জনি ইংলিশ—কমেডি চরিত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু পর্দার বাইরে গাড়ির জগতেও তিনি কমেডির মতোই সমান তুখোড় ও জনপ্রিয়।
তারকাদের গাড়ি নিয়ে মুগ্ধতা নতুন কিছু নয়। বেশির ভাগ তারকাই তাঁদের প্রথম পে-চেক পাওয়ার পরই ছোটেন নতুন মডেলের গাড়ি কিনতে। রোয়ান অ্যাটকিনসনও সে তালিকার বাইরে নন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন প্যারোডি শো ‘নট দ্য নাইন ও’ক্লক নিউজ’ দিয়ে।
শো চলার সময়ই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পান, তা–ও আবার সি প্লাস ই লাইসেন্স অর্থাৎ লরি বা ট্রাক চালানোর অনুমতি। কারণটা খুবই সোজা, লরির লাইসেন্স থাকলে এমনিতেই সব গাড়ি চালানোর অনুমতি মেলে।
লাইসেন্স পাওয়ার পরই অ্যাটকিনসনের পাখির মতো জীবন। ক্যামেরার সামনে যেভাবে হাসিয়েছেন মানুষকে, সেভাবে স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে বসে ছুটেছেন রেস ট্র্যাকে। তাঁর মতে, গাড়ি তৈরি করা হয়েছে চালানোর জন্য, বিশাল গ্যারেজে ফেলে রাখার জন্য নয়। তাঁর ম্যাকলারেন এফ ওয়ানের গল্প তো আগেই বলা হয়েছে। অ্যাটকিনসনের নজর ছিল রেসিং গাড়ির প্রতি। সে শখ পূরণ করতেই কিনে ফেলেন ইতালিয়ান রেসিং কার অ্যাস্টন মার্টিন ভি এইট ভ্যানটেজ জাগোতোর কালেক্টর এডিশন। এরপর পুরোনো গাড়ি ঘষেমেজে বানিয়েছেন পেশাদার রেসিং কার।
এরপর টানা ১০ বছর বহুবার বহু রেসের সঙ্গী ছিল এই অ্যাস্টন মার্টিন। সর্বশেষ ২০০১ সালে অ্যাস্টন মার্টিন ওনার্স ক্লাব রেসিং সার্কিটে এই গাড়ি নিয়ে নেমেছিলেন তিনি। সেবার দুর্ঘটনায় পড়ে পুরো গাড়ির চেহারাই পালটে ফেলেছিলেন। এরপর গাড়িটি ঠিক করা হলেও আর রেস ট্র্যাকে নামানো হয়নি। শেষমেশ ২০০৮ সালে এই গাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন অ্যাটকিনসন। এ বছরের শুরুতে সেই গাড়ি উঠেছে নিলামে। চাইলে ওয়েবসাইটে গিয়ে গাড়ির জন্য একটা দাম বলে আসতে পারেন আপনিও।
তবে রেসের সঙ্গে অ্যাটকিনসনের ইতিহাস এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। তাঁর সবচেয়ে পছন্দের সিরিজ ‘গুডউড রিভাইভাল’। পুরোনো রেসিং গাড়ির মালিকেরা নিজেই নামেন রেস ট্র্যাকে, নিজেদের প্রমাণ করার জন্য। নিজের গাড়ির সংগ্রহ দেখাতে অনেকবারই রেস ট্র্যাকে নেমেছেন অ্যাটকিনসন। কিন্তু কোনোটাই ২০১৪ সালের মতো স্মরণীয় হয়নি। সেবার তিনি রেসে নেমেছিলেন নিজের ১৯৬৪ ফোর্ড ফ্যালকন স্প্রিন্ট নিয়ে। শুরুটা ভালোই করেছিলেন, কিন্তু মাঝপথে সামনের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারাতেই সংঘর্ষ হয় তাঁর গাড়ির সঙ্গে। রোয়ান অ্যাটকিনসনের কিছু না হলেও গাড়ির অবস্থা ছিল শোচনীয়।
এগুলো তো গেল বিশেষ আয়োজনের কথা। এ ছাড়া অনেকবার অ্যাটকিনসনকে দেখা গেছে পেশাদার রেসিং ট্র্যাকে, পেশাদার রেসারদের সঙ্গে। রেস ট্র্যাকের লুইস হ্যামিল্টন নন তিনি, কিন্তু সাধারণ কোনো চালককে এই বয়সেও অনায়াসে টেক্কা দেওয়ার মুরোদ তাঁর আছে। সেটা তিনি প্রমাণও করে ছেড়েছেন। ২০১২ সালে ‘লে মানস’-এ সপ্তম স্থানে রেস শেষ করেছিলেন অ্যাটকিনসন।
তবে রোয়ান অ্যাটকিনসনের রেসিং ক্যারিয়ারে অন্যতম বড় অর্জন ‘টপ গিয়ার’-এর ‘স্টার ইন রিজনেবলি প্রাইস কার সেগমেন্ট’-এ। জেরেমি ক্লার্কসনের ‘টপ গিয়ার’ ছিল গাড়ি–পাগলদের আড্ডাখানা। গাড়ি নিয়ে যত ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যায়, সবই হতো সেখানে। সেই শোয়ের ‘স্টার ইন রিজনেবলি প্রাইস কার সেগমেন্ট’–এ অতিথি হয়ে আসতেন বড় বড় তারকা। দামি গাড়ি অনেক তারকাই চালাতে পারেন, কিন্তু মোটামুটি মানের একটা গাড়ি নিয়ে রেস ট্র্যাকে কী করে দেখাতে পারেন তারকারা, তা ঘিরেই ছিল মূল আকর্ষণ। সেখানে টম ক্রুজ, মাইকেল ফ্যাসবেন্ডার, রায়ান রেনল্ডস, জেফ গোল্ডব্লুমকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছিলেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। তারকাদের মধ্যে রেস ট্র্যাকে যে তিনিই সবচেয়ে দক্ষ, সেটা সেদিনই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল।
বয়স ৬৭ পেরিয়েছে, তবু তাঁর গাড়ির সংগ্রহশালা নজর কাড়তে বাধ্য। এখনো সময় পেলে নিজের গাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। কমেডি থেকে সব জায়গায়ই রোয়ান অ্যাটকিনসনের বিচরণ রাজার মতো।