রূপসা–ফুলতলা, খুলনা

কবির পিতৃপুরুষের আদি বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি

রূপসার পিঠাভোগে কবির পূর্বপুরুষের আদি ভিটাবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা
রূপসার পিঠাভোগে কবির পূর্বপুরুষের আদি ভিটাবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা

পিঠাভোগ

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃপুরুষের আবাসভূমি খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার অন্তর্গত ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধরের মধ্যে দ্বীননাথ কুশারীর অষ্টম পুরুষ তারানাথ কুশারী ভৈরব-তীরবর্তী পিঠাভোগ গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তারানাথ কুশারীর দুই পুত্র রামগোপাল ও রামনাথ। রামগোপালের পুত্র জগন্নাথ কুশারীই ছিলেন ঠাকুর বংশের আদি পুরুষ। যিনি খুলনা জেলার ফুলতলার দক্ষিণডিহি নিবাসী শুকদেব রায়চৌধুরীর এক কন্যাকে বিয়ে করে পীরালি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে ‘বৈবাহিক দোষে দুষ্ট’ হয়ে জাতিচ্যুত হন। পরে তিনি দক্ষিণডিহির শ্বশুরালয়ে স্থায়ী বসতি স্থাপনে বাধ্য হন। জগন্নাথ কুশারীর পরবর্তী বংশধর পঞ্চানন কুশারী। পারিবারিক মতপার্থক্যের কারণে পঞ্চানন কুশারী খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে কলকাতা গ্রামের (কলকাতা ছিল একটি গ্রামের নাম) দক্ষিণে আদি গঙ্গার তীরে গোবিন্দপুরে বসতি স্থাপন করেন। যেহেতু তাঁরা ব্রাহ্মণ ছিলেন তাই জেলে, মালো, কৈবর্ত প্রভৃতি নিম্নবর্ণের প্রতিবেশীরা তাঁদের ‘ঠাকুরমশাই’ বলে সম্বোধন করতেন। এভাবেই মহেশ্বরের পুত্র পঞ্চানন ‘কুশারী’ একসময় হয়ে যান জয়রাম ঠাকুর। পঞ্চানন থেকেই কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা, জোড়াসাঁকো ও কয়লাঘাটার ঠাকুর গোষ্ঠীর উৎপত্তি। পঞ্চানন ঠাকুরের অধস্তন সপ্তম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অপর দিকে মহেশ্বর কুশারীর অপর সন্তান প্রিয়নাথ কুশারী পিঠাভোগ গ্রামে থেকে যান, যাঁর সপ্তদশ ও অষ্টাদশ বংশধর এখনো পিঠাভোগ গ্রামে বসবাস করছেন। ১৯৯৫ সালে সরকার আদি বাড়িটি উদ্ধার করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে সাতটি বর্গে পরীক্ষামূলক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে এটি রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা নামে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

সূত্র: বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা

খুলনার ফুলতলায় দক্ষিণডিহিতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ির সামনে খুলনাসভার বন্ধুরা

দক্ষিণডিহি

খুলনা শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ফুলতলা উপজেলার অন্তর্গত দক্ষিণডিহি গ্রামে বেণীমাধব রায় চৌধুরীর আদি বাড়ি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রায় পরিবারের জামাতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারি এস্টেটের বেতনভুক্ত কর্মচারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মামাবাড়িও একই গ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেন দক্ষিণডিহির অধিবাসী রামনারায়ণ রায় চৌধুরীর কন্যা সারদা দেবীকে, যেটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে। মামাবাড়ি ও তাঁর শ্বশুর ঠাকুরবাড়ির কর্মচারীর সুবাদে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগের পাঁচ পুরুষও এই গ্রামে বিয়ে করেন। কারণ, এ এলাকাতেই তখন ঠাকুর পরিবারের সমগোত্র পীরালি ব্রাহ্মণদের বসবাস ছিল। ১৮৮৩ সালে বেণীমাধব রায় চৌধুরী ও দাক্ষায়নী দেবীর একমাত্র কন্যা ভবতারিণী দেবী ওরফে ফুলি ওরফে ফেলির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মামা নিরাঞ্জন রায়চৌধুরী ও হিরণ্ময় রায়চৌধুরীর মাধ্যমে কন্যাহ্বানে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়। ঠাকুরবাড়ির প্রথানুযায়ী বিয়ের পর ভবতারিণী দেবীর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।

সূত্র: জেলা প্রশাসন, খুলনা

লেখক: সহসভাপতি, খুলনা বন্ধুসভা