কঠিন সময়ে নিজেকে যেভাবে শান্ত রাখবেন

জীবন ভালো-মন্দের মিশেল। আনন্দ আর কান্নার সমন্বয়। তাই বলে আপনি যে কাঁচি দিয়ে ঘচাং করে মন্দ আর কান্না কেটে বাদ দিয়ে দেবেন, তা হবে না। কেননা, এ-ই জীবনের সৌন্দর্য। মন্দ আর কান্না আছে বলেই ভালো আর আনন্দের জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। কিন্তু যখন আপনার কিছুই ভালো লাগে না, খুবই কঠিন সময় যাচ্ছে, ভাঙচুর করতে ইচ্ছে করছে, নিদেনপক্ষে উল্টোপাল্টা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি ঘটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। অথবা অপর পক্ষকে মনে মনে আপনি যেগুলো বলছেন, সেগুলো চিৎকার করে শোনাতে ইচ্ছে করছে। তখন আপনি নিজেকে শান্ত রাখবেন কীভাবে? এই বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিজনেস গ্রোথ মেন্টর। ইনস্টাগ্রামভিত্তিক এই অনলাইন মিডিয়ার জনপ্রিয়তা সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে। অল্প সময়ে জুটিয়ে ফেলেছে ১৪ লাখ অনুসারী। দেখে নেওয়া যাক, কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে কী করা যায়।

মন খারাপ লাগলে খানিক হেঁটে বা দৌড়ে আসুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

১. হুট করে আপনি এমন কিছু শুনলেন, যাতে মাথাটা হিটারের চেয়ে দ্রুতগতিতে উত্তপ্ত হয়ে গেল। তখন আপনি করবেন কী? ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ুন। খানিক হেঁটে বা দৌড়ে আসুন। যাতে শারীরিক পরিশ্রম হয়। হাঁটার ফলে এন্ডরফিনস, অক্সিটোসিন, ডোপামিন, এড্রেনালিন এমন সব ‘ফিল গুড’ হরমোন নিঃসৃত হয়। তাতে আপনার বেশ খানিকটা ভালো লাগবে।


২. যদি অফিস নিয়ে দিনের পর দিন ‘প্যারা খান’, বা কিছুতেই মন বসছে না, এমন অবস্থার ভেতর দিয়ে যান, তাহলে সবকিছু থেকে এক দিনের জন্য ছুটি নিন। ছুটি নিয়ে ফোন বন্ধ করে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসুন বা আপনার যা করতে ইচ্ছা করে, সেটা করুন। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। মনের কথা ভাগাভাগি করে নিন বা পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটান।

একটা দিন সময় কাটান নিজের মতো

৩. এমন একজন মানুষের জন্য কিছু করুন, যাঁকে আপনি চেনেন না। ভবিষ্যতেও আর দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই তো সেদিন একজন ইউটিউবার একগাদা শপিং করে বের হয়ে রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধ ‘ওজন মাপাওয়ালা’কে দিয়ে দিলেন। এ ধরনের কাজ আপনাকে ভেতর থেকে দীর্ঘ সময় একটা ভালো অনুভূতি দেবে, যা কিছু স্যাঁতসেঁতে বা আহত চিহ্ন আছে, সেগুলো সব ঢেকে যাবে, লীন হয়ে যাবে।

চলে যান কোনো একটা কফিশপে

৪. এমন কোথাও বসুন, যেখানে আপনাকে কেউ দেখবে না। কিন্তু আপনি অনেককেই দেখতে পাবেন। যেমন একটা কফি শপে বসে আপনি হয়তো ঘণ্টাখানেক একটা গরম কফি হাতে ব্যস্ত রাস্তা, মানুষ আর আশপাশ পর্যবেক্ষণ করলেন। অথবা আপনার অফিসেই আপনি এমন একটি জায়গা খুঁজে পেতে পারেন। বাসার ছাদও হতে পারে এমন একটি স্থান। সেখান থেকে আশপাশের ব্যস্ততা, মানুষের জীবনযাপন, এককথায় ‘হ্যাপেনিং লাইফ অবজার্ভ’ করতে হবে। লাইফ হ্যাকসের গবেষণামতে, এতে আপনি নিজের জীবনকে ওই সামগ্রিকতার একটা ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে জুড়ে দিতে পারবেন। তখন আপনার নিজের ভেতরজুড়ে যে হতাশা, বিষণ্নতা বা ক্ষোভ জমে আছে, সেটা ছোট হয়ে আসবে।

মনের ভেতর যা কিছু চলছে, লিখে ফেলুন

৫. আপনি যে অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, সেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করুন। ডায়েরিতে পুরো বিষয়ের খুঁটিনাটি লিখে ফেলুন। এক পাশে আপনার নিজের শক্তিশালী দিকগুলোও নোট করে রাখতে পারেন। পুরোনো শখ, অভ্যাস বা কোনো সৃজনশীল কাজ নতুন করে শুরু করতে পারেন। পুরোনো সে রকম কোনো শখ না থাকলে নতুন করে শুরু করুন। এমন কিছু করুন, যেটা আপনি ছোটবেলায় করতেন। জীবন এত ‘সিরিয়াসলি’ নেবেন না। আনন্দে থাকুন। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন। নেতিবাচক আলাপচারিতা থেকে দূরে থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুমান। ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে দেখবেন, মন খারাপের ভাব অনেকটাই কমে গেছে।

মনে রাখবেন, জীবন একটা ভ্রমণ। সেই ভ্রমণে ঝুঁকি, ক্লান্তি সবই আছে। আপনাকে কেবল মাথা ঠান্ডা রেখে ভ্রমণটা উপভোগ করতে হবে। এভাবে দেখবেন, আপনি ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। তারপর একটু থেমে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন।  আর যদি কোনো গন্তব্যে না-ও পৌঁছান, তাতে কী; নিশ্চিত করুন, যাত্রাটা আপনার মন্দ যায়নি।