ও আমার দেশের মাটি

তাকে সাজানো প্লাস্টিকের বাক্সেই রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি
তাকে সাজানো প্লাস্টিকের বাক্সেই রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন। এই ভবনের নিচতলায় কিছুদূর এগোতেই নিচে নামার সিঁড়ি। নিচতলা থেকে আরও নিচে! সঙ্গের বন্ধু তাই রসিকতা করে বলল, ‘সয়েল আর্কাইভ বা মৃত্তিকা সংরক্ষণাগার দেখতে হলে মাটির নিচে গিয়েই দেখতে হবে দেখছি।’

মাটির ২০ ফুট নিচে নেমে দেখি কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলছে। তবে কি আজ আর্কাইভ বন্ধ? একজন আরেজনের দিকে তাকিয়ে ওপরে প্রায় উঠেই এসেছি, তখন দেখা সংরক্ষণাগারের তত্ত্বাবধায়ক উজ্জ্বল কুন্ডুর সঙ্গে। তিনি নিচে নিয়ে গেলেন। জানালেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তালা দিয়ে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে অবশ্য নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আর্কাইভ খোলাই থাকে।

মাটির নমুনা

ফটক খুলতেই জ্যামিতিক আকৃতির ঘরে দেখি থরে থরে শত শত বাক্স সাজানো। সেসব বাক্সেই বন্দী পুরো বাংলাদেশের মাটি। প্রায় এক হাজার বর্গফুটের ছোট একটি ঘরে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। একটি বাক্সের মধ্যে রাখা আরও তিনটি বাক্স। আর তাতে রয়েছে মাটি। বাক্সের গায়ে আবার নম্বর বসানো। জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল, এই নম্বরই মাটির পরিচয়। পুরো বাংলাদেশকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে তাদের মধ্যে দেওয়া হয়েছে প্লট নম্বর। প্লট নম্বর দেখে বলে দেওয়া যাবে কোনটি কোন অঞ্চলের মাটি। ১৬৯৮টি প্লটের ৪২২৫টি মাটির নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে। আর্কাইভের এক মাথায় রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র, যেখানে অঞ্চল ও প্লট নম্বর দেওয়া রয়েছে, যার সঙ্গে মিলিয়ে যে কেউ বুঝে নিতে পারবেন সে জায়গার মাটি কোনটি।

ছোটখাটো আর্কাইভটি সংগ্রহের দিক দিয়ে বেশ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ বন বিভাগের সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কারিগরি সহায়তায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএইডের আর্থিক সহযোগিতায় এই মৃত্তিকা আর্কাইভ গড়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতে একে আরও সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা আছে। জানালেন উজ্জ্বল কুন্ডু। বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ বিভাগ, মৃত্তিকা সম্পদ বিভাগসহ কৃষির সব খাতের জন্য গবেষণাকে সহজ করার জন্যই গত বছরের ৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়েছে এই আর্কাইভ।