ঐতিহ্যের বাগেরহাট

ষাটগম্বুজ মসজিদ। ছবি: লেখক
ষাটগম্বুজ মসজিদ। ছবি: লেখক

খুলনায় গিয়েছিলাম কাজে। কাজ শেষে অতিরিক্ত একটা দিন পেয়ে গেলাম। ঠিক করলাম পাশের জেলা বাগেরহাটে ঘুরে যাই। খুলনা থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাট সদরে সরাসরি বাসে যাওয়া যায়। দুই পাশে গাছের সারি। পিচঢালা রাস্তার আশপাশ উপভোগ করার জন্য নেমে গেলাম নওয়াপাড়া মোড়েই। সেখানে মোটরচালিত ভ্যানে করে ছুটলাম সদরে। গ্রামের দিকে এখন বাতাসে শীতের আমেজ। দর্শনীয় জায়গা বলতে আছে—হজরত খান জাহান আলী (রহ.)-এর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ আর দুটি পার্ক।

হিসাব করে তাই প্রথমে চলে গেলাম খান জাহান আলীর মাজারে। খান জাহান আলী ছিলেন সুফিসাধক ও যোদ্ধা। এই সাধকের মাজারের সামনেই বিশাল এক দিঘি, যেখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি কুমির। যদিও আমরা থাকা অবস্থায় কুমির মহাশয় পানির ওপর মুখ তোলেননি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক লোক আসে এই মাজারে। সেখান থেকে বের হয়ে পরবর্তী গন্তব্য খান জাহান আলীর নির্মাণ করা ষাট গম্বুজ মসজিদ। হাঁটাপথ। তাই হেঁটেই রওনা দিলাম। ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম সেখানে।

ষাটগম্বুজ মসজিদের ভেতরটা

খান জাহান আলী বাগেরহাটের পশ্চিম প্রান্তে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ষোলো শতকের দিকে শহরটি খলিফাতাবাদ নামে পরিচিত ছিল। শহরটিতে বেশ কিছু মসজিদ, জলাশয়, ইমারত ও রাস্তা ছিল, যার সিংহভাগই আজ বিলুপ্ত। ষাট গম্বুজ মসজিদ সেই সময়েরই এক নিদর্শন। স্থাপত্যিক নিদর্শন হিসেবে ও বিশ্বজনীন গুরুত্ব থাকায় ১৯৮৫ সালে মসজিদটিকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। পোড়ামাটির তৈরি টালি ইট, চুন সুরকি, পাথর ও টেরাকাটা দিয়ে পনেরো শতকে নির্মিত মসজিদটি তুরস্কের স্থাপত্য দ্বারা প্রভাবিত। নাম ষাট গম্বুজ হলেও এই মসজিদে গম্বুজের সংখ্যা ৮১। মসজিদের ভেতরে খাম্বা আছে ৬০টি ও মেহরাব ১০টি। মসজিদের তিন দিকে খিলান দরজার সংখ্যা ২৫। মসজিদের দুদিকে দাঁড়িয়ে আছে দুটি বটগাছ। বয়সের ভারে তারাও নুয়ে আছে। মসজিদের সামনে বড় দিঘি ও পার্ক। প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদের কথা ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে সবারই পড়া।

একে সামনাসামনি দেখতে পারার আনন্দ তাই অন্য রকম। মসজিদ এলাকার এক পাশে ছোট একটি জাদুঘরে প্রাচীন কিছু মুদ্রা ও নিদর্শন চোখে পড়ে। খোলামেলা এই এলাকায় বেড়াতে মন্দ লাগবে না।

খান জাহান আলীর মাজারের সামনের দিঘি


কীভাবে যাবেন?

ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাস আছে বাগেরহাটে যাওয়ার। আবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে লঞ্চ বা ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে কাঁঠালবাড়ি থেকে বাসে সরাসরি বাগেরহাটে যেতে পারেন। এই সড়কটাও চমৎকার। গাবতলী থেকেও বাগেরহাটে যাওয়ার বাস ছাড়ে। যাঁরা সময় নিয়ে যাবেন, তাঁরা বাগেরহাট থেকে মোংলায় গিয়ে সেখান থেকে মোটরচালিত নৌকায় চড়ে সুন্দরবনে ঘুরে আসতে পারেন। বলে রাখা ভালো, বাগেরহাটে থাকার ব্যবস্থা তেমন নেই। দু-একটা হোটেল রয়েছে সাধারণ মানের।