ধরুন, আপনি একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ব্যাগ বিক্রি করেন। আপনি চান, কেউ যদি গুগলে ব্যাগ কেনাসংক্রান্ত কিছু লিখে খোঁজ করে (সার্চ), তাহলে যেন আপনার ওয়েবসাইটের নাম ওপরের দিকে আসে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে, সেটি এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নামে পরিচিত।
শুধু গুগল নয়, ইয়াহু, বিং বা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনই একটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ম বা পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই নিয়ম বা পদ্ধতি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে তথ্য খোঁজার ফলাফলে (সার্চ রেজাল্ট) কোনো ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজকে ওপরের দিকে দেখানো সম্ভব।
একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যেন সঠিক তথ্য খুঁজে পান, সে জন্য এসইও সেই তথ্যকে সার্চ ইঞ্জিনের উপযোগী করে তোলে। এসইওর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কী তথ্য খুঁজছেন, কী ধরনের সমস্যার সমাধান চাচ্ছেন, কী ধরনের শব্দ বা কি–ওয়ার্ড ব্যবহার করছেন এবং কী ধরনের কনটেন্ট তাঁরা চান—সে সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োগ করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্কিং করাতে পারবেন।
একটি সার্চ ইঞ্জিন প্রধানত তিনটি কাজ করে—
১. ক্রলিং: ইন্টারনেটের সব বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) ইউআরএল, মানে ওয়েব ঠিকানাসহ খুঁজে বের করার পদ্ধতিকে ক্রলিং বলা হয়।
২. ইনডেক্সিং: ক্রলিংয়ের পর সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সেগুলো সংরক্ষণ ও গোছানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ইনডেক্সিং। একবার ইনডেক্স করা তথ্য পরে ব্যবহারকারীর 'সার্চ' এবং প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধানের ফলাফল হিসেবে দেখা যায়।
৩. র্যাঙ্কিং: র্যাঙ্কিং হচ্ছে ব্যবহারকারীর সার্চ অনুযায়ী ইনডেক্সিং করা লেখা, ছবি, ভিডিও, পিডিএফ ইত্যাদি থেকে ক্রমানুসারে কনটেন্টের সাজানো তালিকা, যেখানে একজন ব্যবহারকারী তাঁর কাঙ্ক্ষিত তথ্য খুঁজে পান।
এসইও শেখার জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ, এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। এসইও শেখার আগে এ–সংক্রান্ত কিছু ব্লগ পড়ে নিতে পারেন। এসইও শেখা ও এটিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে সাহায্য করবে।
বাসায় বসে অনলাইনেও এসইও শেখা সম্ভব। কয়েকটি ব্লগের লিংক:
developers.google.com/search/docs/beginner/get-started
moz.com/blog
searchengineland.com
searchenginejournal.com
searchenginewatch.com
backlinko.com/blog
এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো এলাকা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করে এসইও ও অন্যান্য বিষয়ে বিনা মূল্যে কোর্স করতে পারবেন। এসইআইপির ওয়েবসাইট এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।
শুধু এসইও নয়, যেকোনো কাজ শেখার ক্ষেত্রে মাথায় রাখা উচিত কীভাবে এটি প্রয়োগ বা ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করা যায়। ডিজিটাল বিপণনের যেকোনো কাজ করার জন্য এসইও শেখার বিকল্প নেই। আর ডিজিটাল বিপণনের একটা বড় অংশই নির্ভর করে এসইওর ওপর। যেহেতু ডিজিটাল বিপণন দিন দিন আরও গুরুত্ব পাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে এসইও হতে পারে আপনার আয়ের অন্যতম মাধ্যম। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এসইও–সংশ্লিষ্ট প্রচুর কাজ আছে, তবে অভাব আছে দক্ষ এসইও পেশাজীবীর। শুধু যে নয়টা-পাঁচটা চাকরিই করতে হবে, তা নয়। দক্ষতা অর্জন করে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসেও কাজ করতে পারবেন।
আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়ার বিভিন্ন ওয়েবসাইটে (মার্কেটপ্লেস) ফ্রিল্যান্সিং
ইউটিউব চ্যানেলের এসইও
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ব্লগ তৈরি করে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করা
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এসইও পেশাদার হিসেবে কাজের সুযোগ
এসইও পরামর্শক হিসেবে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি
ই-কমার্সের এসইও করে আয়
নিজের যেকোনো অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করা
লেখক: এসইও অ্যানালিস্ট, প্রথম আলো