এই তো কদিন আগেই চলে গেল ঈদুল আজহা। ভারী খা বারের ছড়াছড়ি গেল এই কদিন। এই ঈদে খাবারের মূল আয়োজনে থাকে বিভিন্ন রকমের মাংস। গরু, খাসি, মহিষ, এমনকি উটও কোরবানি করেন অনেকে। না চাইলেও তাই এক-দুই টুকরা করে বেশ খানিকটা খাওয়া হয়ে যায়। তাই এখন খাদ্যসচেতনতা বেশি জরুরি। এখন খাবারের বিষয়ে চাই পরিমিতি জ্ঞান ও স্বাস্থ্যসচেতনতা।
সমস্যা হলো তাঁদের, যাঁরা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। যেমন যাঁদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ আছে কিংবা এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ আছে। ঈদ উপলক্ষে সবার বাসায় কমবেশি নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের আয়োজন ছিল। তাই এখন নজর দেওয়া দরকার আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, বিভিন্ন খাবারের প্রতিক্রিয়া কী, সেসবের ওপর।
মূল সমস্যা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণে। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। এ ছাড়া কোরবানির জন্য মাংসের পরিমাণটা একটু বেশিই খাওয়া হয়। অধিক পরিমাণে মাংস খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে, বারবার পায়খানা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। ঈদের পরের এই সময়ে খেতে হবে হালকা খাবার। মাছ, শাকসবজি, সাদা ভাত, ডালের মতো খাবার এখন শরীরের জন্য ভালো।
খাবার টেবিলে পদবদল
এখন খাদ্যতালিকার এই পরিবর্তন খুব জরুরি। কারণ সহজ পাচ্য খাবার খেলে একদিকে শরীর যেমন ভালো থাকে, তেমনি অনেক অযাচিত পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যায় । তাই প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শাক যেমন ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, লালশাক, পাটশাক, কচুশাক খেতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্য থাকতে হবে সবজি।
কম তেল-মসলাযুক্ত সবজি ঈদের পরের এই সময়ে আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, আমরা সাধারণত সবুজ সবজি বেশি খাই কিন্তু অন্য রঙের সবজি খাওয়া খুব জরুরি। কারণ একেক রঙের সবজিতে একেক পুষ্টি থাকে। তাই লাল, হলুদ, বেগুনি, সাদা—সব রঙের সবজি খেতে হবে। মাংস তো অনেক খাওয়া হলো। এবার বিভিন্ন রকম মাছের স্বাদ নিন। ভাতের সঙ্গে মাছ তো বাঙালির প্রিয় খাবার।
এই সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে অন্যান্য মাছের সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া জরুরি। তবে অবশ্যই মাথায় রাখুন, একবারে বেশি খাবেন না। একটু একটু করে খান। কারণ এ সময় শরীর নিয়ে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। অন্যথায় জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সব সময় ভালো।
ফলাহারে সুস্থ থাকুন
যেকোনো টক বা কম মিষ্টিজাতীয় ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া বা পান করা যেতে পারে। খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা পর দেড় থেকে দুই গ্লাস পানি পান করুন। এ ছাড়াও মৌসুমি ফল খাবেন তাতে মজা ও উপকার দুই-ই পাবেন।
লেবুর শরবত, বাসায় বানানো ফলের রস, ডাবের পানি, বোরহানি প্রভৃতি পান করা যায়। যাদের বয়স কম এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারে। এই বয়সে তাদের হজমেরও কোনো সমস্যা হয় না, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো, বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাদ্য। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলসের মতো রোগ আছে, তাঁদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে, এমনকি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল বেশি করে পান করবেন।
যাঁদের আইবিএস আছে, তাঁরা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। হয়তো অনেক খাবার টেবিলে সাজানোই থাকবে, কিন্তু খেতে বসলেই যে সব খেতে হবে, তা নয়। রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর পানি পান করুন। খাবারের মাঝে বোরহানি খেতে পারেন।
পশুর চর্বি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা রান্না সুস্বাদু হবে এমন ভুল ধারণা পোষণ করে মাংসে বেশ কিছু চর্বি আলাদাভাবে যোগ করে থাকি। এটা ঠিক নয়। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। তাই এ সময়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে যথেষ্ট যত্নবান ও সতর্ক হতে হবে। আর যতটা পারা যায় হালকা খেতে হবে। তবে পুষ্টিগুণ থাকতে হবে খাবারে।
লেখক: পুষ্টিবিদ