পাঠকের ভালোবাসার গল্প

একটি অপ্রকাশিত চিঠি

প্রিয়তমেষু,

সম্বোধনটা করেই মনে হলো ভুল করেছি। তোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা প্রিয় কিংবা অপ্রিয়র নয়। একদম অন্য রকম। প্রিয় শত্রু বলা যায়। তো প্রিয় শত্রু, তোকে এই চিঠি আমি লিখতাম না। কখনোই না। যা হচ্ছে, সম্পূর্ণ জ্বরের ঘোরে। পাঁচ দিন ধরে যে জ্বরে ভুগছি, তা অসহনীয়, তার মধ্যে মস্তিষ্ক কেবল তোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অথচ তুই কখনোই আমার বিশেষ কেউ না। কিন্তু অসুস্থ হলে মস্তিষ্ক তোর কথা মনে করে রিল্যাক্স থাকে! অদ্ভুত না?

যত অদ্ভুতই হোক, ঘটনা সত্যি। প্রায় দুই বছর ধরে আমাদের কথা নেই। অথচ চাইলেই বলা যেত। কিন্তু তোর বরাবরই সমাজ-সংসার নিয়ে অন্য রকম চিন্তা। বন্ধুর প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলব! অথচ আমি তো আজন্ম তোর বন্ধুর প্রেমিকা ছিলাম না। তোর মতো এত ভয় পেতেও আমার ভালো লাগে না। এই সমাজ কখনোবা পাশে ছিল কার? জানি না তুই কেন এত ডরপোক। আমার রাগ লাগত, তুই সব সময় সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলতি, ‘অবনি, সন্ধ্যা নামছে। ঘরে যা।’ অথচ আমি চাইতাম দুদণ্ড বেশি তোর সঙ্গে থাকতে। তুই বুঝতি, কিন্তু অবহেলা করে একটা অমানুষিক আনন্দ তুই বরাবরই পেতে চাইতি। আমি ভেতরের কষ্টটা লুকিয়ে চলে যেতাম আর আমার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুই আধখাওয়া চা সরিয়ে, ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে সন্ধ্যার শেষ রূপ ছুঁয়ে গায়ে আগলে রাখতিস। সেই চিরচেনা ব্রিজ, ট্রাম্পপুল—সবই তো আছে, কেবল তুই আর আমি বিপ্রতীপ কোণ।

এ রকম কি হওয়ার কথা ছিল? কত কিছুই তো হওয়ার কথা থাকে। কিন্তু হয় না তো। আমিও কেমন যেন তখন জেদি ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, তোর প্রেমিকা না হলে এক জন্মই বৃথা! কী পাগলামি, তাই না? কুড়ি বছর বয়সে এ রকম পাগলামি মানায় না। তবু এ রকম হয়েছিল।

অবশেষে তুই ব্যাপারটা সামলে নিয়ে বলেছিলি, ‘অবু, আবেগ কমা।’ আমার সাবেক আছে। তারপরও হয়তো কিছু হতো। কিন্তু হয়নি। হয়েছে অভিমানে যোগাযোগ বন্ধ।

ইতি

তোর প্রিয় শত্রু