শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। শুধু নিজেই সাজবেন, তা তো হয় না। সাজবে ঘরের আরও অনেক কিছু। এই যেমন খাবার টেবিলের কথাই ধরুন। সবকিছুই যখন পাচ্ছে নতুনত্বের ছোঁয়া, তাহলে খাবার টেবিলের বাসনকোসনই বা বাদ যাবে কেন!
অনেক দিন ধরে একই থালাবাটি ব্যবহারের পর অনেকে পুরোনোগুলো বদলে নিতে ঈদের সময়টি মোক্ষম মনে করেন। তাই ঈদে অন্য সব কেনাকাটার পাশাপাশি শেষ দিকে তৈজসপত্র কেনাকাটায় ধুম পড়বে।
অতিথি আপ্যায়নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঘরের সিরামিকের পাত্রগুলো। একেক ধরনের খাবার পরিবেশনের জন্য আবার একেক ধরনের জিনিস ব্যবহারের চল। তাই কেমন মেনু থাকবে ঈদের দিন, সেটা ভেবেই বাসনকোসন কেনা ভালো। দুপুরের প্রাকৃতিক আলোতে হালকা নীল বা হলুদ, কমলা রঙের বাসন ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে রাতের কৃত্রিম আলোতে জমকালো ভাব আনতে লাল বা কালো রঙের ক্রোকারিজ ভালো। তাই কেউ মিক্স-ম্যাচ করেও বাসনকোসন নিতে পারেন। যেমন ছয়জনের টেবিলে তিনটি হলুদ আর তিনটি লাল রঙের প্লেট হতে পারে। ডাইনিং রুমের দেয়াল বা টেবিল রানারের সঙ্গে মিলিয়ে পছন্দ করতে পারেন খাবার পরিবেশনের সরঞ্জাম।
গত এক বছরে সিরামিকের বাসনপত্রে দেখা গেছে নতুন নতুন ট্রেন্ড। এই যেমন খাবারের প্লেট, বাটি ও মগে উঠে এসেছে জামদানির নকশা। থালা, বাটি, গ্লাস বা কাপে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। সেই গতানুগতিক গোল থালা আর নেই। চায়ের কাপও রূপ বদলেছে। গোলাকৃতির ভেতরের দিকে দাবানো রাইস বোলগুলোর চল থাকলেও বর্তমানে খানিকটা চিড়ার মতো চ্যাপ্টা ছড়ানো ডিশের চল বেশি। এ ধরনের ডিশগুলোতে সবকিছুই পরিবেশন করা যায়। একের মধ্যে অনেক কাজ করে বলেই হয়তো বাজারে এই ডিশের চাহিদা ভালো, জানালেন বিক্রেতারা।
সিরামিকের বাসনের রঙেও এসেছে পরিবর্তন। চিরায়ত সেই সাদা বা চাপা সাদার বদলে এখন অনেকে পছন্দ করছেন উজ্জ্বল রঙের প্লেট ও বাটি। সিরামিকের বাসনে এখন দেখা যাচ্ছে লাল, কমলা, হলুদ, নীলের মতো উজ্জ্বল শেড। আগে একটা টেবিলে ছয়টা প্লেট থাকলে সব কটিই হতো একই রং আর নকশার। সেই ধারা এখন আর নেই। ছয়টা প্লেটে থাকতে পারে ছয় ধরনের রং। গ্লসি বা ম্যাট ফিনিশ—দুই রকমেরই পাওয়া যাচ্ছে ডিনার সেটগুলো।
বেশ কয়েক বছর ধরে অনলাইনে ক্রোকারিজ বিক্রি করছে ‘বাসনওয়ালা’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক তাহমিন ফারহান বলেন, ‘পুরোনো জিনিসগুলোই নতুনভাবে তুলে ধরতে কাজ করছি আমরা।’ রং ও নকশায়ও বৈচিত্র্য এনেছে বাসনওয়ালা। এই দোকানের সবচেয়ে বড় সুবিধা, যার যার পছন্দ ও সাধ্য অনুযায়ী বেছে নিতে পারবে প্লেট ও বাটি। আর পুরো সেট নিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কারও যদি দুটি দরকার হয়, সেটাও নিতে পারবে।
আরাজ সিরামিকস বাজারে এনেছে নকশিকাঁথা ও রিকশাচিত্রের নকশা করা থালাবাটি ও ডিনার সেট। আছে হ্যান্ড–পেইন্টেড সার্ভিং ট্রে, রাজস্থানি নকশার টি সেট, চামচদানিসহ নানা কিছু। আরএকে সিরামিকস, শাইনপুকুর ব্র্যান্ডেরও পাবেন নানা ধরনের ট্রেন্ডি বাসনপত্র।
যত্নআত্তি
সিরামিকের জিনিসগুলো খুব নাজুক আর ভঙ্গুর হয়ে থাকে। এগুলোর যত্নআত্তিও বিশেষভাবে করা প্রয়োজন। সিরামিকের বাসনে ময়লা কম আটকালেও তেলজাতীয় খাবার রাখলে তৈলাক্তভাব সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে তরল সাবান বা অন্য কোনো পরিষ্কারক দিয়ে মেজে নিতে হবে। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সিরামিক বা কাচের পাত্র পরিষ্কার করলে কোনো দাগ ও গন্ধ থাকবে না।
পছন্দের ও দামি কাচের পাত্রগুলো সাধারণত উৎসব-অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য তোলা থাকে। তাই এগুলো ব্যবহার ও যত্নও করতে হবে বিশেষভাবে। শৌখিন সিরামিকের বাসন ব্যবহারের আগে তরল সাবান পাতলা কাপড়ে মাখিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। কাজ শেষে তুলে রাখার সময় দুটি পাত্রের মাঝখানে পেপার বা পাতলা ফোমের স্তর দিতে হবে। এতে সামান্য টোকা বা চাপে পাত্রের বর্ডার ভাঙা ও ফাটার আশঙ্কা কমবে।
ওভেনে সিরামিকের বাসন দেওয়ার আগে জানতে হবে সেটা ওভেনপ্রুফ কি না। সোনালি বা রুপালি বর্ডার দেওয়া পাত্র ওভেনে ব্যবহার করা যাবে না।
কেমন দাম
গোল্ড প্লেটেড ডিনার সেট ৩ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় কেনা যাবে। সাধারণ ডিনার সেট কেনা যাবে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ৩২ পিসের পোর্সেলিন ডিনার সেটের দাম পড়বে আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ৫২ পিসের বোন চায়না সিরামিক সেটের দাম পড়বে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ৭ পিসের সিরামিক স্যুপ সেট কেনা যাবে ৮৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। সিরামিকের টি পট কেনা যাবে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, চাচ দিয়ে তৈরি টি পটের দাম পড়বে ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ৬টি কাপ–পিরিচের সেট কেনা যাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়।