ঈদের দিনের জম্পেশ খাবার

>ঈদের দিনের দুপুর বা রাতের খাবার টেবিলে থাকে খাবারের জম্পেশ আয়োজন। সে রকমই কিছু চেনা–অচেনা খাবারের রেসিপি দিয়েছেন কল্পনা রহমান
ভুঁড়ি ভুনা
ভুঁড়ি ভুনা

ভুঁড়ি ভুনা

উপকরণ: গরুর ভুঁড়ি ১ কেজি, বুটের ডাল ১ কাপ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, শর্ষের তেল ৩ টেবিল চামচ, আদাবাটা দেড় চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি (মোটা করে) ১ কাপ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, এলাচি ৩টি, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, দারুচিনি ৩টি, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, তেজপাতা ৩টি, মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ, লবণ প্রয়োজনমতো ও মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ।

ভাজা মসলা: এলাচি ২টি, দারুচিনি ২ টুকরা, জিরা আধা চা-চামচ, গোলমরিচ আধা চা-চামচ এবং রাঁধুনি আধা চা-চামচ। এই মসলাগুলো হালকা ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে।

প্রণালি: ভুঁড়ি পরিষ্কার করে নিন। সেদ্ধ হয়ে এলে হলুদ ও লবণ দিয়ে ১৫ মিনিটের মতো সেদ্ধ করে ছোট ছোট টুকরা করে নিন। বুটের ডালে প্রয়োজনমতো পানি, লবণ, ২ টুকরা এলাচি, দারুচিনি, ১টি তেজপাতা, আধা চামচ করে আদা ও রসুনবাটা, ১ চিমটি হলুদের গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজকুচি ও ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে সেদ্ধ করে পানি শুকিয়ে রাখুন। এবার পেঁয়াজকুচি, তেল ও ভাজা মসলা বাদে বাকি সব উপকরণ, পানি এবং ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে চুলায় বসাতে হবে।

ভুঁড়ি সেদ্ধ হয়ে ঝোল মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন। অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে মোটা করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। যখন চকচকে হবে তখন মসলা থেকে তুলে ভুঁড়িগুলো কিছুক্ষণ ভাজা ভাজা করে নিতে হবে। এবার বাকি মসলা আধ কাপ পানি দিয়ে রান্না করুন। সেদ্ধ করা বুটের ডাল, ভাজা মসলা ও ৩ টেবিল চামচ শর্ষের তেল দিয়ে ১০ মিনিটের মতো রান্না করুন। মাখা মাখা হয়ে এলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

তন্দুরি মাটন বিরিয়ানি

তন্দুরি মাটন বিরিয়ানি

উপকরণ: চাল ১ কেজি, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, টক দই ১ কাপ, মরিচগুঁড়া দেড় টেবিল চামচ, মেথিগুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঠবাদামবাটা ২ টেবিল চামচ, সিরকা ৩ টেবিল চামচ, কাবাব মসলা ১ টেবিল চামচ, বারবিকিউ সস আধা কাপ, আমের আচার ২ টেবিল চামচ, আখের গুড় ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা আধা কাপ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, মাওয়া আধা কাপ, কাসুরি মেথি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো ও তরল দুধ ১ কাপ।

প্রণালি: এক কেজি মাংসকে ১০ টুকরা করে ঢেকে নিন। একবার ধুয়ে পানি ঝরিয়ে বেরেস্তা ও মাওয়া বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে ম্যারিনেট করে ১ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ দিতে হবে। পেঁয়াজ যখন বাদামি হবে তখন নামিয়ে ওই তেলে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে কষিয়ে রান্না করুন।

মাংস সেদ্ধ হলে ঝোল থেকে মাংসগুলো আলাদা করে তুলে নিতে হবে। ফ্রাইপ্যানে অল্প তেল দিয়ে মাংসগুলো বারবিকিউয়ের মতো ঝলসে নিন। এবার পুনরায় ঝলসানো মাংসগুলো ৫ মিনিট দমে রেখে দিন। ঝোল মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে।

চাল লবণপানিতে আধা সেদ্ধ করে ছেঁকে নিতে হবে। হাঁড়িতে অল্প তেল দিয়ে ৩ ভাগের ১ ভাগ চাল বিছিয়ে দিন। ভাতের ওপর রান্না করা মাংসের স্তর দিয়ে আবার কিছু রান্না চাল দিন। চালের ওপর আবার রান্না করা মাংস—এইভাবে ৩-৪ স্তর সাজিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি স্তরে ঘি, বেরেস্তা ও মাওয়া ছড়িয়ে দিন। একদম ওপরের স্তরে ১ কাপ দুধ ও ২ চা-চামচ চিনি দিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার সিরামিকের বাটিতে জ্বলন্ত কয়লা নিন। তারপর সেটি ফয়েল দিয়ে ঢেকে বিরিয়ানির ওপর রাখুন। ২ ফোঁটা ঘি ছড়িয়ে দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দমে বসাতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। এতে বিরিয়ানিতে ধোঁয়াটে স্বাদ আসবে। গরম গরম পরিবেশন করুন।

আফগানি বিফ

আফগানি বিফ

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, কালো গোল মরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, জিরাগুঁড়া ২ চা-চামচ, আদাছেঁচা ২ টেবিল চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচের কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘন টক দই আধা কাপ, রসুনছেঁচা ২ টেবিল চামচ, টমেটো পিউরি আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ ও লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি: ১ কেজি মাংস ২০ টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। প্রেশারকুকারে তেল গরম করে মাংস দিন। মাংস যখন জমে যাবে তখন আদা, রসুন, কাঁচা মরিচছেঁচা ও ১ চা-চামচ লবণ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন। ১ কাপ পানি দিয়ে প্রেশার কুকারের ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। ৫–৬টি হুইসেল শোনা গেলে নামিয়ে নিতে হবে।

এরপর একটি কড়াই গরম করে প্রেশার কুকারের মাংসগুলো ঢেলে দিয়ে কষাতে হবে। গুঁড়া মসলা, বেরেস্তা টক দই ও টমেটো পিউরি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। আধা কাপ গরম পানি ও ১ টেবিল চামচ ভাজা ধনেগুঁড়া দমে ১০ থেকে ২৫ মিনিট রান্না করতে হবে। মাংস সেদ্ধ না হলে প্রয়োজনমতো আরও পানি দিতে হবে।

মাংস সেদ্ধ হয়ে ভুনা ভুনা হলে ৩–৪ টেবিল চামচ ফ্রেশ ক্রিম ও ১ টেবিল চামচ কাসুরি মেথি দিয়ে ৫ মিনিট দমে রেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।

বাটার স্কচ রুটি পুডিং

বাটার স্কচ রুটি পুডিং

উপকরণ: পাউরুটি ৮–১০ টুকরা, পেস্তাকুচি ২ টেবিল চামচ, ঘন দুধ ১ কাপ, ভারী ক্রিম আড়াই কাপ, চিনি ১ চা-চামচ, পেস্তাকুচি ২ টেবিল চামচ, ক্যারামেলের জন্য চিনি আধা কাপ, মাখন ২৫ গ্রাম, ক্যারামেল করা বাদাম ১ কাপ।

প্রণালি: পাউরুটির পাশ ফেলে দুই টুকরা করে তেল ভেজে নিন। ১ কাপ জ্বাল দেওয়া ঘন দুধের সঙ্গে আধা কাপ ভারী ক্রিম, ১ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে রাখতে হবে।

আধা কাপ চিনি ও ২ টেবিল চামচ পানি দিয়ে ক্যারামেল সস বানিয়ে নিতে হবে। ক্যারামেল হয়ে গেলে ২ টেবিল চামচ মাখন দিয়ে নেড়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। সঙ্গে ১ চিমটি লবণও দিন। এবার ১ কাপ ভারী ক্রিম দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে। ক্যারামেল গলে সসের মতো হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি ঘন হয়ে জমাট বেঁধে না যায়। এটাই বাটার স্কচ সস।

১ কাপ ভারী ক্রিম বিট করে ক্রিম বানিয়ে নিতে হবে। ক্রিম বানানোর পর ১ টেবিল চামচ বাটার স্কচ সস আলতোভাবে মিশিয়ে নিন। একটি চারকোনা বাটিতে ভাজা পাউরুটিগুলো বিছিয়ে তার ওপর তৈরি করা ঘন দুধ কিছুটা ঢেলে দিতে হবে।

দ্বিতীয় স্তরে অল্প ক্রিমের স্তর দিয়ে ওপরে ২ টেবিল চামচ বাটার স্কচ সস ছড়িয়ে দিতে হবে। ক্যারামেল বাদাম ছড়িয়ে দিতে হবে।

তৃতীয় স্তরে আবার ভাজা রুটিগুলো দুধের মিশ্রণে ভিজিয়ে স্তর করে দিতে হবে। ক্যারামেল করা বাদামও ছড়িয়ে দিতে হবে।

চতুর্থ স্তরে যে ক্রিম রয়ে গেছে সেই ক্রিম পাইপিন ব্যাগে ভরে দাগ টেনে টেনে দিতে হবে। এবার সমান করে দিন। ক্রিমের ওপরে বাটার স্কচ সসের স্তর দিতে হবে। সবার ওপরে পেস্তাকুচি ও ক্যারামল করা বাদাম ছড়িয়ে ৪-৫ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।

বিফ রগন জোস

বিফ রগন জোস

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ কাপ ও পানি ৪ কাপ।

পুঁটলির জন্য মসলা: তেজপাতা ৫টি, বড় এলাচি ৩টি, ছোট এলাচি ৫টি, জয়ত্রী ২টি, আস্ত ধনিয়া ১ চা–চামচ ও আস্ত গুয়ামৌরি ১ চা–চামচ। এই মসলাগুলো একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে পুঁটলি করে নিতে হবে।

রগন জোসের মসলা: কাশ্মীরি লাল মরিচের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ, আদাবাটা ২ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, টক দই আধা কাপ ও লবণ প্রয়োজনমতো।

ভাজা মসলা: এলাচি ৬টি, দারুচিনি ৪-৫টি, বড় এলাচি ২টি, মৌরি ২ টেবিল চামচ, জিরা ১ টেবিল চামচ ও জয়ত্রী আধা টুকরা। এই মসলাগুলো হালকা ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে।

প্রণালি: পাত্রে তেল গরম করে মাংস দিন। একটু পর বেরেস্তা দিয়ে নাড়ুন। নাড়তে নাড়তে মাংসের রং যখন পাল্টে যাবে, ৪ কাপ পানি ও মসলার পুঁটলি দিয়ে ঢেকে রাখুন। আগুনের আঁচ থাকবে মাঝারি। ৩০-৩৫ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে। এবার রগন জোসের মসলা একে একে দিতে হবে। টক দই ফেটে দিন। ভাজা মসলা গুঁড়া দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। মাঝারি আঁচে আবারও প্রায় ৩০ মিনিট রান্না করুন। মাংস একদম নরম হয়ে ঘন তেল ওপরে উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

প্রেশার কুকারে বিরিয়ানি

প্রেশার কুকারে বিরিয়ানি

উপকরণ: ক. গরুর মাংস ১ কেজি, চিনি ২ চা-চামচ, বাসমতি চাল আধা কেজি, আলু ২০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল সিকি কাপ, আলুবোখারা ৪–৫টি, সয়াবিন তেল সিকি কাপ, জাফরান ১ চিমটি, জর্দার রং সামান্য, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ ও লবণ পরিমাণমতো।

খ. আদার রস ২ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, রসুনের রস ২ টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচ ১ চা-চামচ, পেঁয়াজের রস ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, কাঠবাদাম ১ টেবিল চামচ, কেওড়াজল ১ টেবিল চামচ, মিষ্টি দই আধা কাপ, লবণ পরিমাণমতো।

গ. জায়ফল চার ভাগের এক ভাগ, জয়ত্রী ৩টি, কাবাব চিনি (কিউবেব) আধা চা-চামচ, এলাচি ৮টি, শাহি জিরা আধা চা-চামচ। এ মসলাগুলো চুলার পাশে রাখুন, ঝরঝরে হলে গুঁড়া করে নিন। তবে ভাজা যাবে না।

ঘ. মসলা: ১ কাপ দুধ, কেওড়াজল ১ চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ। সব উপকরণ মিশিয়ে নিন।

প্রণালি: ১ কেজি মাংস ১০ টুকরা করে কেটে ধুয়ে নিন। ১ টেবিল চামচ লবণ পানি দিয়ে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার পানি ঝরিয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে মাংসগুলো মুছে নিন। মাংসের সঙ্গে খ–এর সব উপকরণ ও অর্ধেক গুঁড়া মসলা দিয়ে মেখে রাখুন ১ ঘণ্টা। আলুগুলো সামান্য জর্দার রং, ২ টেবিল চামচ বেরেস্তা ও আধা চামচ চিনি দিয়ে সিকি কাপ তেলে ভেজে রাখুন। বাসমতি চাল ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এবার পানিতে পরিমাণমতো লবণ, শাহি জিরা, এলাচি ও দারুচিনি দিয়ে ফুটিয়ে ভেজানো চাল দিয়ে দিন। একবার বলক উঠলে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।

বেরেস্তার সঙ্গে বাকি অর্ধেক গুঁড়া মসলা ও চিনি এবং ১ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ মিশিয়ে রাখতে হবে। প্রেশার কুকারে ২ টেবিল চামচ তেল ও ঘি ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর দিতে হবে মেখে রাখা মাংস। মাংসের ওপর ঘ–এর কিছুটা ও বেরেস্তার মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। আলুভাজা ও ভাজার তেলও দিতে হবে। আবার দিতে হবে বেরেস্তার মিশ্রণ। এখন ফুটানো চাল দিয়ে দিন। চালের ওপর আলুবোখারা গুঁজে দিতে হবে। দুধের মিশ্রণ ছড়িয়ে দিন। বাকি ঘি দিয়ে দিন। অল্প দুধে জাফরান ভিজিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবশেষে প্রেশার কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে ১৫ মিনিট মাঝারি জ্বালে রাখুন। তারপর তাওয়ার ওপর অল্প আঁচে ২০ মিনিট দমে রেখে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। ১ মিনিট পর খুলে পরিবেশন।