সাতকানিয়া-লোহাগাড়া

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন নদভী

আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী
আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী

‘তিনি কখনো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলেননি। গত পাঁচ বছরে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। আওয়ামী লীগের কোনো পদেও নেই তিনি। রয়েছে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা যারা যুদ্ধাপরাধসহ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে এত দিন সংগ্রাম করেছি, তারা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করব কি না ভেবে দেখতে হবে।’
আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার (চট্টগ্রাম-১৫) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তৈয়বুল হক। এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ায় নদভী এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে সাংসদ প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে নদভী ছাড়াও আটজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব, মিনহাজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, কামরুন্নাহার ও ববিতা বড়ুয়া। কিন্তু সবাইকে পেছনে ফেলে মনোনয়ন পেয়েছেন নিজামুদ্দিন নদভী। এর আগে তিনি জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী যখন উপজেলার তৃণমূল নেতাদের মতামত নিয়েছিলেন, তখন নদভীর নাম প্রস্তাব করা হয়নি। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে নদভীর সম্পর্ক পারিবারিক সূত্রে। গত পাঁচ বছরে এলাকায় তিনি কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অনেক ত্যাগী নেতা জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন। এ সংগ্রামে কোনোদিন নদভীকে কাছে পাইনি।
লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জানান, জামায়াতের পক্ষে যিনি ভোট চেয়েছেন তাঁর পক্ষে নৌকায় ভোট চাওয়া কঠিন হবে। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার জন্য তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। দলের কর্মীদের দুর্দিনে পাশে থেকেছি। এখনো দলের সিদ্ধান্তের পক্ষেই আছি।’
জানতে চাইলে আবু রেজা নিজামউদ্দিন নদভী তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার আওয়ামী পরিবার। আমি জামায়াতের পক্ষে ভোট চাইনি কিংবা জঙ্গি কানেকশনও ছিল না। আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও দলের জন্য বিগত দিনে কাজ করেছি।’ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছবি থাকা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলনে অনেকে দাওয়াত পান। সেসব অনুষ্ঠানে ছবিগুলো তোলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, নদভী একসময় জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলেও এখন নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই দলের প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।