‘আমাকে কেন তোমাদের বিয়েতে নিলে না?’ শিশুর এমন প্রশ্নের উত্তর দেবেন কীভাবে

শিশুর প্রশ্নে বিব্রত হওয়া যাবে না, তাকে গুছিয়ে উত্তর দিন
অলংকরণ: আরাফাত করিম

শিশুরা সব বিষয়েই কৌতূহলী। তাই অনেক প্রশ্ন তারা করে। তবে শিশুর কিছু প্রশ্নে অনেক সময় বড়রা বিব্রত হন। ভাবেন এটা তো শিশুর বয়স উপযোগী নয়, তাই ভুলভাল একটা কিছু বলে বসেন বা ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। এখানেই ভুল হয়ে যায়। মা–বাবার উচিত শিশুর উপযোগী করে তাকে সত্য ও সঠিক বিষয়টি জানানো। নাহলে পরে শিশু যখন সঠিক বিষয়টি জানবে, সে ধন্দে পড়ে যাবে। মা–বাবা বা পরিবারের প্রতি অনাস্থা তৈরি হবে। একই সঙ্গে নানা জায়গা থেকে শিশু নানা ধরনের উত্তর থেকে সঠিক বিষয়টি বুঝতে ভুল পথে যেতে পারে। শিশুরা প্রায়ই করে এমন ৫টি প্রশ্ন ও তার উত্তর এখানে দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: আমি কোথা থেকে এলাম? অথবা ভাইটা/বোনটা তোমার পেটে এল কী করে?

শিশু প্রশ্ন করলে থামিয়ে দেবেন না

যা বলবেন: মা–বাবা যখন একে অপরকে ভালোবাসে, তখন মায়ের পেটে বাবু আসে। তুমিও এভাবেই এসেছ। প্রায় ১০ মাস বাবুটা মায়ের পেটে থাকে। এরপর ডাক্তার আঙ্কেল/আন্টির সাহায্যে বাবুটাকে বের করে আনা হয়।

যা বলা যাবে না: তোমাকে বাগানে কুড়িয়ে পেয়েছি কিংবা একটা পাখি তোমাকে মায়ের কোলে ফেলে গেছে। এ ধরনের আজগুবি উত্তর কখনোই দেওয়া যাবে না। শিশুকে তার বয়স উপযোগী করে উত্তর দিতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত কথা বলতে হবে।

প্রশ্ন: (বড় কাউকে খারাপ কোনো কাজ করতে দেখে) লোকটা কেন এই কাজ করলেন?

যা বলবেন: খারাপ কাজ করার মানেই যে কোনো ব্যক্তি খারাপ, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় পরিস্থিতির কারণে কেউ খারাপ কাজ করে ফেলেন। কেউ কখনো রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে, লোভ সংবরণ করতে না পেরে বা বাধ্য হয়ে খারাপ কাজ করেন। আমরা খারাপ কাজকে ঘৃণা করব কিন্তু যে করে তাঁকে নয়। তাঁকে আমরা ভালো কাজ করার সুযোগ দেব।

যা বলবেন না: ওর সঙ্গে কথা বলবে না। অমুক খারাপ লোক, মিশবে না। এ ধরনের শিক্ষা দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন: (কোনো একটা গালি শুনলে) এটার মানে কী?

যা বলবেন: এটা একটা খুব খারাপ কথা। কোনো মানুষকে এসব কথা বলা কখনোই ঠিক নয়। এ কথার অর্থ হচ্ছে, তাঁকে কোনো পশুর সঙ্গে তুলনা করা বা তাঁর মা–বাবাকে নিয়ে জঘন্য কথা বলা। একজন সভ্য মানুষ হিসেবে কাউকে কখনোই এ ধরনের কথা বলা যাবে না। মনে রাখবে, যিনি গালি দেন, তাঁর শিক্ষা, সামাজিক পরিচিতি সব ব্যর্থ হয়ে যায়।

যা বলবেন না: গালির ভুল ব্যাখ্যা দেবেন না। অথবা এটা একটা ভালো কথা বলে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

প্রশ্ন: আমাকে কেন তোমাদের বিয়েতে নিলে না?

যা বলবেন: আমাদের যখন বিয়ে হয়, তখন তুমি জন্মাওনি। বিয়ের পর আমাদের দুজনের ভালোবাসার কারণে তুমি জন্ম নিয়েছ। বিয়ের সময় যেহেতু তুমি জন্মই নাওনি, তাই তোমাকে আমাদের বিয়েতে নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না।

যা বলবেন না: স্যরি, ভুল হয়ে গেছে। অথবা ‘আমরা আবার বিয়ে করলে তোমাকে নিয়ে যাব’ ধরনের কথাবার্তা ঠিক নয়।

প্রশ্ন: (বই পড়া বা সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে যখন বলা হয় এটা বড়দের) এটা আমার জন্য নয় কেন?

যা বলবেন: সিনেমা বা বই বিভিন্ন বয়সের জন্য তৈরি হয়। তোমার মতো বয়সের উপযোগী বই তুমি পড়তে পারো, তোমার বয়সের উপযোগী সিনেমা তুমি দেখতে পারো। কিন্তু এমন কিছু বই বা সিনেমা আছে, যেগুলো একদিকে কঠিন, যা তুমি সহজে বুঝতে পারবে না। আবার কোনোটিতে এমন কিছু শব্দ, বাক্য বা দৃশ্য আছে যেগুলো পড়লে বা দেখলে তোমার মনের ওপর চাপ আসতে পারে। এসব কারণে তোমার বয়সের উপযোগী নয়, এমন বড়দের বই বা সিনেমা তুমি বড় হলে পড়বে বা দেখবে।

যা বলবেন না: এটা দেখলে দুষ্টু হয়ে যাবে। এটা খুব খারাপ সিনেমা।