আসছে আষাঢ়। শুরু হবে বৃষ্টি। পাল্টে যাবে জীবনযাপনের নানা দিক। যোগ-বিয়োগ হবে সাজপোশাকের ধারাতেও।
সকালে জানালার পর্দা সরাতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আকাশ মেঘলা, যেকোনো মুহূর্তে শুরু হয়ে যাবে বৃষ্টি। কাল বুধবার থেকে শুরু হবে বাঙালির ঝরো ঝরো মুখর বাদলের দিন। বৃষ্টি দেখতে দেখতে তারিয়ে চা পানের মুহূর্ত এসে গেল। আকাশ থেকে ঝরা ঝরনার নিচে মনভরে ভেজার সুযোগ। চলবে কদম, বেলি ও দোলনচাঁপার রাজত্ব।
বাড়ির ভেতর কিংবা বাইরে চার দেয়ালের সুরক্ষিত জায়গায় বসে ঝুম বৃষ্টির দৃশ্য সব সময়ই মনোরঞ্জক। ঝামেলা হয় তখনই, যখন আপনি বাড়ির বাইরে থাকেন। আগামী দুই থেকে আড়াই মাস যখনই বাড়ি থেকে বের হবেন, যখন-তখন বৃষ্টির কথাটা মাথায় রাখুন। সকালে কটকটা রোদ থাকলেও কথাটি ভুলবেন না। আষাঢ়–শ্রাবণে রোদেলা দিন মেঘলা হতে সময় লাগে না। ব্যাগে ছোট ছাতা রাখা থেকে শুরু করে পায়ে পানিনিরোধক স্যান্ডেল—এ সময়ে চলতে গেলে মেনে চলতে হবে ছোটখাটো এসব বিষয়।
বৃষ্টির সঙ্গে নীল রঙের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। চারদিকে তখন স্বচ্ছ পানির প্রভাবে নীল রঙের পোশাক পরার চল বেড়ে যায়। পানির কোনো রং নেই, কিন্তু কেন জানি বৃষ্টির কথা উঠলেই মাথায় আসে নীল পোশাকের কথা, জানালেন কে ক্র্যাফটের কর্ণধার খালিদ মাহমুদ খান। বৃষ্টির সময় ব্যাকগ্রাউন্ড যেহেতু স্বচ্ছ থাকে, তাই নীল রঙের পোশাক পরলে দেখতেও লাগে সুন্দর।
ওপরে মেঘলা আকাশ, নিচে কাদায় লেপটানো মাটির সোঁদা গন্ধ—মাঝে উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে ঘোরাটাই যেন মানানসই। অন্য রংও বেছে নিতে পারেন। তবে উপকরণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি কাপড়ের পোশাক আরাম দেবে। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে শুকিয়েও যাবে তাড়াতাড়ি। জর্জেট, সিল্কের শাড়ি, কামিজ ও টপে স্বাচ্ছন্দ্য পাবেন। বেছে নিতে পারেন গোড়ালির ওপর পর্যন্ত লম্বা ড্রেস। কাদা লেগে যাওয়ার ভয় থাকবে না। সালোয়ার বা প্যান্ট পরলেও গোড়ালির ওপর থাকলে ভালো।
আষাঢ়-শ্রাবণের পোশাকের নকশা নিয়ে মজার তথ্য দিলেন ক্লাব হাউসের ফ্যাশন ডিজাইনার আনিক ইসলাম। উষ্ণ ও ঠান্ডা—এ দুই নকশাই পোশাকে রাখার চেষ্টা করা হয় এখন। বৃষ্টির সময়ে হয়তো চারদিকের তাপমাত্রা কমে আসে, আগে-পরে আবহাওয়া আবার গরম হয়ে যায়। এ কারণে পোশাকে উষ্ণ ও ঠান্ডা, দুটি নকশাই রাখা হয়—হালকা নীলের মধ্যে গাঢ় নীল অথবা গাঢ় নীলের মধ্যে হালকা নীল। হালকা ওজনের ক্রেপ জর্জেট, জ্যাকার্ড জর্জেট, সুইস জর্জেট, সিল্কের ওপর করা ছাপা নকশাটাও হতে হবে টেকসই। এ ক্ষেত্রে সাবলিমেশন প্রিন্ট আদর্শ। পানিতে ভিজলেও এই ছাপা–নকশার কোনো ক্ষতি হবে না, জানান আনিক ইসলাম। হালকা রঙের পোশাক পরে বের হওয়াই ভালো। বৃষ্টির পানি বা কাদা লেগে পোশাক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পানিরোধী প্রসাধনী ব্যবহার এ সময় বাধ্যতামূলক। হুটহাট ভিজে গেলেও অসুবিধা নেই। ক্রিমভিত্তিক বা লিকুইড ফাউন্ডেশন এ সময়ের জন্য ভালো। মেকআপ করার আগে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানান, মাসকারা, কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক—এ চার উপকরণ পানিরোধী হলে কোনো সমস্যা হবে না। এ সময় ম্যাট লিপস্টিক লাগান। বৃষ্টির পানি লাগলেও উঠে যাবে না। অনেকে বর্ষার অন্ধকার আবহাওয়া পছন্দ করেন। যাঁরা করেন না, নিজের সাজে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে পারেন। বেজ হালকা রেখে লাল, কমলা বা গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগাতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নীল রঙের আইলাইনার, আইশ্যাডো এ সময়ের চোখের সাজে আনবে বৃষ্টিদিনের আমেজ। শুধু ছবি তোলার জন্যও যদি বৃষ্টিতে ভিজতে চান, এভাবেই সাজুন। ভারী বা অতিরিক্ত সাজ এই ঋতুর জন্য নয়, জানান আফরোজা পারভীন।
পুরো বর্ষায় যে জুতাগুলো পরবেন, সেগুলো আলাদা করে ফেলুন। পানিরোধী উপকরণে তৈরি জুতাগুলো পায়ে থাকুক। অ্যান্টিস্লিপ জুতা বেছে নিন। এ সময় এমনিতেই রাস্তা পিছল হয়ে থাকবে। কাদা এড়ানোর জন্য একটু উঁচু হতে পারে জুতা। হাতের ব্যাগটির দিকেও একবার তাকান। পানিরোধী ব্যাগ নিয়ে বের হোন। না থাকলে প্রয়োজনে কিনে ফেলুন।
কোনো কাজে ব্যস্ত না থাকলে ঝুম বৃষ্টিতে হুটহাট ভিজে নেওয়াই যায়। গুনগুন করে গাওয়া যায় অঞ্জন দত্তের, ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে, থাকবে না সঙ্গে কোনো ছাতা, শুধু দেখা হয়ে যাবে মাঝরাস্তায়, ভিজে যাবে চটি, জামা, মাথা...’