বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম গোল করে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে জ্বল জ্বল করছেন এনায়েতুর রহমান। বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম এই তারকা। দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন বর্তমান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ফিফা ওয়েবসাইট ও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এই পর্যন্ত কোনো অমিল নেই। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ২–২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিতেছিল না হেরেছিল, এই নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। ফিফার তথ্য অনুযায়ী, টাইব্রেকারে হার মানে বাংলাদেশ। ম্যাচের গোলদাতা সালাউদ্দিনও বলছেন বাংলাদেশ হেরেছিল, তবে ড্র হওয়ায় ম্যাচটি আবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেখানে হার। আবার ক্রীড়াবিষয়ক সাময়িকী ক্রীড়া জগত বলছে, টাইব্রেকারে জিতেছিল বাংলাদেশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, স্নায়ু পরীক্ষায় স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ম্যাচের দুই গোলদাতা এনায়েত ও সালাউদ্দিন।
বাংলাদেশের প্রথম গোল ও এনায়েত
বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের মালিক স্ট্রাইকার এনায়েতুর রহমান। কথাটির মধ্যে কতই–না বিশালতা। তবে গোলটি নিয়ে বিন্দুমাত্র অহংবোধ নেই, যা আছে একটি দেশের প্রথম গোলদাতা হওয়ার গর্ব। ১০ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার দূরের কানাডা থেকে তরঙ্গে ভেসে আসা এনায়েতের কণ্ঠে এখনো অনুভব করা যায় সেই গর্বের পারদ।
তাঁর গোলেই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। প্রথমার্ধে বলটি যখন থাইল্যান্ডের জালে জড়াল, অলক্ষো বাংলাদেশের আকাশে বুঝি ছড়িয়ে পড়েছিল একমুঠো উৎসবের আবির। অথচ গোলটি করে যে কেউ ইতিহাস হয়ে যেতে পারতেন বলে এখনো মনে করেন এনায়েত।
মুঠোফোনে এনায়েত বললেন, ‘জাতির প্রথম গোলদাতা হিসেবে গর্ব বোধ হয়। তবে আমি এখনো মনে করি, গোলটি অন্য যে কেউ করতে পারত। একজন খেলোয়াড় তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মনে রাখতে পারেন। আর সেই গোল তো আমাকে মনে রাখতেই হবে। বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আর প্রথম গোল ছিল আমার। সব জাতিই হয়তো বিষয়টিকে মর্যাদা দিয়ে থাকে, সেই মানুষকে বিশেষভাবে মনে রাখে। আমার সেই গোলে অনেক অবদান ছিল কক্সবাজারের সুনিলের (সুনিল কৃষ্ণ দে চৌধুরী)।’
এনায়েতের ফুটবল–দক্ষতাকে এখনো কুর্নিশ করেন তাঁর সতীর্থ ও তৎকালীন ফুটবলপ্রেমীরা। প্রথম আলোর প্রতি এনায়েতের অনুরোধ ছিল, আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম গোল নিয়ে যদি কিছু লিখতেই হয়, তাহলে যেন শোনা হয় সুনিল কৃষ্ণ দে চৌধুরীর কথা।
ওয়াপদার চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এখন পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বাস করেন সত্তরোর্ধ্ব সুনিল। তবে সেই গোলের গল্প এখনো তাঁর কণ্ঠে তাজা, ‘ডান প্রান্ত থেকে চিপ (ক্রস) করেছিলাম। এনায়েত ভাই অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে হেড করে গোলটি করেছিলেন। ওনার হেড ছিল দুর্দান্ত।’ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ম্যাচের টাইব্রেকারে হেরে যায় বাংলাদেশ।
সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় গোল
দেশের ফুটবলের ইতিহাসের দুই মহাতারকা সালাউদ্দিন ও এনায়েতের মধ্যে ফুটবল রোমান্টিকেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ পেতেন। তাঁরা দুজন একসঙ্গে জাতীয় দল ও স্বাধীন বাংলা দলে খেললেও তাঁদের মধ্যে নাকি ছিল অদৃশ্য দেয়াল। সেই দুই তারকাকে ইতিহাস এক ফ্রেমে বেঁধে রেখেছে ঐতিহাসিক ম্যাচে।
এনায়েতের গোলের পর পাল্টা দুই গোল করে এগিয়ে যায় থাইল্যান্ড। ম্যাচে বাংলাদেশকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন দেশের ‘ফুটবল রাজকুমার’ হিসেবে পরিচিত সালাউদ্দিন।
গোলের গল্পটি শুনুন তাঁর মুখ থেকেই, ‘জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলব, তাও আবার থাইল্যান্ডের বিপক্ষে, খুব উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। এক গোল দিয়ে দুই গোল খাওয়ার পর আমার গোলে ড্র। যতটুকু মন পড়ে, মাঝমাঠের ওপর থেকে বলটি পেয়েছিলাম। বল নিয়ে জোরে দৌড় দিতেই ডিফেন্ডাররা আমার পেছনে পড়ে যান। এরপর বক্সের ওপর থেকে শট নিয়ে গোলটি করি।’