স্কুল-কলেজে পড়াশোনায় একদমই মন ছিল না কাজী জহিরুল ইসলামের। উচ্চমাধ্যমিক শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাতেও হোঁচট খেলেন। পরের প্রস্তুতি নিলেন আটঘাট বেঁধে, আর সুযোগ হয়ে গেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগে। এরপর থেকে কী যেন এক পরিবর্তন এল। হঠাৎ পড়াশোনায় মনোযোগী হলেন তিনি।
মনোযোগের সুফল যোগ হলো পরীক্ষার খাতায়। প্রথম স্থান অর্জন করে তিনি উঠলেন দ্বিতীয় বর্ষে। এভাবে স্নাতকের প্রতিবছরই প্রথম স্থান ধরে রেখে স্নাতকের চূড়ান্ত ফলাফল ছিল প্রথম বিভাগে প্রথম। জহিরুল এখন স্নাতকোত্তরের ছাত্র।
স্নাতকে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় হঠাৎ তাঁর মনে হয়েছিল, জ্ঞান অর্জনের জন্য স্রেফ ক্লাসের বইগুলোই যথেষ্ট নয়। নানা ধরনের বই পড়তে শুরু করেন তিনি। কিন্তু এত ভালো ভালো বইয়ের কথা বন্ধু, সহপাঠীদেরও তো জানানো দরকার। সেই ভাবনা থেকে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের নিয়ে পাঠ চক্রের আয়োজন শুরু করেন। তখন থেকে ‘রেনেসাঁ’ নামের এই পাঠ চক্রটি প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া আরও দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন জহিরুল। কনজিউমার ইয়ুথ বাংলাদেশের রাবি শাখার সভাপতি তিনি। ভোক্তা অধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকানপাটে ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে সংগঠনটি।
লেখালেখিতেও বেশ পারদর্শী এই তরুণ। তাঁর লেখা কলাম কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। পড়াশোনা শেষে গৎবাঁধা চাকরির পেছনে ছুটতে চান না। উচ্চশিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে গবেষণায় যুক্ত হতে চান তিনি। ইতিমধ্যে তাঁর দুটি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক দুটি সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে জহিরুলের রাজশাহীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—মাহালে সম্প্রদায়ের সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধটি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কালচার, পিস অ্যান্ড এডুকেশন শীর্ষক সম্মেলনে জহিরুলের গবেষণা প্রবন্ধ ‘জনসচেতনতা সৃষ্টিতে লোকমাধ্যম হিসেবে লোকনাট্যের ভূমিকা’ উপস্থাপন করা হয়।