একটি নামকরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবির (ছদ্মনাম)। বছর শেষে তাঁর অফিসে শুরু হয়েছে কর্মী মূল্যায়নের মহাযজ্ঞ। আবির নিজে জানেন, এ বছর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঠিকঠাক শেষ করেছেন তিনি। কিন্তু কখনো তা নিয়ে খুব একটা মাতামাতি হয়নি অফিসে। এখন আবির ভাবছেন, যদি বসের এসব মনে না থাকে!
এমন কিন্তু হতেই পারে। একটি প্রতিষ্ঠানের একজন ব্যবস্থাপকের পক্ষে সব কর্মীর কাজের বা নৈপুণ্যের হিসাব মনে রাখা সম্ভব নয়। ফলে মূল্যায়নের সময় দেখা গেল, হয়তো এক কর্মী ভালো ভালো কাজই করেছেন, কিন্তু বস ঠিকমতো জানেন না বলে তাঁর পদোন্নতিই আর হলো না!
তাই নিজের করা কাজ সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। কারণ মূল্যায়ন করার সময় বসেরা যতটুকু জানেন, ততটুকু দিয়েই কাজ সারেন। সুতরাং আপনি যে কাঙ্ক্ষিত মানের কাজ করে চলেছেন, তা ব্যবস্থাপককে জানিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। এতে একদিকে যেমন বস আপনার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত থাকবেন, তেমনি আপনার মনেও আর খচখচানি থাকবে না। আর অন্যরা যখন পেটাচ্ছে না, তখন নিজের ঢোল নিজে পেটানো ছাড়া উপায় কী! এভাবে হয়তো বসের সুনজরেও পড়ে যেতে পারেন।
মনে রাখবেন, একটি প্রতিষ্ঠান তখনই সফল হয়, যখন এর কর্মচারীরা একটি ‘দল’ হিসেবে কাজ করেন। সুতরাং একটি দলের অংশ হওয়ার মানসিকতা থাকতেই হবে। কিন্তু একটি দলের সবাইকে তো আর একসঙ্গে পদোন্নতি দেওয়া হয় না, ব্যক্তি হিসেবেই তা জোটে। বসকে নিজের কাজ সম্পর্কে জানাতে বা বসের নজরে পড়তে হলে নিচের কিছু উপায় কাজে লাগাতে পারেন—
১. নিয়মিত জানান কাজের আদ্যোপান্ত
একবারে মাস বা বছরের কাজের হিসাব না দিয়ে নিয়মিত বিরতিতে বসকে কাজের বৃত্তান্ত জানানো ভালো। প্রতিদিন যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু সপ্তাহে একবার বা দুই সপ্তাহে একবার হলে মন্দ হয় না। অনেকেই আছেন যাঁরা কিনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যেচে কথা বলতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। কিন্তু ব্যবস্থাপককে নিজের কাজের উন্নতি সম্পর্কে জানালে, আখেরে লাভ কর্মীরই হবে। কেউ যদি মনে করেন, বস ‘সবজান্তা শমসের’ হয়ে বসে আছেন, তবে তা ভুল। সুতরাং বার্ষিক কর্ম মূল্যায়ন পর্যন্ত বসে না থেকে, নিয়মিতই বসকে জানান—কী করছেন, কীভাবে করছেন। এতে আপনার আত্মোন্নয়নের প্রচেষ্টা সম্পর্কে বস জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনে পরামর্শও দিতে পারবেন। এতে আপনার কাজ আরও নিখুঁত হয়ে উঠবে। অন্যদিকে বস বুঝতে পারবেন আপনার দক্ষতা কেমন।
২. সংখ্যা নয়, মান আগে
একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কত কাজ করলেন, তার একটি সংখ্যাগত গুরুত্ব আছে বটে। কিন্তু ভালো কাজই মনে দাগ কাটে। তাই কাজের সংখ্যার চেয়ে, তার ফলাফলের গুরুত্ব বেশি। আপনি হয়তো অনেক কাজ করলেন, কিন্তু তার ফলাফল উল্লেখযোগ্য নয়—তাতে কোনো লাভ নেই। বরং কম কাজ করার পরও যদি সেগুলোর ফল অসাধারণ হয়, তবে তা ব্যবস্থাপকের মনোযোগ কাড়বে। সুতরাং বসকে সুনির্দিষ্টভাবে জানান, আপনার কোন কাজে প্রতিষ্ঠান কতটুকু লাভবান হয়েছে, কী প্রভাব পড়েছে। এতেই দেখবেন বস সুপ্রসন্ন হয়ে উঠছেন।
৩. লোকে যারে বড় বলে...
যখন আপনি অফিসে সত্যিই অসাধারণ কোনো কাজ করেন, তখন সহকর্মীরা আপনার প্রশংসা করবেনই। কেউ হয়তো উচ্চ স্বরে করবেন, কেউ অনুচ্চারে। এমন পরিস্থিতিতে চেষ্টা করুন, যেন সেই শুভাকাঙ্ক্ষী সহকর্মী ব্যবস্থাপকের সামনেও আপনার প্রশংসা করেন। এ জন্য সহকর্মীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। অযথা অফিস রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হতে যাবেন না। ব্যবস্থাপক নিজেই যদি আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন, তবে তা আনুষ্ঠানিকভাবে অফিসের বিধি মোতাবেক দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন। এই কাজে কীভাবে সফলতা পেলেন, তার খুঁটিনাটি বসকে জানাতে ভুলবেন না। এতে করে আপনার দক্ষতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
৪. ঝোপ বুঝে কোপ মারুন
একটি প্রতিষ্ঠানে নানা পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকেন। আপনি যাঁর অধীনে কাজ করেন, তাঁরও কিন্তু বস আছে। যদি সেই ‘বড়’ বসের সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যান, তবে তা নষ্ট করবেন না। আপনি কী কাজ করেন, কীভাবে করেন, সাফল্য কতটুকু—তা তাঁকে জানানোর চেষ্টা করুন। এতে করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আপনার নাম ও কাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ফলে মূল্যায়নের সময় ইতিবাচক ফলও পেতে পারেন।
৫. ল্যাং খেয়েছেন?
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই তো আর কেউ অফিসে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। তখন কাউকে কাউকে ল্যাং খেতেও হয়। হয়তো বিশ্বাস করে বসকে জানিয়েছেন নিজের কোনো ‘আইডিয়া’, আর তিনিও নিজের বলে তা চালিয়ে দিলেন! এমন ঘটনা খুবই হতাশার, আর নবীন কর্মীদের বেলায় তো কথাই নেই। এ ক্ষেত্রে সুযোগের অপেক্ষায় থাকুন। যদি কখনো অফিসের মিটিংয়ে ওই নির্দিষ্ট আইডিয়া নিয়েই কথা ওঠে, তখন সবিস্তারে তার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করুন। এক ফাঁকে কথায় কথায় জানিয়ে দিন যে, আইডিয়াটা আসলে আপনারই ছিল! ব্যস, আর কিছু করতে হবে না আপনাকে।
তথ্যসূত্র: দ্য মুজে ও ফোর্বস