বিয়ের দাওয়াতপত্র যেমনটা দেখে থাকি, এটা তেমন নয়। শক্ত কাগজে ছাপা আট পৃষ্ঠার বিয়ের কার্ড। পিন মেরে আটকানো। বিয়ের কার্ড যেমন রঙিন, এটা তেমন নয়। রং, ছবি আছে বটে, তবে প্রচ্ছদপট সাদাকালো। বিন্দু আর বৃত্ত দিয়ে শুরু। ছবির নিচে লেখা ‘দ্বীনি ও সাকিবের সমস্ত অনলাইন আলাপের মাত্রা ও পরিমাণ থেকে তৈরি তথ্যাঙ্কন’।
চমক দিয়েই শুরু। কেন এমন চমক, তা বোঝা গেল যখন কথা হলো সদ্য বিবাহিত দম্পতি নাজমুস সাকিব ও দ্বীনি ফাতিহার সঙ্গে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার পর ৩ জানুয়ারি দ্বীনি স্বামীসহই ছিলেন চট্টগ্রামে, তাঁর বাবার বাসায়। মুঠোফোনে দ্বীনি বললেন, ‘আমরা চেয়েছি বিয়ের কার্ডে আমাদের কাজের, আমাদের সম্পর্কের প্রতিফলন পড়ুক।’
এই দম্পতির পেশা সম্পর্কে জানা যাক এবার। নাজমুস সাকিব এখন পিএইচডি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) মিডিয়া ল্যাবে। বিষয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ওদিকে দ্বীনি ফাতিহা এমআইটি থেকে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সে স্নাতক হয়ে এখন হার্ভার্ডে এমবিএ করছেন।
কার্ড কেন এমন? ‘বাজারে যেসব কার্ড রয়েছে, সেসব গতানুগতিক। তাই পছন্দ হয়নি। তখন ভাবলাম কী করা যায়। কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে লিখে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার ছবিভিত্তিক উপস্থাপনা করতে পছন্দ করি। তাই চিন্তা করলাম, আমাদের কার্ডটির নকশা, ছবি এভাবেই তো করা যায়।’
প্রচ্ছদের যে বৃত্ত আর বিন্দুর কথা বলা হলো, সেটা করা হয়েছে ম্যাথমেটিকা নামের এক প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রোগ্রাম লিখে লিখে। সাকিবের লেখা এই প্রোগ্রাম তথ্য-উপাত্তকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ছবিতে পরিণত করেছে। কার্ডের শেষ পাতায় নীল, আকাশি, সাদা, লালের নানা শেডে তৈরি একটা রঙিন ছবি। ‘দেড় বছর ধরে আমার আর দ্বীনির অনলাইনে যত কথা হয়েছে, সেসবের অনুভূতি ধরে এই ছবি তৈরি হয়েছে কম্পিউটারেই। ওই ম্যাথমেটিকা দিয়েই।’ অনলাইন চ্যাটিংয়ের তিন ধরনের অনুভূতি তিন রঙে প্রকাশ করা হয়েছে। নীল ধনাত্মক, সাদা নিরপেক্ষ আর লাল ঋণাত্মক। এই ছবিতে নীলের আধিক্যই বেশি।
সাকিব বললেন, ‘ডেটা মাইনিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমার প্রিয় বিষয়। তাই চেয়েছি আমাদের বিয়ের কার্ডে এসবের একটা ছাপ থাকুক। ডেটার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অনুভূতি। আর সেটা বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় নানা রং, নানা ছবি।’
এই কার্ডের সপ্তম পৃষ্ঠায় রয়েছে যুগল বৃত্ত। বৃত্ত আঁকা হয়েছে সাকিব আর দ্বীনির ১০ বছরের ফেসবুক টাইমলাইনের ছবি দিয়ে। ছয় পৃষ্ঠায় দুজনের সাদাকালো ছবি। পৃষ্ঠা ৪ ও ৫-এ ঢাকায় ২৫ ডিসেম্বর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল নিমন্ত্রণ ও বর-কনের পরিচিতি।
কার্ডের তৃতীয় পৃষ্ঠায় গ্রাফিকসে তুলে ধরা হয়েছে দুজনের অনলাইন কথোপকথনের বিষয়গুলো। সংগীত, পরিবার, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, দর্শন, বই, সম্পর্ক—কত বিষয়েই না কথা বলেছেন তাঁরা। এ কার্ডে রবীন্দ্রনাথও রয়েছেন। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘তোমারেই যে ভালোবাসিয়াছি...’।
বর ও কনে দুই পক্ষের কার্ড একই রকম। গায়েহলুদের কার্ডের আছে যন্ত্র দিয়ে করা বাস্তব অনুভূতির একটি ছবি। কার্ডের ছবি ও রেখাচিত্র বানাতে দুই দিন সময় লেগেছে সাকিবের। জীবনের বিশেষ দিনে নিজেদের মতো করে তুলে ধরেছেন তাঁদের অনুভূতি-আবেগ। তাই বিয়ের কার্ডটা হয়ে উঠেছে একেবারেই স্বতন্ত্র।