পান্ডাদের দেখেই মানুষ বাঁশ খাওয়ায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল কি না, কে জানে!
পান্ডাদের দেখেই মানুষ বাঁশ খাওয়ায় অনুপ্রাণিত হয়েছিল কি না, কে জানে!

দিবস রম্য

পরশু ছিল বিশ্ব বাঁশ দিবস, অথচ আমরা তা রোজই খাচ্ছি

গত রোববার ছিল ‘স্ত্রীর প্রশংসা করুন দিবস’, সোমবার ছিল ‘প্রথম প্রেম মনে করার দিন’। এমন বিচিত্র সব দিবস দুনিয়ার নানা প্রান্তে পালন করা হচ্ছে রোজই। এসব দিবসের গুরুত্ব আছে সুনিশ্চিত। গুরুত্ব আছে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর কাছেও। কারণ, এসব দিবসের খবর থেকে দুটি ভিউ তো আসে! তবে গত পরশু আমরা একটা দিবস মিস করে গেছি—বিশ্ব বাঁশ দিবস! ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ১৮ সেপ্টেম্বর পালন করা হচ্ছে এই দিবস। এ খবর শুনে মনে হলো, একটা দিন দেরি হয়েছে তো কী হয়েছে, আমরা তো রোজই কোনো না কোনোভাবে বাঁশ খাচ্ছি। সুতরাং এক দিন বাদে বাঁশ দিবস পালনে সমস্যা কী?

বাঁশ দিবস কেন

এককথায় বললে, সারা বিশ্বে বাঁশ নিয়ে সচেতনতা তৈরিই এর উদ্দেশ্য। প্রশ্ন হলো, বাঁশ নিয়ে সচেতন হতে হবে কেন? এর উত্তরও এককথায় দেওয়া যায়, বাঁশ যে পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু, এটা আদতে বিশ্ববাসীর নজরেই পড়ে না। এ কারণে ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু অর্গানাইজেশন’ বাঁশের সম্ভাবনা আরও ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর করতেই দিবসটি পালন করছে। পরিবেশ রক্ষা, টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন শিল্পের জন্য বাঁশ চাষে উৎসাহিত করা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখাই এর উদ্দেশ্য। এর সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও এর অন্যতম লক্ষ্য।

বিশ্ব বাঁশ দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু অর্গানাইজেশন’–এর একটি পোস্টার

দিবসটি যেভাবে চালু হলো

২০০৯ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু কংগ্রেসের’ অষ্টম আসর বসেছিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। সেখানেই ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু অর্গানাইজেশন (ডব্লিউবিও) দাপ্তরিকভাবে দিবসটির সূচনা করে। এ সংস্থার সদস্যসংখ্যা কিন্তু কম নয়—প্রায় ১০০!

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় বাঁশের কদর আজও অটুট। মূলত ঘাস জাতের এই উদ্ভিদ নির্মাণসামগ্রী হিসেবে জনপ্রিয়, কুটিরশিল্প এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও অতুল উপকরণ। আমাদের দেশে তো সেতু থেকে শুরু করে ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশের ব্যবহার অনেকবারই হয়েছে! লোকে অবশ্য এতে দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে হইচই করেছে বেশ। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, যাঁরা রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করেছিলেন বা করছেন, তাঁরা আদতে পরিবেশের পরম বন্ধু! যাহোক, বাঁশের আরও উপযোগিতা নিয়ে বলা যাক। বাঁশের বাঁশি ছাড়া এই উপমহাদেশের সংগীতের কথা ভাবা যায় না। বরেণ্য সংগীতস্রষ্টা শচীন দেববর্মনের ওই গানের কথা মনে পড়ে গেল, ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই/ সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি/ সে যে দিনদুপুরে চুরি করে/ রাত্তিরে তো কথা নাই/ ডাকাতিয়া বাঁশি...’।

চীন–ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও খাবার হিসেবে বাঁশ আদরণীয়। সিলেটের ‘হাঁস–বাঁশ’–এর সুনাম অনেক দিনের। বাঁশের কোঁড়লের সঙ্গে হাঁস দিয়ে রান্না করা হয় এই পদ। কচি বাঁশ প্রথম খাবার হিসেবে কারা খেতে শুরু করেছিল, তার কোনো লেখাজোখা নেই। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, বাঁশ খাওয়ার চল সম্ভবত চীন থেকেই এসেছে। কে জানে, পান্ডাদের দেখেই মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছিল কি না!

বাঁশ খাওয়ার প্রসঙ্গ যখন এল, তখন এই ‘একটু থামুনে’ প্রকাশিত একটা লেখার কথাও মনে পড়ল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেস্তোরাঁ ও খাবারের রিভিউ দেওয়ার চল বেশ কয়েক বছরের। এ আদলে আরও কিছু ভৌত খাবারের পাশাপাশি বাঁশ খাওয়ার রিভিউ লিখলে কেমন হতো, তা দেখানো হয়েছিল সেখানে। বাঁশ যেহেতু আমরা রোজই খাচ্ছি, তাই লেখাটা আবার পড়তে পারেন—

বাঁশের রিভিউ

বাঁশের রিভিউ

অত্যন্ত উপাদেয় এই খাবার আপনি খেতে পারেন বন্ধুমহল থেকে, পরিচিত বড় ভাই বা ছোট ভাই থেকে শুরু করে প্রায় সবার কাছ থেকেই। ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন হলে অনেক কাছের মানুষও খাওয়াতে পারে। রেসিপি নিয়ে কিছুই বলার নেই। সার্ভিসের ব্যাপারে একটা কথা, এই খাবার দেওয়ার আগে একবার সতর্ক করে দিলে বদহজম কম হতে পারে। দামটাও আরেকটু কম নেওয়া যায়।