রম্য

‘আবদার চত্বর’ চালু করা এখন সময়ের দাবি

দেশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবিতে রাস্তা অবরোধ করছে কোনো না কোনো দল বা গোষ্ঠী। দাবির ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ছে নানা আবদারও। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনেকেরই আবদারের শেষ নেই। তাই আমরাও আবদার জানাই—বিভিন্ন আবদার তুলে ধরার জন্য একটি ‘আবদার চত্বর’ গড়ে তোলা হোক। আবদার চত্বরকে আবদারবান্ধব ও জনপ্রিয় করে তুলতে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকতে পারে সেখানে?

কার্টুন: মুগ্ধ
কার্টুন: মুগ্ধ

গাড়ি ভাঙচুর কর্নার

বিভিন্ন ‘আবদার’ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো আন্দোলনকারীদের প্রিয় কাজ হচ্ছে গাড়ি ভাঙচুর করা। আন্দোলন রাস্তায় না হয়ে আবদার চত্বরে হলে গাড়ির অভাবে আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বাদ যেতে পারে। তাই আবদারকারীদের সুবিধার্থে থাকতে পারে গাড়ি ভাঙচুর কর্নার। যার যখন ইচ্ছা, সে এসে ভাঙচুর করতে পারবে। ভাঙচুরের সুবিধার্থে চত্বর কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ইটপাটকেল এবং লাঠিসোঁটার জোগান দেবে।

হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি কর্নার

আন্দোলনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে হাতাহাতি কিংবা মারামারি। একে অন্যের সঙ্গে ধস্তাধস্তি কিংবা মারামারি না করলে জটলাটা ঠিক পরিপূর্ণতা পায় না। সে জন্য আবদার চত্বরে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি কর্নারের সুবিধা থাকবে। যার যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ মারামারি কিংবা ধস্তাধস্তি করতে পারবেন।

হোয়াইট বোর্ড কর্নার

সকালে হয়তো কেউ আবদার করলেন, ‘বয়স ২৫ হলেই প্রেম করা বাধ্যতামূলক—এমন ঘোষণা চাই’। বিকেলে আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে আবদার বদল। তাঁরা বলে বসতে পারেন, ‘সরকারিভাবে পঁচিশোর্ধ্ব সবার বিয়ের ব্যবস্থা করা হোক’। কিন্তু তখন আবার সব পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ডের লেখা পাল্টানো কঠিন হয়ে যাবে। তাই আবদার চত্বরে থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণে হোয়াইট বোর্ড এবং মার্কারের ব্যবস্থা। যে যার খুশিমতো আবদার লিখে নিতে পারবেন, প্রয়োজনে পুরোনো আবদার মুছে নতুন করেও লেখা যাবে।

বিশ্রাম কর্নার

দাবিদাওয়া নিয়ে টানা আন্দোলন করা স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। তাই আন্দোলনের মধ্যে বিরতি দিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। এ জন্য আবদার চত্বরে থাকবে বিশ্রাম কর্নার। বিশ্রাম শেষে পুরোদমে আন্দোলনে নেমে পড়লে সাফল্য আসবেই।

আন্দোলন ব্লগার

ফুড ব্লগার, ট্রাভেল ব্লগার আমরা দেখেছি। ইদানীং ‘আন্দোলন ব্লগার’ও কিন্তু একটি সম্ভাবনাময় পেশা খাত হয়ে উঠেছে। নানা দাবিদাওয়া-আন্দোলন নিয়ে ‘কনটেন্ট’ বানায়, এমন ইউটিউব চ্যানেল আজকাল বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন আন্দোলনের ছবি-ভিডিও ফেসবুক-ইউটিউবে দিয়ে যেই ব্লগাররা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন, সেই বীর যোদ্ধাদের সমর্থনে আবদার চত্বরে থাকতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার।

স্লোগান সার্ভিস

আন্দোলনে স্লোগানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানে থাকবে স্লোগান সার্ভিস সেন্টার। দেশের নামকরা ফেসবুক কবিরা সেন্টারে হাজির থাকবেন। বিনা মূল্যে স্লোগান লিখে দেবেন তাঁরা।

জনবলভাড়া

ব্যানারের দুই কোনা ধরার মতো পর্যাপ্ত লোক নেই, এমন ‘বিপুলসংখ্যক’ দলবল নিয়েও আজকাল রাস্তা আটকে দাবি জানানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। এমন জনবলহীনতায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য আবদার চত্বরে থাকবে জনবলভাড়া নেওয়ার সুযোগ। ‘বান্ডেল অফার’, ‘১০ জনকে ভাড়া করলে দুজন ফ্রি’—এমন সব সুবর্ণ সুযোগও থাকবে।

‘লুকিয়ে খাওয়ার’ হোটেল

দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে যাঁরা অনশন কর্মসূচি পালন করতে চান, তাঁরা যেন চাইলে লুকিয়ে টুকটাক খাওয়াদাওয়াও করতে পারেন, এমন ব্যবস্থাও থাকবে আবদার চত্বরে। ‘লুকিয়ে লুকিয়ে আসা!’ বলে কেউ তাঁদের বিব্রত করবে না, এমন নিশ্চয়তাও অবশ্য থাকা জরুরি।

প্রথম আলোয় প্রতি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় একটি রম্য পাতা। রম্য লেখা, আইডিয়া, কার্টুন পাঠাতে পারেন আপনিও: kothacom@prothomalo.com