‘জওয়ান’ সিনেমার পোস্টার
‘জওয়ান’ সিনেমার পোস্টার

চলতি রম্য

জওয়ান সিনেমাটি না দেখেই যেভাবে রিভিউ লেখা যায়

সিনেমার রিভিউ লিখতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ে যান। টিকিট পান না কিংবা সময় হয় না, এদিকে রিভিউ না দিলে সময়ের সঙ্গে থাকাও যায় না। তাই ‘একটু থামুন’ নিয়ে এল সিনেমা না দেখেই একটি আদর্শ রিভিউ লেখার উপায়। সম্প্রতি শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ যেহেতু মুক্তি পেয়েছে, তাই এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে এই সিনেমার নামই এখানে ব্যবহার করা হলো...

ইতিবাচক রিভিউ

কিং খানের সিনেমা মানেই ভিন্ন কিছু। শাহরুখ খানের সিনেমা মানেই অন্য লেভেলের ক্রিয়েটিভিটি। তাঁর সিনেমায় কোনো গল্প লাগে না, ক্যামেরা অন করে রাখলে গল্প অটোমেটিক তৈরি হয়ে যায়। শাহরুখের আগের সব সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই এবারও ‘জওয়ান’ সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই দেখতে গেলাম। অনেক হাঙ্গামা করে, টানা দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে হাতে পেলাম টিকিট নামের সোনার হরিণটি।

সিনেমার শুরুতেই দর্শক চমকে যায়। পর্দাজুড়ে অন্ধকার। ধীরে ধীরে আলো ফুটে উঠল, যেন একটা নতুন দিনের শুরু। এটা আসলে শাহরুখ ভাইয়ের ক্রিয়েটিভিটি। তাঁর স্টাইলই এমন বৈচিত্র্যময়। একের পর এক চোখধাঁধানো দৃশ্য, আর টুইস্টে ভরা গল্প। এক সেকেন্ডও পর্দা থেকে চোখ সরানোর উপায় ছিল না। নায়ক-নায়িকা, এমনকি সিনেমায় যাঁকে সবচেয়ে কম সময় দেখা গেছে, তাঁর অভিনয় দেখেও একবারের জন্য মনে হয় না এসব অভিনয়। বরং সবাই কত প্রাণবন্ত, যেন সিনেমা নয়, বাস্তবে ঘটছে সব! একের পর এক চমকে সিনেমা যখন শেষ হলো তখনো হলভর্তি দর্শক স্তব্ধ হয়ে অন্ধকার পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে।

শেষে বলতে চাই, কিং খানের তুলনা কিং খানই। তিনি একজন জাত শিল্পী। আর পরিচালক আতলি কুমারের কথা কী বলব! আমাদের চারপাশের পরিচিত গল্পই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর শৈল্পিক আঁচড়ে। ক্যামেরাও যে কথা বলতে পারে, তা এই সিনেমা না দেখলে বোঝা হতো না। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি আর শটের ভেরিয়েশন ছুঁয়ে যায় চোখ, দ্রবীভূত করে হৃদয়। জীবনের বোধকে এত সুন্দর করে আর কে দেখাতে পেরেছিল? জীবনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আর কে ফুটিয়ে তুলেছে ক্যামেরায়?

নেতিবাচক রিভিউ

‘খালি কলসি বাজে বেশি’, এই প্রবাদ অনুযায়ী যেসব সিনেমা নিয়ে বেশি হইচই হয়, বাস্তবে দেখা যায় সেসব সিনেমা আসলে অখাদ্য। এই সিনেমাও যে আহামরি কিছু হবে না, সেটা আগেই বুঝেছিলাম। তবু বুকভরা আশা নিয়ে সিনেমা হলে গেলাম। টিকিটের লাইনে মাছিও উড়ছিল না। সিটে বসতেই সিনেমা শুরুর আগে অভ্যর্থনা জানাল ছারপোকা।

সিনেমা শুরু হলো। প্রতিটা চরিত্রকে দেখে মনে হলো, তারা কী করছে নিজেরাই বুঝছে না। পরিচালক কী দেখাতে চেয়েছেন, সেটাও স্পষ্ট নয়। ঘটনা একবার এদিকে যাচ্ছে তো আরেকবার ওদিকে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এত বেশি যে সংলাপ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। অবশ্য সংলাপ বোঝা গেলেও খুব একটা লাভ হতো বলে মনে হয় না। বিরতি পর্যন্ত এই আশায় দেখলাম যে বিরতির পর হয়তো ভালো কিছু হবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি।

বিরতির পর সিনেমার নামে আরও বিশৃঙ্খলা চলতে লাগল। ইতিমধ্যে হল ফাঁকা হয়ে গেছে। কয়েকজন আরাম করে ঘুমাচ্ছে। টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছে, এসিতে ঘুমিয়ে টাকা উশুল করার চেষ্টা।

সবশেষে বলা যায়, হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এত বাজে সিনেমা আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ে না। কোনো গল্প নেই, ক্যামেরার কাজেও চরম উদাসীনতা। সিনেমাটোগ্রাফির খুবই বাজে অবস্থা। মেকআপম্যান এমনভাবে মেকআপ করিয়েছেন যেন সবাইকে সং সাজাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যাহোক, এ রকম সিনেমা দেখে শেষ পর্যন্ত যে সিনেমা হল থেকে সুস্থ অবস্থায় বের হতে পেরেছি, এটাকেই এখন অনেক বড় প্রাপ্তি বলে মনে হচ্ছে।

মিশ্র রিভিউ

হাতে কোনো কাজ ছিল না, সময় কাটানোর উদ্দেশ্যেই সিনেমাটি দেখতে গেলাম। সাদামাটা গল্প। ব্যতিক্রম তেমন কিছু নেই। খুব একটা খারাপ যে হয়েছে, এমনটা বলব না, আবার খুব যে ভালো হয়েছে, তা-ও নয়। আনাড়ি হাতের কারণে মাঝে মাঝে ক্যামেরা কেঁপে যাচ্ছিল। শট সিলেকশনও ঠিক ছিল না। পরিচালককে ফ্রেমিং সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা রাখতে হবে। কিছু কিছু ঘটনাকে অযথা মনে হয়েছে, আবার কিছু ঘটনা ছিল যা চিন্তার খোরাক জোগায়।

ঘুণে ধরা সমাজের পুরোনো গল্পই পরিচালক বলেছেন সনাতন পদ্ধতিতে। তবে হ্যাঁ, পরিচালককে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল মনে হলো। তিনি যদি কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকেন আর ভুল থেকে শিক্ষা নেন, আমার মনে হয় ভবিষ্যতে তাঁর হাত দিয়ে ভালো সিনেমা পাওয়া সম্ভব। তাঁর জন্য শুভকামনা।