দুই দশক ধরে চলা মার্কিন-আফগান যুদ্ধের শুরু

২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ব্যাপক বোমা হামলার মধ্য দিয়ে আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে
ছবি: এএফপি

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। ছিনতাই করা চারটি বিমানের মাধ্যমে চালানো ওই হামলায় হতাহত হয় প্রায় ৯ হাজার মার্কিন নাগরিক। ধ্বংস হয় টুইন টাওয়ার নামেখ্যাত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ক্ষতিগ্রস্ত হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য আল–কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ওসামা বিন লাদেনের আশ্রয়দাতা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে অনুরোধ করে লাদেনকে হস্তান্তর করার জন্য। তালেবান সরকার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ব্যাপক বোমা হামলার মধ্য দিয়ে আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তানে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেয় ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ব্যাপক বিমান হামলার পর তালেবান বাহিনীকে দুর্বল করে শুরু করা হয় স্থল হামলা। নভেম্বরের প্রথম দিকেই তালেবান বাহিনী রাজধানী কাবুল থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে তালেবান বাহিনী তাদের শক্ত ও শেষ ঘাঁটি কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ হারায়। তালেবান নেতা মোল্লা ওমর আত্মগোপনে চলে যান।

ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর আল–কায়েদা বাহিনী আগে থেকে আফগানিস্তানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে লুকিয়ে ছিলেন। জোট বাহিনী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আল–কায়েদার ব্যবহৃত গুহা ও বাংকার দখল করতে সক্ষম হলেও সেখানে লাদেন বা আল-কায়েদার কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, তাঁরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে আত্মগোপন করেন। দীর্ঘ ১০ বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকা লাদেনকে হত্যা করে ইউএস নেভি সিল বাহিনী।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেয় ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ

২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর বাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটান। বলা যায়, যুদ্ধ অসমাপ্ত রেখেই এবং কার্যত পরাজয় স্বীকার করে তারা দেশে ফিরে যায়। দুই দশক ধরে চলা এ যুদ্ধে জোট বাহিনীর প্রায় আড়াই হাজার সেনা প্রাণ হারায়, আহত হয় ২০ হাজারের বেশি সেনা। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৬৯ হাজার সদস্য, ৮৪ হাজার তালেবান ও অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্য এবং ৭১ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ২৭ লাখ আফগান নাগরিক, দেশের ভেতরে গৃহহীন হয় প্রায় ৩২ লাখ মানুষ।