ইতিহাসের এই দিনে

সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠন

১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর দুবাইয়ে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকা ওড়াচ্ছেন শাসকেরা
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

সংযুক্ত আরব আমিরাত আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাজ্যের ফেডারেশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাজ্যগুলো ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ১৯ শতকের বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে একের পর এক কৌশলগত চুক্তি করে রাজ্যগুলো ‘ট্রুসিয়াল স্টেট’ বা চুক্তিবদ্ধ রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে রাজ্যগুলো ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হয়। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ছয়টি রাজ্য একত্র হয়ে গঠন করে ফেডারেশন। এর নাম দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর দুই মাস পর সপ্তম রাজ্য হিসেবে ‘রাস আল খাইমা’ ফেডারেশনে যুক্ত হয়। বাহরাইন ও কাতারের এই ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। প্রতিটি ‘আমিরাত’ বা রাজ্য একটি উপকূলীয় জনবসতিকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় এবং ওই জনবসতির নামেই রাজ্যটির নামকরণ করা হয়।

দুবাই

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি রাজ্যের নাম হলো আবুধাবি, আজমান, দুবাই, ফুজাইরা, রাস আল খাইমা, আশ শারজাহ্ এবং উম্ম আল কোয়াইন। প্রতিটি রাজ্যের শাসনব্যবস্থা বংশগত রাজতন্ত্র এবং প্রতিটি রাজ্যের শাসনকর্তার পদবি হলো ‘আমির’। ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী আবুধাবির আমির সংযুক্ত আরব আমিরাতের খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে দুবাইয়ের আমির হলেন প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান। আবুধাবি শহর এই ফেডারেশনের রাজধানী। আবুধাবি ফেডারেশনের বৃহত্তম রাজ্য, যা মোট ভূমির তিন-চতুর্থাংশের বেশি অংশ নিয়ে গঠিত। দুবাই এই ফেডারেশনের বৃহত্তম ও জনবহুল শহর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

সংযুক্ত আরব আমিরাত মূলত পাথুরে মরুভূমি, উপকূলীয় সমভূমি এবং পাহাড়ের মিশ্র পরিবেশে গঠিত দেশ। তবে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল মরুভূমি। এর উত্তরে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। দেশটির মোট আয়তন ৮৩ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। জনসংখ্যার অধিকাংশই প্রবাসী।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে সংযুক্ত আর আমিরাত

১৯৫০–এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগপর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেলশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে। দেশটির খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবুধাবি থেকে উত্তোলন করা হয়। ফলে রাজ্যটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী রাজ্য।

বুর্জ আল খলিফা

তেলশিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী এবং জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। ফেডারেশনের অর্থনীতি প্রধানত আবুধাবির উৎপাদিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে দুবাইয়ের অর্থনীতি ব্যবসা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি আরব আমিরাত তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি পর্যটনশিল্প এবং পণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে।

আবুধাবি

আরব আমিরাতে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ অট্টালিকা ‘বুর্জ খলিফা’ দুবাই শহরেই। প্রশস্ত রাস্তা ও সুপার হাইওয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে আমিরাতের। পারস্য উপসাগরের কূলে ৫ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ।

দুবাই
পাম জুমেইরা

পামগাছের মতো দেখতে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম ‘পাম জুমেইরা’। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর।