জেমস ক্যামেরনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘অ্যাভাটার’ সিনেমার মুক্তি

‘অ্যাভাটার’ সিনেমার পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

‘অ্যাভাটার’ জেমস ক্যামেরন পরিচালিত কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক মহাকাব্যিক সিনেমা। ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর লন্ডনে এবং ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় সিনেমাটি। ‘অ্যাভাটার’ বেশ কয়েকটি বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙে দেয় এবং সে সময় সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হিসেবে পরিণত হয়। ২০১৯ সালে ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ মুক্তি পাওয়ার আগপর্যন্ত এক দশক ধরে অ্যাভাটার বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা ছিল। ‘অ্যাভাটার’ সিনেমাটি ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’–এর পর পৃথিবীর সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা। অ্যাভাটার সিনেমাটির মোট আয় ছিল প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

‘টাইটানিক’ সিনেমা তৈরি করার সময় ১৯৯৪ সালে ক্যামেরনের মাথায় ‘অ্যাভাটার’ সিনেমার ধারণা আসে। তখন তিনি সিনেমাটির জন্য ৮০ পৃষ্ঠার একটি রূপরেখা তৈরি করেন। ‘টাইটানিক’ সিনেমাটি মুক্তির পর নতুন সিনেমার চিত্রগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন সিনেমার দৃশ্য ধারণ করার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়।

জেমস ক্যামেরন

২০০৬ সালের প্রথম দিকে ক্যামেরন চিত্রনাট্য এবং কাল্পনিক একটি উপগ্রহ তৈরির ধারণা দিয়ে শুরু করেন। এর সঙ্গে সিনেমার প্রয়োজনে শুরু করেন একটি নতুন ভাষা তৈরির কাজ। ভাষাটি তৈরি করেন পল ফ্রোমার নামের এক ভাষাবিদের সাহায্যে। এই ভাষায় এক হাজার শব্দের একটি অভিধান আছে, যার মধ্যে কিছু শব্দ ক্যামেরন নিজেই তৈরি করেন। ভাষার পাশাপাশি প্যান্ডোরা উপগ্রহের অধিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তোলেন পরিচালক ক্যামেরন। ‘অ্যাভাটার’ প্রথম পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক সিনেমা। এই সিনেমায় এমন কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে, যা আগে কোনো সিনেমায় ব্যবহৃত হয়নি।

২০১০ সালে ৮২তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে ‘অ্যাভাটার’ ৯টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার পায়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন স্যাম ওর্থিংটন, জো সালডানা, সিগর্নি ওয়েভার প্রমুখ।

সিনেমাটির আইডিয়া পাওয়া সম্পর্কে ক্যামেরন জানান, তিনি শৈশবে পড়া প্রতিটি সায়েন্স ফিকশন এবং এডগার রাইস বারোজ ও হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের দুঃসাহসিক উপন্যাস থেকে সিনেমাটি তৈরিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ‘অ্যাভাটার’ সিনেমাটির কাহিনি আগামী ২১৫৪ সালের। তখন মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছে। পৃথিবীতে খনিজ সম্পদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলে রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আরডিএ) নামের একটি প্রতিষ্ঠান পৃথিবী থেকে বহু দূরের উপগ্রহ প্যান্ডোরায় মূল্যবান খনিজ ‘ইউনোবটেনিয়াম’ খনন করে। কিন্তু প্যান্ডোরায় ‘নাভি’ নামক এক বুদ্ধিমান প্রাণী প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস করায় সেখান থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্যান্ডোরা থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য বিজ্ঞানীরা ‘অ্যাভাটার’ নামক এবং ‘নাভি’র মতো দেখতে অর্ধ এলিয়েন-অর্ধ মানব ব্যবহার করেন।

আরডিএ প্রতিষ্ঠানের হয়ে টম সালি প্যান্ডোরায় গিয়ে খনিজ পদার্থ খননের জন্য নিযুক্ত হয় এবং টমের ডিএনএর সাহায্যে ‘অ্যাভাটার’ তৈরি করা হয়। মানুষ ও মেশিনের মাধ্যমে পরিচালনা করা অ্যাভাটারকে শুধু সেই পরিচালনা করতে পারবে, যার ডিএনএ থেকে তাকে বানানো হয়েছে। কিন্তু টম মারা গেলে টমের ডিএনএর সঙ্গে অনেক মিল থাকায় তাঁর ভাই জ্যাক সালিকে প্যান্ডোরায় যেতে রাজি করানো হয়। প্রাক্তন মেরিন সৈন্য জ্যাক এক ‘নাভি’ রাজকুমারীর প্রেমে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত নাভিদের বাঁচানোর জন্য কাজ করেন।

সিনেমাটির চমৎকার সাফল্যের পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্সের সঙ্গে আরও চারটি পর্ব তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন ক্যামেরন। সিনেমাটির দ্বিতীয় পর্ব ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে। পরবর্তী পর্বগুলো ২০২৪, ২০২৬ ও ২০২৮ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা।