এই কৌতুক হয়তো আপনার জানা আছে। একজন জিজ্ঞেস করছে, ‘আচ্ছা, বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ কী?’ আরেকজন বলছে, ‘বিয়ে।’ এই কৌতুকের আরেকটা সংস্করণ হতে পারে এ রকম—‘আচ্ছা, বৃষ্টি হলেই শহরে যে জলাবদ্ধতা হয়, এর মূল কারণ কী?’ উত্তরে বলা যায়, ‘কেন, বৃষ্টি!’
কথা তো সত্যি, বৃষ্টি যদি না পড়ত, তাহলে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো ‘আধুনিক’ শহর জলে বদ্ধ হতো কী করে! এই বৃষ্টিই না যত নষ্টের গোড়া! অথচ আমাদের এই দুই শহরের রাস্তাঘাট কী দুর্দান্ত! এ কারণেই তো জলাবদ্ধতার সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সাইনবোর্ডে লিখতে হয়, ‘পানির নিচে রাস্তা ভালো’।
আমাদের আদতে সবই ভালো। সুকুমার রায় লিখে গেছেন—
‘দাদা গো! দেখছি ভেবে অনেক দূর—
এই দুনিয়ার সকল ভালো,
আসল ভালো নকল ভালো,
সস্তা ভালো দামিও ভালো,
তুমিও ভালো আমিও ভালো,
...
গ্রীষ্ম ভালো বর্ষা ভালো,
ময়লা ভালো ফরসা ভালো,
...
কিন্তু সবার চাইতে ভালো—
পাউরুটি আর ঝোলাগুড়।’
ছড়ার সূত্র ধরে তাই বলাই চলে, বর্ষাকালে ঢাকা আমাদের ‘পাউরুটি’ আর চট্টগ্রাম হলো ‘ঝোলাগুড়’—সবার চেয়ে ভালো। অথচ এই ভালো শহর দুটিকে নষ্ট করছে হতচ্ছাড়া বৃষ্টি! কথা নেই বার্তা নেই, মিনিট দশেকের বৃষ্টিপাত মানেই জনগণের মাথায় হাত। মাথায় হাত না দিয়ে উপায়ই–বা কী! রাস্তায় বুক পর্যন্ত পানি উঠলে অন্তত সাধের স্মার্টফোনটা রক্ষা করতে হলে হাত তো ওপরে তুলতেই হবে। পা ভিজলে উপায় আছে, বুক ভিজলে উপায় আছে, স্মার্টফোন ভিজলে যে স্মার্টনেস নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!
আমরা যখন এতই স্মার্ট, তখন শহর দুটির হাল এমন হলো কেন? কথায় কথায় পানি জমে কেন? না, বৃষ্টিকে দোষ দিয়ে আর রসিকতা করছি না। আঙুলটা নিজের দিকেই তুলছি। বিশেষ করে আজ সন্ধ্যায় এই ভিডিও দেখার পর।
২ আগস্ট ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন কানন মাহমুদুল নামের এক আলোকচিত্রী। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘আ র্যানডম রেইনি ডে অ্যাট ঢাকা স্ট্রিট’। আর ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন রিকল ব্যান্ডের গাওয়া লালন সাঁইয়ের অমর গান ‘সহজ মানুষ’।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন মাঝবয়সী মানুষ, যাঁর পা দুটি অচল, পানি নিষ্কাশনের রাস্তা সহজ করে দিচ্ছেন। একটা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ময়লা (মূলত প্লাস্টিক বর্জ্য) সরিয়ে দিচ্ছেন সযতন। প্রশ্ন হলো, এই যে একজন ‘সহজ মানুষ’ যেসব বর্জ্য সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করে দিচ্ছেন, এসব বর্জ্য রাস্তায় কে বা কারা ফেলল? আঙুলটা আপনাআপনি নিজের দিকেই তাক হয়—এই যে আমার বা আমাদের মতো একেকজন স্মার্ট মানুষ!
ইতিমধ্যে আমরা ‘ডিজিটাল’ হয়ে গেছি, আর কটা দিন সবুর করলে পুরোপুরি স্মার্টও হয়ে যাব নিশ্চয়ই। এ কারণেই বুঝি সহজ মানুষ হওয়ার চিন্তাটা ঝেড়েই ফেলেছি। আমরা এখন অতি আধুনিক বিষয়–আশয় নিয়ে আছি।
কদিন ধরে ফেসবুকে একটা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে না—‘নারী কিসে আটকায়?’ একেক মুনি একেক মত দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, এতে আটকায়, কেউ বলছেন, ওতে আটকায়। তবে নারী বা পুরুষ যেটাতেই আটকাক না কেন, শহরের পানি কিসে আটকায়, তা কিন্তু আমরা জানি। প্রশ্ন হলো, আমরা কি জেনেশুনে এভাবে পানি আটকিয়েই যাব, নাকি ওই সহজ মানুষের মতো পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করে দেব?