‘দাম্পত্য’ মানে কী?

দাম্পত্য জীবনের তিন বছর পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। গত সপ্তাহের ঘটনা। এত দিন পরে বউ আমাকে বলল, ‘তোমার সংসারজীবন বৃথা। দাম্পত্য শব্দের মানেটাই তো তুমি জানো না!’ দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করার আগে আমি বহু উপজীবনে প্রবেশ করেছিলাম। সেসব উপজীবনের জীবিত মানুষগুলোর সঙ্গে আজও আমার বেশ সখ্য। ছোটখাটো সমস্যায় পড়লেও আমি তাদের কাছে হাজির হই। এবারও তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাম্পত্য শব্দটির মানে কী?’

বিজ্ঞানী বন্ধু

আমি বিজ্ঞানী মানুষ। শোনো ভাই, আমার কাছে প্রেম-আবেগের কোনো মূল্য নাই। আমার কাছে সংসার অনেকটা অঙ্কের মতো। সংসারজীবনে মানুষ যে বিশ্বাসের কথা বলে, আমি তা বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস চোখে দেখা যায় না। তাই আমি মনে করি, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই সব তথ্য-প্রমাণ দুজনার সামনে পরিষ্কার থাকতে হবে। সোজা কথা, দাম্পত্য বলতে আমি বুঝি ‘তথ্য-উপাত্ত-দাম্পত্য’।

ব্যবসায়ী চাচা

শোনো ভাইস্তা, আমি হলাম ব্যবসায়ী। জিনিসপত্রের দরদাম নিয়েই আমার কাম। যা-ই বলো, আমার সাফ কথা—দাম ছাড়া দাম্পত্যের কোনো মানেই হয় না। সংসারে দুজন দুজনকে অনেক দাম দিতে হবে। তবেই হবে ‘দাম্পত্য’।

গ্রামের কৃষক মামা

ভাইগ্না, দামড়া গরু চেনো? দামড়া হলো বলদ। স্বামী-স্ত্রী একসাথে বাঁচার লাইগা সারা দিন দুইজনে বলদের মতো খাটি। এই দুনিয়ায় আমরা যেন দামড়া হইয়াই জন্মাইছি। আমগোর তো মনে হয়, দামড়া থেইকাই ‘দাম্পত্য’ আইছে!

বামপন্থী বিপ্লবী বড় ভাই

ছোট ভাই, আমি তো দাম্পত্যে বিশ্বাসী না। ‘দাম্পত্য’ আসলে বুর্জোয়া, পেটিবুর্জোয়াদের চাপিয়ে দেওয়া একটা কৌশল। দাম্পত্য জীবনে আসলে আধিপত্যবাদের চর্চা করা হয়। একজন আরেকজনের ওপর প্রভাব খাটাতে চায়। ‘আধিপত্য’ শব্দের সামাজিক সংস্করণ হলো ‘দাম্পত্য’।

পরিচিত সন্ন্যাসী

দেখো ভায়া, আমি সন্ন্যাস নিয়েছি বছর দশেক হইলো। এ জগৎ-সংসারে আমার বিবাহ করা হয়ে ওঠে নাই। তবে এখন আমি বড় লোনলি ফিল করি। এমতাবস্থায় আমি মনে করি, দাম্পত্য গ্রহণ করিলে আমার ধর্মকর্মের খুব বেশি ক্ষতি হইত না। যদিও প্র্যাকটিক্যালি আমার দাম্পত্যে অভিজ্ঞতা নাই, তথাপি বিষয়টা আমি তোমাকে অনুভব করিয়া বলিতেছি। ‘দাম্পত্য’ মানে দুজনার বিশ্বাস। এ বিশ্বাস থেকেই এ বিশ্ব ভূমণ্ডলের উত্পত্তি। বিশ্বাস শব্দের আরেক রূপ হইলো ‘প্রত্যয়’। মূলত দুজনার প্রত্যয়ের মিলনই ‘দাম্পত্য’...। (বাকিটুকু মনে নেই!)

দম্পতি বন্ধু

এদের কাছে গিয়ে পড়েছি বিপদে! দুজনই আমার খুব কাছের মানুষ। প্রশ্নটা তাই দুজনকেই করেছি। কে আগে উত্তর দেবে এটা নিয়েই লেগে গেল মহা ঝগড়া! তাদের কথোপকথনটুকু তুলে দিচ্ছি এখানে—

বন্ধু: শোন, দাম্পত্যের মানে হচ্ছে...

বন্ধুপত্নী: আরে রাখো, তোমার মানে! তুমি দাম্পত্যের কী বোঝো, হ্যাঁ? সারা দিন তো আছ অফিস নিয়ে। অফিস কি আমি করি না? ঘর-সংসার সামলাই না...

বন্ধু: দেখো, তুমি কিন্তু একতরফা কথা বলে যাচ্ছ! এই সংসারে কি আমার কোনো অবদান নাই? হাওয়া-বাতাসে চলছে সব?

বন্ধুপত্নী: হ্যাঁ, হাওয়া-বাতাসেই চলছে। আর সেই হাওয়া-বাতাস আমি নিজে। আমি না থাকলে...

বন্ধু: তুমি না থাকলে তো...

বন্ধুপত্নী: কী? আমি না থাকলে কী?

বন্ধু: না মানে, বলতে চাচ্ছিলাম তুমি না থাকলে তো দাম্পত্য জীবনটাই পেতাম না...

এই হলো অবস্থা! আমি আর সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। তবে এটা বুঝেছি, ওই ঝগড়াঝাঁটি না থাকলে দাম্পত্য ব্যাপারটাই থাকত না! জয় ঝগড়াঝাঁটি!