ইতিহাসের এই দিনে

‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের নতুন পথচলা শুরু

১৯১১ সালে প্রকাশিত লাইফ ম্যাগাজিনের একটা প্রচ্ছদ
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

 একটা ছবি হাজার শব্দের চেয়েও শক্তিশালী। সংবাদপত্রে ছবির মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্য এই প্রবাদ যথেষ্ট। সংবাদপত্রে নানা ঘটনা ছবির মাধ্যমে প্রকাশিত ও মূর্ত হয়ে ওঠে। একটা ছবি একজন পাঠককে যত দ্রুত আকর্ষণ করতে পারে এবং পাঠকের অন্তরে যত দ্রুত রেখাপাত করতে পারে, একটা লেখা সেটা পারে না। কোনো ঘটনার বর্ণনায় লেখকের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে কিন্তু একটা ছবি পাঠকের হৃদয়ে পাঠকের নিজের মতো করে স্থান করে নেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনকে ফটো সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয়ে থাকে। এটা দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছিল। বহু দশক ধরে আলোকচিত্র সাংবাদিকতার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ‘লাইফ’ ম্যাগাজিন ইতিহাসের ছবি তুলে ধরেছে। ‘লাইফ’- এর খবরগুলো ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর। ম্যাগাজিনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক, মহাকাশ যুগ থেকে প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যাকাণ্ড, বিটলস থেকে মোহাম্মদ আলী—ইতিহাসের পাতার প্রতিটা ঘটনা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছে।

‘লাইফ’ ম্যাগাজিন চালু হয় ১৮৮৩ সালে। হালকা বিনোদন ও হাস্যরসকেন্দ্রিক প্রকাশনা হিসেবে এটি দীর্ঘদিন টিকে ছিল। মহামন্দার সময় ম্যাগাজিনটির প্রচার সংখ্যা হ্রাস পেলে ১৯৩৬ সালে মার্কিন ব্যবসায়ী হেনরি লুস ম্যাগাজিনটি কিনে নেন ৯২ হাজার ডলারে। তিনি মূলত ‘লাইফ’ নামটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে ‘টাইম’ এবং ১৯৩০ সালে ‘ফরচুন’ চালু করার পর এটা ছিল হেনরি লুস প্রকাশিত তৃতীয় ম্যাগাজিন। তিনি ম্যাগাজিনটিকে নতুন করে ঢেলে সাজান। বিশেষ নজর দেন ফটো সাংবাদিকতার ওপর। লুস ম্যাগাজিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ সাপ্তাহিক সংবাদ প্রকাশনায় পরিণত করেন।

‘লাইফ’ ম্যাগাজিন দ্বিতীয়বার পথচলা শুরু করে এই প্রচ্ছদের মধ্য দিয়ে

নতুন ম্যাগাজিনটির ক্ষেত্রে লুস আলোকচিত্রকে শব্দের মতোই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। জন শ বিলিংস এবং ড্যানিয়েল লংওয়েলের সম্পাদনায় ১৯৩৬ সালের ২৩ নভেম্বর ম্যাগাজিনটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রচ্ছদরচনা ছিল মন্টানার ফোর্ট পেক বাঁধ নির্মাণ নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র যখন মহামন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল, ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয় তখনই। ফলে দেশটির বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত জনগণের কাছে তা সহজে পৌঁছে যায় এবং গ্রহণযোগ্যতাও পায়।

প্রকাশের প্রথম বছরেই ‘লাইফ’- এর সাফল্য ছিল নজরকাড়া। প্রায় রাতারাতি ম্যাগাজিনটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণরে এক-চতুর্থাংশের ঘরে ঘরে তখন ‘লাইফ’ ম্যাগাজিন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাকালীন এর প্রচার সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ লাখ কপি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘ফটোগ্রাফিক নিউজ ম্যাগাজিন’ হওয়ায় ফটোসাংবাদিকতার ইতিহাসে ‘লাইফ’-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক দশক ধরে আলোকচিত্রীদের অনেক প্রজন্ম ম্যাগাজিনটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। গর্ডন পার্কস, জন ডোমিনিস, জন লোনগার্ড, নিনা লিন, জো রোজেনথাল, মার্গারেট বোর্ক হোয়াইট এবং আলফ্রেড আইজেনস্ট্যাডের মতো তারকা আলোকচিত্রীরা লাইফ ম্যাগাজিনকে বিশেষ একটা স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন।

ছবিকেন্দ্রিক ঘটনাগুলো প্রকাশে টেলিভিশন প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠলে ম্যাগাজিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩৬ বছরের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে ১৯৭২ সালে ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের সাপ্তাহিক প্রকাশনা বন্ধ হয়। কিছু দিন ম্যাগাজিনটি অনিয়মিত বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ পেতে থাকে। এরপর ১৯৭৮ সালে এটা একটি মাসিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয় এবং ২০০০ সালে প্রকাশনাটি বন্ধই হয়ে যায়। এখন এটা শুধু অনলাইন ম্যাগাজিন হিসেবে চালু আছে।