ইতিহাসের এই দিনে

গ্রেট শিকাগো ফায়ার শুরু

শিল্পীর চোখে গ্রেট শিকাগো ফায়ার
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

আকাশছোঁয়া ভবনের শহর শিকাগো। বাংলাদেশি স্থপতি স্যার ফজলুর রহমান খানের নকশায় এই শহরে নির্মিত হয় সিয়ার্স টাওয়ার, যা দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল সগৌরবে। এখন জনসংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় ১৮৭১ সালের ৮ অক্টোবর। ওই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ফলে শিকাগো পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ভেঙে পড়ে শহরের প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম বিপর্যয়কারী অগ্নিকাণ্ডটির কারণ নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। অধিকাংশ জনশ্রুতি অনুযায়ী শহরের এক সম্ভ্রান্ত নারী ক্যাথরিন ও’ল্যারির গোয়ালঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। বলা হয়, ৮ অক্টোবর রাতে ও’ল্যারি গরুর দুধ সংগ্রহ করতে গোয়ালঘরে যান। সে সময় গোয়ালের একটি গরু লাথি দিয়ে ও’ল্যারির সঙ্গে থাকা প্রদীপটি উল্টে দেয়। আর ওই প্রদীপ থেকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। কেউ কেউ বলেন, প্রদীপ উল্টে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল একটা জুয়ার আসর থেকে। আবার কারও কারও মতে, আকাশ থেকে পতিত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল।

অগ্নিকান্ডের আগে শিকাগো শহর

সে বছর শিকাগো শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছিল খুব কম। তা ছাড়া বেশ গরম পড়ার কারণে চারপাশের পরিবেশ ছিল শুষ্ক ও রুক্ষ। তখন শিকাগো শহরের অধিকাংশ বাড়ি ছিল কাঠের তৈরি। ফলে শহরের ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ‘গ্রেট শিকাগো ফায়ার’–এর আগের রাতে অন্য একটি অগ্নিকাণ্ড নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একদিকে ছিলেন শারীরিকভাবে ক্লান্ত, অন্যদিকে তাঁদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অনেকটা বিকল হয়ে পড়ে। ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি নিয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেও দেরি করেন। এর মধ্যে আগুনের ফুলকি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ফলে আগুন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১০ অক্টোবর সকালে হঠাৎ করে নেমে আসে বহুকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি। এই বৃষ্টির কারণে আগুন অনেকটা স্তিমিত হয়ে আসে।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডটিতে প্রায় তিন শ লোক মারা যায় এবং সাড়ে ১৭ হাজার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস হয়। শহরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন। আগুনের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও শিকাগো শহরের মূল অবকাঠামো, পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অক্ষত থেকে যায়।

অগ্নিকান্ডের সাক্ষী ডিয়ারবর্ন অ্যান্ড মনরো স্ট্রিট

ফলে বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে শহর পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হয়। স্থাপত্যবিদদের সহায়তায় ব্যবস্থা করা হয় আধুনিক নগরায়ণের সব ধরনের সুবিধার। তৈরি হয় চোখধাঁধানো বড় বড় ভবন। কয়েক বছরের মধ্যে শিকাগো হয়ে ওঠে এক আধুনিক শহর।