১৯৭৫ সালের ১১ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস শহরের ছোট্ট একটা বাড়িতে আয়োজন করা হয় একটা বিয়ের অনুষ্ঠান। আড়ম্বরহীন ও ঘরোয়া ওই বিয়ের বর-কনে ছিলেন না বিখ্যাত কেউ। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানটি ঘিরে কারও কোনো কৌতূহলই ছিল না। কিন্তু এই বর-কনে দুজনই একসময় হয়ে ওঠেন পৃথিবীর দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি রডহ্যাম।
ক্লিনটনের সঙ্গে হিলারির প্রথম সাক্ষাতের ঘটনাটা ছিল রোমান্টিক সিনেমার মতো। ১৯৭১ সালে ক্লিনটন যখন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি নিতে যান, তখনই তাঁর পরিচয় হিলারির সঙ্গে। হিলারি সেখানে আইনের ওপর পড়াশোনা করছিলেন। বিলের ভাষায়, ‘১৯৭১ সালের বসন্তে এক নারীর দেখা পাই। তখন আমরা ছিলাম রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক একটা ক্লাসে। তার ছিল ঘন বাদামি চুল। তার মেকআপবিহীন চেহারা থেকে যেন প্রশান্তির দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছিল। ক্লাস শেষে আমি তাকে সম্মোহিতের মতো অনুসরণ করি। ইচ্ছা ছিল তার সঙ্গে পরিচিত হব। তার পিঠ স্পর্শ করার মতো কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তাকে ডাকতে পারিনি। তবে জানতাম, আমি এমন কিছু শুরু করতে যাচ্ছি, যা থেকে আমি চাইলেও ফিরতে পারব না।’
এরপর তাঁদের দেখা হয় লাইব্রেরিতে। হিলারির ভাষায়, ‘সে আমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিল। আমিও তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এভাবে কিছু সময় ধরে চলে চোখাচোখির খেলা। এরপর আমি চেয়ার থেকে উঠে সোজা তার সামনে গিয়ে বলি, ‘এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে বরং এসো পরিচিত হওয়া যাক। আমি হিলারি রডহ্যাম।’ হিলারির ভাষ্য, বিল সে সময় নিজের নাম মনে করতে পারছিলেন না।
কদিন পর বিল ও হিলারির মধ্যে আবার দেখা হয়। হিলারি তখন একটা কোর্সের জন্য নিবন্ধন করতে যাচ্ছিলেন। বিল জানালেন, তিনিও নিবন্ধন করবেন। তাঁরা দুজন একসঙ্গে সারিতে দাঁড়ালেন। সারির সামনে এলে নিবন্ধক বিলকে দেখে বললেন, ‘তুমি না আজ সকালে নিবন্ধন করলে’। বিল লজ্জা পেলেন, হিলারি হাসলেন। এভাবে দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। তাঁরা অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটাতে শুরু করেন।
আরকানসাসে লাল ইটের একটা বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাড়িটি দেখে হিলারির খুব পছন্দ হয়। দেয়ালে ঝুলছিল বাড়ি বিক্রির নোটিশ। হিলারি বিলকে বলেন, ‘বাড়িটি খুব সুন্দর। এই বাড়িতে থাকার সুযোগ পেলে দ্বিতীয় বার চিন্তা করব না।’
কয়েক সপ্তাহ পর বিল হিলারিকে সেই বাড়ির সামনে নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বলেন, ‘তুমি এই বাড়িটি পছন্দ করেছিলে, তাই আমি বাড়িটি কিনেছি। আমি এই বাড়িতে একা থাকতে চাই না। আশা করি তুমি আমাকে বিয়ে করবে?’
এর আগে দুবার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও এবার হিলারি ‘হ্যাঁ’ বলে দেন এবং এই বাড়িতে মাত্র ১৫ জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উপস্থিতিতে তাঁদের বিয়ে হয়।
স্বামী বিলের সংকটে স্ত্রী হিসেবে হিলারির ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে বিল ক্লিনটন যখন হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন হিলারি অত্যন্ত মর্মাহত হলেও স্বামীর পাশে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা করেন। আর এটা তো সবারই জানা, কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বিশ্বরাজনীতিতে তাঁরা দুজনই বড় প্রভাব বিস্তারকারী রাজনীতিবিদ। এবং এ ক্ষেত্রেও তাঁরা একে অপরের পাশে ছিলেন সব সময়।