ইউরেনিয়াম কি মাথায় ঢালা যায়?

কার্টুন: এস এম রাকিবুর রহমান
কার্টুন: এস এম রাকিবুর রহমান

কদিন আগেই মাথা ঠান্ডা রাখার এক আশ্চর্য উপায় বাতলে দিয়েছেন দেশের এক রাজনীতিবিদ। তিনি বলেছেন, মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দিলেই নাকি গরম মাথা ঠান্ডা হবে। এ বক্তব্য শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন কদুর তেল ব্যবসায়ীরা। তবে কি এখন কদুর তেলের বদলে লোকে মাথায় ইউরেনিয়াম মাখতে শুরু করবে?

এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানা যাক, ইউরেনিয়াম সত্যিই মাথায় ঢালা সম্ভব কি না। ইউরেনিয়ামের সংস্পর্শে এলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মাত্রাই-বা কতখানি।

ভূপৃষ্ঠে প্রাকৃতিকভাবে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে ভারী মৌলিক পদার্থ এই ইউরেনিয়াম। মাটির গহিনে থাকা পাথরের ভেতরে আকরিক হিসেবে পাওয়া যায় এসব। আবার এসবের দেখা মেলে সমুদ্রের পানিতেও। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। গলনাঙ্কের মান প্রায় ১ হাজার ১৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় কক্ষ তাপমাত্রায় ইউরেনিয়াম দিব্যি কঠিন পদার্থ হিসেবেই টিকে থাকতে পারে। আবার অতি উচ্চমাত্রার শক্তির প্রয়োজন হয় বলে চাইলেও চটজলদি ইউরেনিয়াম গলিয়ে মাথায় ঢেলে দেওয়া সম্ভব নয়। সুদূর রাশিয়া থেকে আমাদের দেশে যে ইউরেনিয়াম এসেছে, তা মোটেই তরল নয়; বরং পাউডারসদৃশ।

ইউরেনিয়াম মাত্রই তেজস্ক্রিয় পদার্থ। পদার্থটি আলফা কণা বিকিরণ করে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, ইউরিনেয়িমা থেকে নির্গত আলফা কণা বাইরে থেকে আমাদের দেহের খুব সামান্যই ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। কারণ, দেহের ভেতরে প্রবেশের বহু আগেই আমাদের ত্বক কণাগুলোকে আটকে দেয়। তাই আমাদের দেশে আসা নিউক্লিয়ার ফুয়েলের পেলেটগুলো সরাসরি হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অথবা এসবের ভেতরে থাকা পাউডারসদৃশ ইউরেনিয়াম কারও মাথায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিলেও তেজস্ক্রিয়াজনিত কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

কিন্তু কোনোভাবে যদি খাবারের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়াম আমাদের দেহে প্রবেশ করে, তাহলে ঘটতে পারে ভীষণ বিপদ। আলফা বিকিরণের প্রভাবে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে হাড় বা যকৃতে।

অন্যদিকে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে ইউরেনিয়ামের অনুপ্রবেশে ক্যানসার হতে পারে ফুসফুসে। অবশ্য তেজস্ক্রিয়তাকে হিসাবের বাইরে রাখলেও ইউরেনিয়াম মানবদেহের ভেতরে প্রবেশ করলে বিপদ থেকেই যায়। কারণ, এটি রাসায়নিকভাবেও বিষাক্ত। এতে সবচেয়ে ক্ষতি হয় কিডনির। নানা বিক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরেনিয়াম কিডনির ভীষণ ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত ক্ষতিকর প্রভাবগুলো দৃশ্যমান হয় তেজস্ক্রিয়াজনিত প্রভাবের অনেক আগে।