উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে সুন্দরবন, লিখেছেন হরিণ চৌধুরী

সুন্দরবনের বিশিষ্ট নিরপেক্ষ কলাম লেখক হরিণ চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বের অন্যান্য বনে যখন চলছে চরম বিশৃঙ্খলা, বাঘ–সিংহের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, দুর্বল পশুর ওপর সবল পশুর শোষণ–নিপীড়ন, সুন্দরবনে তখন বইছে শান্তি-সম্প্রীতির এক ঝিরঝিরে সুবাতাস। অন্যান্য বনে যখন পশুরা পাশবিকেতর জীবনযাপনে পর্যুদস্ত, সুন্দরবন সেখানে ভাসছে উন্নয়নের টইটম্বুর জোয়ারে।

সুন্দরবনে পশুবান্ধব যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব এতটাই কিউট যে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল ও খালে বাঘে–মহিষে এক ঘাটে জল তো খায়ই, জলকেলিতেও মেতে ওঠে। ইশপের গল্পের মতো এখন সুন্দরবনে মেষশাবকের জন্য জল ঘোলা করার মতো কোনো দুষ্টু নেকড়েও নেই। বরং নেকড়েরা পিঠে চড়িয়ে মেষশবাকদের সুপেয় জল খাইয়ে নিয়ে আসে।

গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ডিএসএ (ডিজিটাল সমালোচনা অ্যাওয়ার্ড) নামে একটি পুরস্কারেরও প্রবর্তন করা হয়েছে! প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডিএসএ পুরস্কার জিতে বাঘের ডেরায় ডিনারের দাওয়াত পাচ্ছে।

বনের সাধারণ পশুদের কথা চিন্তা করে সুন্দরবনের বাঘেরা মাংস খাওয়া ছেড়ে পুরোদস্তুর নিরামিষভোজী হয়ে গেছে! এমনকি কোমলমতি গাছদের মুখে তুলতেও অনেক বাঘের চোখ ছলছল করে। সম্প্রতি বনের এক সভায় একদল শিম্পাঞ্জি নিয়োগ করা হয়েছে, না খেয়ে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়, এমন গবেষণার জন্য।

অন্যান্য বনে সাধারণ পশুরা যখন বাঘ, সিংহ, নেকড়ের ভয়ে টুঁ শব্দটি করতে পারে না, সুন্দরবনে সেখানে সবাই ইচ্ছেমতো প্রাণখুলে টুঁ, টোঁ, টাঁ, টেঁ যেকোনো কথা বলতে পারে। গাধারা এখন মনের সুখে গলা ছেড়ে ‘আমরা সবাই চ্যালাআআ...’ গান গাইতে পারে। ফেসবুকে কঠিন কঠিন ভাষায় বনের নীতিনির্ধারকদের পিণ্ডি চটকাতে পারে যে কেউ। আর গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ডিএসএ (ডিজিটাল সমালোচনা অ্যাওয়ার্ড) নামে একটি পুরস্কারেরও প্রবর্তন করা হয়েছে! প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডিএসএ পুরস্কার জিতে বাঘের ডেরায় ডিনারের দাওয়াত পাচ্ছে।

সুন্দরবনের বাঘেরা মাংস খাওয়া ছেড়ে পুরোদস্তুর নিরামিষভোজী হয়ে গেছে

সুন্দরবনের শিক্ষাব্যবস্থাকেও পুরোপুরি ঢেলে সাজানো হয়েছে। একদল চৌকস, পরিশ্রমী, মেধাবী স্বপ্নবাজ শিয়ালকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ‘মাস্টার মশাই’ হিসেবে। সুন্দরবনের পাঠশালায় পাঠশালায় বাঘ, সিংহ, কুমির, সাপ, বানর সবার ছেলেমেয়ে একসঙ্গে ‘বিদ্যা’ লাভ করছে। জানা গেছে, সুন্দরবনের শিয়ালেরা এখন আর কোনো কুমিরকে এক বাচ্চা সাতবার দেখানোর মতো ধোঁকা দেয় না।

সুন্দরবনের আনাচকানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া। সুন্দরবনের খালে খালে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পানি। সুন্দরবনের গাছে গাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি পাতা। আর সুন্দরবনের নীতিনির্ধারক পশুরা আগের যেকোনো পশুর তুলনায় অনেক বেশি পাশবিক। যদিও একদল দুষ্টু বুনো পশু সুন্দরবন দিন দিন ‘জঙ্গল হচ্ছে’ বলে হাঁকডাক করে, আদতে সুন্দরবন দিন দিন ‘আমাজন’ হচ্ছে।

লেখক: বিশিষ্ট নিরপেক্ষ চিত্রা হরিণ, সুন্দরবন

(লেখাটি আদতে লিখেছেন কথাcom–এর ভাড়াটে লেখক শরীফ মজুমদার)